হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীসেবা ও শুল্ক ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরে প্রথমবারের মতো বসানো হয়েছে অত্যাধুনিক ‘গোল্ড টেস্টিং মেশিন’। যা স্বর্ণ পরীক্ষায় দ্রুত ও নির্ভুল ফলাফল দেবে। একই সঙ্গে ‘সিঙ্গেল উইন্ডো’ সেবা চালুর মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়া সহজ ও ডিজিটাল হয়েছে। এই দুটি উদ্যোগ যাত্রী হয়রানি কমানো এবং শুল্ক ব্যবস্থাপনাকে আরও স্বচ্ছ, আধুনিক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে, বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি কমানোর জন্য ‘ফার্স্ট ট্র্যাক সার্ভিস’ চালু করা হয়। যেখানে অনুমোদিত পরিমাণের অতিরিক্ত শুল্কযোগ্য পণ্য তাৎক্ষণিকভাবে শুল্ক পরিশোধের মাধ্যমে খালাস করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখন ‘গোল্ড টেস্টিং মেশিন’ চালুর ফলে আরও একধাপ এগিয়ে গেল কাস্টমস সেবা।
ঢাকা কাস্টমস হাউজের কমিশনার মুহম্মদ জাকির হোসেন এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা জার্মানি থেকে প্রায় ৬০ লাখ টাকা দিয়ে ‘গোল্ড টেস্টিং মেশিন’ এনেছি। মেশিনটি বিমানবন্দরের কাস্টমস হলে বসিয়ে ইতোমধ্যে আমরা কাজও শুরু করেছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘এই মেশিনটি আনার ফলে দুদিক দিয়ে সুবিধা হয়েছে। একদিকে অনেক যাত্রী বার ভেঙে শুল্ক ফাঁকির জন্য অলঙ্কার বানিয়ে নিয়ে আসেন। সেই অলঙ্কার আসলে ২৪ ক্যারেটের থাকে, অর্থাৎ সেগুলো বার। অনেক সময় তারা অলঙ্কার বলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের নানাভাবে বুঝিয়ে নিয়ে চলে যেতেন।’
‘আবার কাস্টমস কর্মকর্তাদের সন্দেহ হলে সেটি আটকে দিতেন। পরে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতি (বাজুস) নিবন্ধিত দুটি জুয়েলারির সঙ্গে আমাদের চুক্তি আছে, তারা এসে এটি পরীক্ষা করতো। এতে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হতো। এমনও হয় যে বিষয়টি সমাধান হতে ৬ মাস কিংবা এক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতো’- বলেন এই কর্মকর্তা।
তার ভাষ্য, ‘বর্তমানে এই মেশিনটির ফলে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টির সমাধান হয়ে যাচ্ছে। যাত্রীর সামনেই পরীক্ষা হচ্ছে। যদি বার না হয়, সেটিও প্রমাণ হচ্ছে।’
এই মেশিনটি উন্নত প্রযুক্তির উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, ‘অলংকার ২৪ ক্যারেটের না হলেও এতে আর কী কী ধাতু প্রয়োগ করা হয়েছে, তারও রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে।’
এদিকে বিমানবন্দর ব্যবহারকারী যাত্রী ও সংশ্লিষ্টরা এটিকে কাস্টমসের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছেন। তারা বলছেন, কাস্টমস দিন দিন আরও আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর হচ্ছে। বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি লাঘবে তারা নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছেন।
অন্যদিকে ঢাকা কাস্টমস হাউসের সোমবার সকাল ১২ টায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর সদস্য মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোর হেল্প ডেস্ক সেবা উদ্বোধন করেন। এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন প্রকল্পের পরিচালক জুয়েল আহমেদ এবং ঢাকা কাস্টমস হাউসের কমিশনার মুহম্মদ জাকির হোসেন।
এ সময় ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্পের পরিচালক জুয়েল আহমেদ বলেন,এ সিস্টেমের মাধ্যমে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিয়ে লাইসেন্স ও পারমিট পেতে পারবেন। জমা দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইস্যু করা প্রশংসাপত্রের মাধ্যমে পণ্য দ্রুত খালাস করা সম্ভব হবে। এ সিস্টেমের মাধ্যমে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা তথ্যের ভিত্তিতে ইস্যু করা প্রশংসাপত্রের মাধ্যমে পণ্য দ্রুত খালাস করা সম্ভব হবে। সিস্টেমটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত সব সংস্থার জন্য একটি ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্য উইন্ডো সরবরাহ করবে।
এ বিষয়ে ঢাকা কাস্টমস কমিশনার মো. জাকির হোসেন বলেন, সিঙ্গেল উইন্ডো বা সিঙ্গেল প্রসেস সত্যিই ব্যবসা উন্নত করবে এবং পরিবেশ ডিজিটালে রূপান্তর করবে। সিস্টেম এবং প্রক্রিয়া উন্নত করেছে। এখন থেকে ব্যবসায়ীরা এ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইনে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত সবপ্রকার লাইসেন্স এবং পারমিট পেতে পারবেন। ফলে, কাগজপত্র সংগ্রহের জন্য আর অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। এ ছাড়া আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাকি ১৫টি সংস্থাকে বিএসডব্লিউয়ের আওতায় আনা হবে। এর ফলে পুরো সিস্টেমটি সম্পূর্ণরূপে চালু হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর সদস্য মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, এ সিস্টেমের মাধ্যমে আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দিয়ে লাইসেন্স ও পারমিট পেতে পারবেন। জমা দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ইস্যু করা প্রশংসাপত্রের মাধ্যমে পণ্য দ্রুত খালাস করা সম্ভব হবে। একবার সিস্টেমটি পুরোপুরি চালু হলে আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়া সহজতর হবে, বন্দর থেকে পণ্য ছাড়পত্র দ্রুত সম্পন্ন হবে এবং ব্যবসা করার খরচ কমবে। উৎস: ইত্তেফাক।
আপনার মতামত লিখুন :