শিরোনাম

প্রকাশিত : ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০২:২৪ দুপুর
আপডেট : ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৪:৩৩ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রধান উপদেষ্টা নিজেই সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ করলেন?

এল আর বাদল : ফিনান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ছাত্রদের নতুন দল গঠন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের মন্তব্য অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতাকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে করে রাজনৈতিক দলগুলো।

 ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমটিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, একটি সম্ভাবনা হলো, ছাত্ররা নিজেরাই একটি দল গঠন করবে। শুরুতে যখন তারা উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করছে, তখন আমি তিনজন ছাত্রকে আমার উপদেষ্টা পরিষদে নিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম, যদি তারা দেশকে ‘প্রাণ' দিতে পারে, তাহলে তারা উপদেষ্টা পরিষদে বসতে পারে এবং প্রাণ দেওয়ার জন্য কী করছে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তারা ভালো কাজ করছে।
পুরো জাতি তাদেরকে চেনে। তারা যা করতে চায়, সে বিষয়ে তাদেরকে একটা সুযোগ দিই,' বলেন তিনি। - ডয়েচেভেলে

তার কথা, রক্ত দিয়ে তারা যেগুলো অর্জন করেছে, সেগুলো তাদেরকে রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় সেগুলো সেই সব ব্যক্তি নিয়ে যাবে, যারা বিগত প্রশাসন ও অন্যান্যের মতো সব কিছুর পুনরাবৃত্তি করার সুযোগ খুঁজছে। এটাই বাংলাদেশে আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ। সুতরাং তারা এটা রক্ষা করার চেষ্টা করছে। তাই আমি বলবো, ছাত্রদের স্বচ্ছ অভিপ্রায় থাকবে।
ছাত্রদের রাজনৈতি দল গঠন সম্পর্কে অধ্যাপক ইউনূস এই প্রথম কথা বললেও দল গঠনের প্রক্রিয়া ছাত্ররা আরো অনেক আগেই শুরু করেছে। ছাত্রদের মধ্য থেকে দুই উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের কথা শোনা যাচ্ছে নতুন দলে যোগ দেয়ার জন্য। তবে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত তারা এখনো নেননি।

ফেব্রæয়ারির মধ্যেই ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের কথা আছে। নতুন দল গঠনে কাজ করছে দুইটি সংগঠন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি। এখান থেকেই তারা নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন। জাতীয় নাগরিক কমিটি এ পর্যন্ত ৩২৮টি থানা কমিটি করেছে। তারা ওয়ার্ড কমিটির কাজও করেছেন। সব থানা কমিটি করার পর জেলা কমিটি করা হবে। তারপর জাতীয় কমিটি।

ছাত্রদের দল গঠনের বিষয়ে ড. ইউনূসের বক্তব্য সম্পর্কে জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহŸায়ক মনিরা শারমিন বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা ছাত্রদের রাজনৈতিক দলের ব্যাপারে ওনার মতো করে বলেছেন। উনি ছাত্রদের নতুন দল করা, তরুণদের নতুন দল করার কথা বলেছেন। স্বাভাবিকভাবেই এটা আমাদের উৎিসাহিত করেছে। এটা আমাদের ভালোই লেগেছে। উনি তো সবসময়ই তরুণদের উৎসাহিত করে আসছেন।

তার কথা, ‘‘ছাত্রদের রাজনৈতিক দল করার ক্ষেত্রে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর একটা কার্পণ্য আছে। ওনার (ড. ইউনূস) থেকে আমরা সেটা দেখতে পাইনি। সেটা আমাদের সতিই ভালো লাগছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, তাদের ব্যাপারে যা বোঝার তা সবাই বুঝে গেছে। উপদেষ্টা বলেন, আর জাতীয় নাগরিক কমিটি বা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন- তারা সবাই এক। রসুনের গোড়া সব এক জায়গায়।

তার কথা, তারা রাজনৈতিক দল গঠন করলে তো কারুর আপত্তি থাকার কথা নয়। আমরাও স্বাগত জানাই। কিন্তু সেটা যদি কিংস পার্টি হয়, তাহলে তো গ্রহণযোগ্য হবে না। সরকারে থেকে, সরকারের সুবিধা নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে তো প্রশ্ন উঠেছে।

আর প্রধান উপদেষ্টা ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে সর্বশেষ যা বলেছেন, তাতে তো বৈষম্য তৈরি হয়েছে। তিনি তো একক কোনো গোষ্ঠী বা দলের নন। তিনি তো সবার।আগে তিনি বলেছেন, ছাত্ররা তাকে ক্ষমতায় বসিয়েছে। ছাত্রদের আন্দোলনে সবার অংশগ্রহণ আছে। তিনি তো একক কাউকে কৃতিত্ব দিতে পারেন না। আমরা তখন মনে করেছিলাম, তিনি আবেগে বলেছেন। কিন্তু এখন দেখছি তিনি তা মিন করছেন। তিনি বৈষম্য সৃষ্টি করছেন।

এর জবাবে মনিরা শারমিন বলেন, বড় রাজনৈতিক দলগুলো তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দলের যে সম্ভাবনা, সেটাকে থ্রেট মনে করছেন। এই কারণেই তারা ওই ধরনের কথা বলছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা সরকারে আছেন, বিশেষ করে ছাত্রদের তিন উপদেষ্টা, তারা সরকারেই আছেন। তারা আমাদের রাজনৈতিক দল গঠনের সঙ্গে নাই। তারা পদত্যাগ করবেন কিনা, করলে কবে করবেন, নতুন দলে যোগ  দেবেন কিনা তা তাদের একান্তই নিজস্ব বিষয়। এখানো তারা সরকারেই আছেন।

তবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমার তো মনে হয় প্রধান উপদেষ্টা তার সর্বশেষ বক্তব্যে ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠনে উৎসাহিত করছেন। জনমনে এটা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি যদি এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখেন, ছাত্রদের রাজনৈকি দল গঠনে সহযোগিতামূলক কাজ করেন, তাহলে তো উনি আর নিরপেক্ষ থাকবেন না। আর নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হওয়ার কথা, সেটা আর এই সরকারের অধীনে সম্ভব কিনা সেই প্রশ্ন আরো বড় করে আসবে।

আর রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সরকারের ব্যাপারে নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তুলেছিলেন সরকারের তিনজন ছাত্র-উপদেষ্টার কাজের প্রেক্ষিতে, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে তাদের ভ‚মিকার প্রশ্নে। কিন্তু এবার প্রধান উপদেষ্টা সয়ং যে কথা বলেছেন, তাতে ফখরুল সাহেবের প্রশ্ন তোলার সুযোগ আরো বেড়ে গেল।

প্রধান উপদেষ্টা তার সাক্ষাৎকারের শেষে যে কথা বলেছেন, তাতে এখন তার প্রেট্রোনাইজেশনে ছাত্রদের রাজনৈতিক দল গঠন করা হচ্ছে- এটা ব্যাখ্যা করার সুযোগ আছে। তিনি বলেছেন, রক্ত দিয়ে তারা (ছাত্ররা) যেগুলো অর্জন করেছে, সেগুলো তাদেরকে রক্ষা করতে হবে। অন্যথায় সেগুলো সেইসব ব্যক্তি নিয়ে যাবে, যারা বিগত প্রশাসন ও অন্যান্যের মতো সব কিছুর পুনরাবৃত্তি করার সুযোগ খুঁজছে। এটাই বাংলাদেশে আমাদের রাজনৈতিক পরিবেশ। সুতরাং তারা(ছাত্ররা) এটা রক্ষা করার চেষ্টা করছে। 

প্রধান উপদেষ্টার কথায় রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো কৃতিত্ব নেই। তারা ক্ষমতায় গেলে জুলাই অভ্যুত্থানের অর্জন রক্ষিত হবেনা? এটা ইঙ্গিত করা হয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে ছাত্ররা সেটা রক্ষা করতে পারে। তার কথায় এটা মনে হয়। ফলে তিনি ছাত্রদের রাজনৈতিক দলের পেট্রোনাইজার এটা ব্যাখ্যা করা যায়, বলেন তিনি। তার কথা, প্রধান উপদেষ্টার উচিত হবে দ্রæতই তার কথার ব্যাখ্যা দেয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়