শিরোনাম
◈ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে গতিসীমা না মানলে ভিডিও দেখে মামলা ◈ অযত্ন-অবহেলা ও খাদ্যসংকটে স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে সাফারি পার্কের প্রাণীগুলো, ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ◈ আল ফায়হার বিরুদ্ধে রোনালদোর আল নাসরের দাপুটে জয় ◈ কলকাতায় আশ্রয় নেয়া আওয়ামী লীগ কর্মীদের সময় যাচ্ছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় ◈ ভারতে যে কারণে ঘাঁটি গেড়েছে আ.লীগ, হোয়াটসঅ্যাপ-টেলিগ্রামে মেসেজের উত্তরও দেন হাসিনা! ◈ সন্ধান মিলল মাঝ আকাশে নিখোঁজ বিমানটির, সব আরোহীর মৃত্যুর শঙ্কা ◈ 'বাংলাদেশি' রবিন খুদা চমকে দিলেন বিশ্বকে! (ভিডিও) ◈ নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতার কর্মসূচি ঘোষণা ফেসবুক পোস্ট, জামালপুরে উত্তেজনা ◈ ভারতের দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে, ভরাডুবির শঙ্কায় কেজরিওয়াল, এগিয়ে বিজেপি ◈ দেশজুড়ে ভাঙচুরের ঘটনার পর সরকারের ওপর দ্রুত নির্বাচনের চাপ আরও বাড়বে

প্রকাশিত : ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১১:১২ দুপুর
আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

দেশজুড়ে ভাঙচুরের ঘটনার পর সরকারের ওপর দ্রুত নির্বাচনের চাপ আরও বাড়বে

এল আর বাদল : বাংলাদেশে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য চাপ বাড়তে পারে। এখন সরকার নির্বাচনকে এক নম্বর অগ্রাধিকার দিয়ে এগোবে, সেটাই চায় দেশটির অন্যতম প্রধান দল বিএনপি। এর মিত্রদলগুলোরও একই অবস্থান বলে মনে হয়েছে।

সংস্কার নাকি নির্বাচন আগে, এই প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিতর্ক চলছিল। বিএনপি ও এর মিত্ররা নির্বাচন সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় সংস্কার করে রোডম্যাপের দাবি করে আসছিল। এখন এ ব্যাপারে চাপ বাড়াবে তারা। কিছুদিন ধরে জামায়াতে ইসলামীও আগের অবস্থান থেকে সরে এসে ন্যুনতম সংস্কার করে নির্বাচনের কথা বলছে। - বিবিসি বাংলা

তবে ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের স্থাপনায় হামলা ভাঙচুর চালানো হয়েছে। দুদিন ধরে দেশে একটা অরাজকতা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি চলেছে। ফলে এখন ভিন্ন এক প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। আজ যখন অন্তর্বরর্তী সরকারের ছয় মাস পুরো হচ্ছে, তখন ভিন্ন এক পরিস্থিতি অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

আস্থার অভাব-

বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতাদের অনেকে বলেছেন, দুদিনের ঘটনা অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে; ক্ষুণœ করেছে ভাবমূর্তি। নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রতি আস্থার অভাব থেকে তাদের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। এখনকার প্রেক্ষাপট সেই আস্থার অভাব ও দূরত্ব আরও বাড়াবে।

সরকার অবশ্য ঘটনার ব্যাপারে তিন দফায় বিবৃতি দিয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেছে। সেই বক্তব্য দেওয়া হয়েছে ভাঙচুর অব্যাহত থাকার দ্বিতীয় দিনে। তাতে সরকার কঠোরভাবে দমন করার কথা বলেছে। সবশেষ বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের নেতাদের আর কারো সম্পত্তিতে আর কোনো হামলা না করার আহবান জানিয়েছেন। সরকারের এ আহ্বানকে মানুষ কতটুকু আস্থায় নেবে, সে নিশ্চয়তা দেওয়া কঠিন বলে কোনো কোনো রাজনীতিক মনে করেন।

যদিও হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার পেছনে ভারতে বসে গত পাঁচই ফেব্রুয়ারি অনলাইনে শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়ার বিষয়কে উস্কানি হিসেবে বর্ণনা করছে বিএনপিসহ সব দল এবং অন্তর্র্বতী সরকার। এই যুক্তি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটিও দিচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতি একটা 'অরাজক বা নৈরাজ্যকর অবস্থায় চলে যাওয়ায়' সরকারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

কোনো কোনো দলের নেতারা বলছেন, ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনার বক্তব্য দেওয়ার ঘটনায় একটা প্রতিক্রিয়া হোক, সেটা সরকারও চেয়েছিল। কারণ বুলডোজার বা এক্সক্যাভেটর দিয়ে সারাদেশে দুদিন ধরে ভাঙচুরের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো ভূমিকা রাখেনি। ফলে সরকারের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ছিল না বলে তাদের মনে হয়েছে।

বিএনপির মিত্রদের মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ঘটনাগুলো ঘটার সময় সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি; বরং সরকারের বুলডোজার দিয়ে ভাঙা হয়েছে।

কোনো কোনো রাজনৈতিক দল যে সরকারের ভূমিকা ও উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছে, তারা মনে করছে, গত ছয় মাসের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের দূর্বলতার বিষয় আলোচনায় এসেছে। এমনকি জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের ছাত্র নেতৃত্বের কারও কারও কর্মকা- নিয়েও বিভিন্ন সময় প্রশ্ন উঠেছে। ভাঙচুরের এই ঘটনায় তাদের ভূমিকা নিয়েও সমালোচনা আছে রাজনীতিকদের মধ্যে।

সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন -

কোনো কোনো রাজনীতিক সরকারের অবস্থানের মূল্যায়ন করছেন ভিন্নভাবে। সরকারের সক্ষমতার বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে তাদের। তারা বলছেন, সরকার হয়তো প্রতিক্রিয়া দেখাতে চেয়েছিল। কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া হলে তা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও থাকা জরুরি। সরকারের সেই ক্ষমতা বা নিয়ন্ত্রণ কতটা আছে, সেটা নিয়েও তাদের সন্দেহ আছে।
বিএনপি নেতাদেরও অনেকে মনে করেন, সাধারণ মানুষের মধ্যেও যেহেতু এমন ধারণা তৈরি হয়েছে যে এটি একটি দুর্বল সরকার, ফলে সরকার কোনো বিষয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ার কথা বললেও তাতে আস্থা ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতনের পর শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের বড় অংশ দেশ থেকে পালিয়েছেন। তাদের দিক দেশে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা বা ষড়যন্ত্র থাকবে। আর এমন প্রেক্ষাপটে সরকারের দূর্বলতা যেহেতু প্রকাশ পেয়েছে, সেখানে আরও অস্থির পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। এমন আশংকার কথা রাজনীতিকরাও বলছেন।

কেন দ্রুত নির্বাচন তাগিদ -

দুদিনের হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় দলগুলো যখন নতুন করে ভাবছে, তখন সংস্কারের নানা আয়োজনের পরও শেষপর্যন্ত তা কতটুকু সম্ভব হবে, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ বিএনপি সহ বিভিন্ন দল এখন নির্বাচনকেই অগ্রাধিকার হিসেবে চাইছে।

বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য নির্বাচন করা। সে ব্যাপারেই তারা সরকারের ওপর তাগিদ বাড়াবেন।

তবে বিএনপি কৌশলে এগোবে। সেজন্য তারা ১০ই ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে দুদিনের ভাঙচুরের ঘটনার ব্যাপারে তাদের উদ্বেগ ও অবস্থান তুলে ধরবে। দলটি এমনটা দেখাতে চায় না যে, তারা সরকারের মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে। সেখানে একটা স্থিতিশীল অবস্থা রেখে নির্বাচন করানো যাতে সম্ভব হয়, সেই কৌশল নিয়েছে বিএনপি।

দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোও একই অবস্থান নিয়ে এগোচ্ছে বলে মনে হয়েছে। ফলে বিএনপি ও এর মিত্রদের পক্ষ থেকে সরকারের ওপর নির্বাচনের চাপ বাড়বে।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বিবিসি বাংলাকে বলেন, সরকার হিসেবে তারা দূর্বল ও অকার্যকর, এরকম ধারণা বাড়তে থাকলে তাদের সফল হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। এখন সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেজন্য এখন এ সরকারের দ্রুত নির্বাচন দেওয়া উচিত বলে তারা মনে করেন।

আরেকটি বামপন্থী দল কমিউনিস্ট পার্টি বা সিপিবিও একইভাবে ব্যাখ্যা করছে পরিস্থিতিকে। দলটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ভাঙচুরের ঘটনায় সরকারের ভূমিকা যেহেতু প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, সেকারণে তাদের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো কঠিন। এখন দ্রুত নির্বাচন দেওয়াই সরকারের জন্য নিরাপদ হবে।

দ্বৈত অবস্থানে জামায়াত!

ইসলামপন্থী দলগুলোও প্রকাশ্যে যে অবস্থান তুলে ধরছে, তাতে তাদের কারও কারও অবস্থানের কিছুটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামী এখন আর সংস্কারের পরে নির্বাচনের অবস্থানে নেই। তারা ন্যুনতম সংস্কার করে নির্বাচনের কথা বলছে।

তবে জামায়াতের অবস্থান নিয়ে বিএনপি ও এর মিত্রদের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে। তারা মনে করে, জামায়াতের গোপন ও প্রকাশ্য, দুই অবস্থান বা দ্বৈতনীতি নিয়ে এগোচ্ছে। রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ থেকে সরকারের ওপর একটা প্রভাব তৈরি করে দলটি এগোনোর চেষ্টা করছে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনে বিলম্ব হলেও দলটি আপত্তি করবে না।

এমনকি ভাঙচুরের ঘটনায় জামায়াতের সমর্থন ছিল কি না-এমন সন্দেহও তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, দেশে এ ধরনের ভাঙচুরের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টার বিরুদ্ধে তাদের বক্তব্য দিয়েছেন। তবে তারা মনে করেন, ঘটনাগুলোর পেছনে শেখ হাসিনার উস্কানি ছিল। অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ইসলামী আন্দোলনও এখন প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন চাইছে।

নির্বাচনমুখী হলে সঙ্কট কি কমবে-

সবধরনের আদর্শের রাজনৈতিক দল দাবি করছে, তারা অন্তর্র্বতী সরকারকে রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে গেছে। এরপরও গত ছয় মাসে দ্রব্যমূল্য, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে দেশে কোনো পরিস্থিতি হলে তা নিয়ন্ত্রণ করায় তাদের ক্ষমতা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। সর্বশেষ দুই দিনের ভাঙচুরের ঘটনা আস্থার সঙ্কট আরও বাড়িয়েছে। সেকারণে সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে দেশকে নির্বাচনমুখী করলে অন্য কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ কমে যাবে।

সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য এ মাসেই সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করার কথা বলা হয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই সংলাপে দ্রুত নির্বাচনের চাপ আসবে, সেটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ বিবিসি বাংলাকে বলেন, ভাঙচুরের ঘটনার দায় হাসিনা এবং অন্তর্বর্তী সরকারসহ সব পক্ষের ওপর বর্তায়। কিন্তু এখন দেশের ভাবমূর্তি, স্থিতিশীলতার দিকে সরকার ও সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর নজর দেওয়া উচিত। কারণ স্থিতিশীলতা না থাকলে গণতন্ত্র, নির্বাচনসহ সব বিষয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়