শিরোনাম
◈ বাংলাদেশের কাছে যে সুবিধা পাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে মেঘালয় সরকার ◈ সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি আট পরিবারের ৩৬০০ কোটি টাকা! ◈ রোহিঙ্গাদের সাহায্যের কাটছাঁট এড়াতে জরুরি তহবিল চায় জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা ◈ যৌথবাহিনীর অভিযানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কসহ আটক ১৪ (ভিডিও) ◈ ব্যাংক থেকে ছয় মাসে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার ◈ জামায়াতের ঢাকার ৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্ত ◈ এশিয়ান নারী কাবাডি চ্যাম্পিয়নশীপে বাংলাদেশের ব্রোঞ্জ পদক জয় ◈ চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীরা যে দলেরই হোক তাদেরকে প্রতিহত করতে হবে : মির্জা আব্বাস  ◈ উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের নারীরা: নারী দিবস উপলক্ষে ড. ইউনূস ◈ বিসিএস চিকিৎসকরা শনিবার থেকে কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন 

প্রকাশিত : ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০১:৩৩ রাত
আপডেট : ০৭ মার্চ, ২০২৫, ০২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

‘পরিবর্তিত’ বাংলাদেশ নিয়ে কেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন কলকাতার বাঙালিরা?

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন।। ছোটবেলা থেকে বাবা-কাকার কাছে ঢাকা আর বাংলাদেশের কত গল্প শুনেছি, বহু বার সেদেশে যাওয়ার কথা ভেবেছি। কিন্তু নাহ, আর বাংলাদেশে যাব না’- এ কথাগুলো বলছিলেন কলকাতার এক নারী। তার কথায়, ‘কোন বাংলাদেশে যাব? ইতিহাসটাই তো বদলিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেখানে-  কী দেখতে যাব সেদেশে আর?’

আগস্টের পর থেকে এরকম মনোভাব কলকাতার মধ্যবিত্ত সাধারণ বাংলাভাষী মানুষের একাংশের কথাতেই শোনা যাচ্ছে। তবে এই মনোভাবের বিপরীতে রয়েছেন অনেকে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে যারা বাংলাদেশে ভ্রমণে এসেছেন। এরকম একজন চাকরি জীবন শেষে কলকাতায় এখন অবসর সময় কাটানো রাজা গাঙ্গুলি।

তিনি বলেন, জুলাই- আগস্টে বাংলাদেশের ঘটনাবলী দেখে অনেকে আমাকে বারণ করেছিল বাংলাদেশে যেতে। যেন বাংলাদেশে ঢুকলেই ভারতীয় হিন্দু বলে আমাকে কেটে ফেলবে। কিন্তু ঝালকাঠির চেচরি গ্রামে আমার পূর্ব পুরুষের জন্ম-ভিটে দেখার স্বাদ মেটানোর সুযোগ পেয়েছি এতবছর পরে, সেই আশা অপূর্ণ থেকে যাবে? তাই গত ২৯ আগস্ট অনেকের বারণ না শুনেই চলে গিয়েছিলাম বাংলাদেশে। 

তিনি বলেন, চেচরি গ্রামের কাছে ভাণ্ডারিয়া স্কুলে আমার বাবা পড়তেন আবার সেখানেই এক বছর হেডমাস্টার ছিলেন আমার ঠাকুরদা। বরিশাল শহর থেকে একজন আমাকে গ্রামে নিয়ে গিয়েছিলেন। ওই স্কুলে দেখি বোর্ডে আমার ঠাকুর্দার নাম এখনও রয়েছে। এখন স্কুলের যিনি হেডমাস্টার, তিনি অনেকক্ষণ গল্প করলেন। আমরা খুব কম সময়ের জন্য গিয়েছিলাম, বারবার বলতে থাকলেন এরকম ভাবে এলে হবে না, আমাদের সঙ্গে খেতে হবে– আবার অবশ্যই আসবেন।

তিনি আর বলেন, দেশে ফিরে এসে এইসব কথা কাকে বলব! এখানকার মানুষকে যদি আমি বলতাম যে, আমাকে প্রায় মেরেই ফেলছিল। বাংলাদেশ থেকে কোনমতে বেঁচে ফিরে এসেছি, তাহলে বহু মানুষ আমার অভিজ্ঞতার কথা শুনতে চাইত। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যেন বাংলাদেশের এইসব অভিজ্ঞতার কথাই শুনতে চাইছে আজকাল।

তার কথায়, বাংলাদেশের ঘটনাবলী নিয়ে ব্যাপক অপপ্রচার চলছে ভারতে এবং তার আজন্ম পরিচিত বহু মানুষও বিশ্বাস করে ফেলছেন সেসব কথায়।

আবার গত বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশে আসেন অভিজিত মজুমদার। তার পৈতৃক ভিটে ছিল বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় পাটগেলঘাটার বড় কাশীপুর গ্রামে। তার ভ্রমণের অভিজ্ঞা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমি শুধু সাতক্ষীরা নয়, বরিশাল, যশোর, খুলনা আর ঢাকাসহ অনেক জায়গাতেই গিয়েছিলাম। ঢাকাতে আমি ছিলাম ঈদের সময়ে। বাস, গাড়ি, রিকশায় চেপে ঘুরেছি, মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। একটুও আলাদা কিছু মনে হয়নি যে আমি অন্য কোনও দেশে এসেছি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপের সময়ে ভেতরে ভেতরে শেখ হাসিনার সরকার নিয়ে বেশ কিছু ক্ষোভের কথা শুনেছি। যেমন ভোট দিতে না পারা বা জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য ইত্যাদি। ভারত সম্বন্ধেও বিশেষ কিছু ক্ষোভের কথা কিন্তু বলেননি ওদেশের মানুষ। কিন্তু এক দেড় মাসের মধ্যেই যে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে যাবে, সেটার কোনও আন্দাজ আমি অন্তত পাইনি।

কলকাতার প্রকাশক সংস্থা আখর প্রকাশনীর কর্তা রৌণক মৌলিক সম্প্রতি গিয়েছিলেন বাংলাদেশে। তিনি বলেন, দুই দেশের মানুষ কী সবাই একে অপরকে এতদিন বুকে জড়িয়ে ধরছিলাম? নাকি আমরা ভাবছিলাম যে বাংলাদেশ খানিকটা আমার মত করেই চলবে আর মাঝে মধ্যে ইলিশ পাঠাবে? আমাদের জীবনে তো বাংলাদেশের অবদান এইটুকুতেই এসে ঠেকেছিল যে, বইমেলায় সেদেশের কিছু প্রকাশক এসে বই বিক্রি করবেন আর মাঝে মাঝে হুমায়ুন আহমেদ আর সুনীল গাঙ্গুলির ছবি একসঙ্গে দেখা যাবে আর বাংলাদেশ আমাদের ইলিশ পাঠাবে। কিন্তু বাংলাদেশ যদি তার কথাগুলো তুলতে শুরু করে, যখন প্রশ্ন করে যে কেন ফেলানী খাতুনকে কাঁটাতারে ঝুলতে হবে, তখন এপারের বাঙালীরা সমস্যায় পড়ে যান। এই মুশকিলটাই তাদের এখন হচ্ছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক সব্যসাচী বসু রায় চৌধুরী বলেন, কলকাতার মানুষের কাছে বাংলাদেশের এই ঘটনাপ্রবাহ কিছুটা অপ্রত্যাশিত ছিল। সে কারণে তারা কিছুটা হতভম্ব। আসলে কলকাতার শিক্ষাবিদ বলুন বা শিল্প-সংস্কৃতির জগতের মানুষদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকেদের ঘনিষ্ঠতা বেশি ছিল। ফলে তাদের শাসনের বিরুদ্ধে যে জনমত তৈরি হচ্ছিল, তা যত শতাংশ মানুষের মধ্যেই থাকুক না কেন, সেটার সম্পর্কে এদিককার মানুষরা অবহিত ছিলেন না।

তিনি আরও বলেন, আমরা মাঝে মাঝে যাতায়াত করে উপলব্ধি করতাম, সেই খবর কিন্তু কলকাতার সাধারণ মানুষের কাছে ছিল না। তারা যে এখন শকড্, সেটার কারণ এটাই এবং সেজন্যই তারা বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহকে মন থেকে মেনে নিতে পারছেন না।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়