শিরোনাম
◈ আলজেরিয়ার সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়াতে চায় বাংলাদেশ ◈ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে : হাসনাত আব্দুল্লাহ ◈ বাধ্যতামূলক অবসরের বিধান বাতিলের সুপারিশ ◈ গেট ভেঙে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে ঢুকে ভাঙচুর চালাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা (সরাসরি) ◈ ধানমন্ডিতে বাসায় কাজের বুয়ার পরিচয়ে চাকরি নিয়ে দুর্ধর্ষ চুরি ◈ রোজায় নয়, গ্রীষ্মে লোডশেডিং হতে পারে : বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ◈ পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে : তারেক রহমান  ◈ আগরতলায় ভিসা কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিন জমা পড়ল ১২০ আবেদন ◈ প্রধান বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত করতে সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ ◈ বিপিএলে ফাইনালের টিকিট কে পাবে? খুলনা না চিটাগং, জানা যাবে আজ রাতে

প্রকাশিত : ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৬:৩৯ বিকাল
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৮:৪১ রাত

প্রতিবেদক : মনিরুল ইসলাম

প্রধান বিচারপতি নিয়োগে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত করতে সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন শফিকুল আলম : ছবি পিআইডি

মনিরুল ইসলাম: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়েছে। সেখানে বিচার বিভাগকে স্বাধীন ও কার্যকর করার প্রস্তাব এসেছে। প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত করে নিয়োগ কমিশনকে ক্ষমতায়িত করার জন্য সংবিধানের প্রয়োজনীয় বিধানগুলো সংশোধনের সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। 

আজ বুধবার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন জমা দেন জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রধানেরা। বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশনের প্রধান বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন।

কমিশনের প্রতিবেদন হস্তান্তরের পর এ বিষয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, আগের সরকারগুলো বারবার বলেছে, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীন। কিন্তু কার্যত বিচার বিভাগ কখনোই স্বাধীন ছিল না। এজন্য কমিশন বলেছে, বিচার বিভাগকে পুরোপুরি স্বাধীন ও কার্যকরভাবে স্বাধীন করতে হবে। এটি ৩৫২ পৃষ্ঠার একটি বড় রিপোর্ট।

শফিকুল আলম বলেন, লিগ্যাল সার্ভিসে স্বচ্ছতা আনার জন্য জাজ অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যাপারে নতুন কিছু রিকমেন্ডেশন দিয়েছেন। তার আলোকে কিন্তু কাজও হয়েছে। বিচারক নিয়োগের ব্যাপারে নতুন নীতিমালা নিয়ে আসা হয়েছে। আরেকটা ছিল অ্যাটর্নি সার্ভিস স্থায়ী করার বিষয়। আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর অনেক দেশে স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস আছে। আপনারা জানেন, সারা বাংলাদেশে ৪ হাজারের মতো পাবলিক প্রসিকিউটর থাকে। সরকার তাদের নিয়োগ দেয়। দেখা গেছে, সরকারগুলো তাদের কাছাকাছি যারা, তাদের মধ্য থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্টটা করা হতো। দেখা যেতো, এই সরকার এলে তার মতো করে প্রসিকিউটর নিয়োগ করেন, আবার আরেক সরকার তার মতো করে প্রসিকিউটর নিয়োগ দেন। এই কথাটাকে বাদ দিয়ে একটা স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট হবে, যেভাবে বিসিএসে হয়।

স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, কমিশন স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থার কথা জানিয়েছেন। যেগুলো সাধারণত পুলিশ তদন্ত করে, সেগুলো গভর্মেন্ট পলিটিক্যালি ব্যবহার করে। ফলে যে তদন্তগুলো হয় সেগুলো পলিটিক্যাল মাস্টারকে হ্যাপি করার জন্য। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের কেসগুলো কীভাবে কলুসিত হয়েছে পুলিশের তদন্তের কারণে। পুলিশের তদন্তগুলোর ফল এবং ম্যানুপুলেট করা যায়। এজন্য তারা স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থার কথা বলেছেন।

শফিকুল আলম আরও জানান, সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চগুলো ডিভিশনে সেটআপ করার জন্য বলেছেন তারা। কারণ বাংলাদেশের জনসংখ্যা বাড়ছে। স্বাধীনতার পর আমাদের হাইকোর্ট যেখানে ছিল, এখনও সেখানেই আছে। এজন্য হাইকোর্টের বেঞ্চগুলো বাড়িয়ে ডিভিশনে নেওয়ার কথা বলেছে। এছাড়া ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টগুলো উপজেলা পর্যন্ত নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। গরিব মানুষের জন্য যে লিগ্যাল এইড সার্ভিস দেওয়া হয়, সেটি আরও বৃদ্ধি করে গ্রাম পর্যন্ত চলে যেন যায়, এমন কথা বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে ২৮টি সুপারিশের কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে– বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সংবিধান সংশোধনী। এর ব্যাখ্যায় বলা হয়— সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮ (৩) -এ বলা হয়েছে ‘এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুসারে কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের (১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্টপতি তার অন্য সব দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করবেন।  তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোনও পরামর্শ দিয়েছেন কিনা এবং দিয়ে থাকিলে কি পরামর্শ দিয়েছেন, কোনও আদালত সেই সম্পর্কে কোনও প্রশ্নের তদন্ত করিতে পারিবেন না।’ এক্ষেত্রে কমিশন সুপারিশ করেছে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাকে সীমিত করে নিয়োগ কমিশনকে ক্ষমতায়িত করা।

এছাড়া ৫৫(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক বা তার কর্তৃত্বে এই সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রযুক্ত হবে।’ সেটি সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা থেকে প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারকদের নিয়োগের বিষয়কে পৃথক করার সুপারিশ করা হয়েছে। 

পাশাপাশি বিচারকদের সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির মতকে প্রাধান্য দেওয়া এবং আপিল বিভাগের ন্যূনতম বিচারক সংখ্যা ৭ জন করা,  রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের কাজে প্রবীণতম বিচারককেই প্রধান  বিচারপতি নিয়োগ করবেন। অর্থাৎ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির কোনও স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা থাকবে না, বা নির্বাহী বিভাগের কোনও প্রভাব থাকবে না – এই বিষয়েও সংবিধান সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।  

এছাড়া বিচারক হিসেবে নিয়োগের যোগ্যতা পরিবর্তন করে প্রার্থীকে কেবলমাত্র বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং তার বয়স অন্যূন ৪৮ বছর হতে হবে। বিচারকদের অবসরের বয়স বিদ্যমান ৬৭ বছরের পরিবর্তে ৭০ করা, যা ভবিষ্যতে নিযুক্ত বিচারকদের জন্য প্রযোজ্য হবে। বিদ্যমান ১০ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতার পরিবর্তে ১৫ বছরের পেশাগত বাস্তব অভিজ্ঞতার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা। সংবিধানে নতুন বিধান ৯৫-ক অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগ কমিশনের বিধান করার সুপারিশ করা হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়