শিরোনাম

প্রকাশিত : ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫, ১০:৪৯ দুপুর
আপডেট : ৩১ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৪:২৬ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

চীন ইস্যু

মার্কিন প্রশাসনের চাপে পড়তে পারে ঢাকা

বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা ও সম্পর্ক বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে চাপের মুখে রয়েছে। অভ্যন্তরীণভাবে এমনিতেই বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে সরকারকে। এর মধ্যে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ট্রাম্প প্রশাসনের চাপে পড়তে পারে বলে মনে করছেন উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান। 

গতকাল বৃহস্পতিবার ভূরাজনীতি নিয়ে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের ‘বাংলাদেশ অ্যাট জিওপলিনিক্যাল ক্রসরোড’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি যদি দেখেন, তবে গত ছয় মাসে এখানে অনেক কিছু ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে চাপের মুখে আছে। ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে এখানে আচরণ করবে, তা আমরা জানি না। চীনের দিকে যাওয়া নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন যদি বাংলাদেশকে চাপ দেয়, তখন বাংলাদেশকেও কিছু না কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।

প্রধান উপদেষ্টার চীনের আসন্ন সফর নিয়ে কুগেলম্যান বলেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার চীনের দিকে ঝুঁকছে। আমরা জানি না, চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে মোকাবিলা করবে। ট্রাম্প কৌশলগত বিষয়গুলো কম গুরুত্ব দিয়ে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে বেশি মনোযোগী হবেন বলে মনে হয়। চীনের সঙ্গে সম্পর্কের বাধা তৈরিতে ট্রাম্প প্রশাসন থেকে বাংলাদেশের ওপর চাপ দেখতে পাওয়ার শঙ্কা আছে।

অনুষ্ঠানে সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণে ভারতকে মোকাবিলার ক্ষেত্রে চীন ভারসাম্যের দেশ হিসেবে দেখা হয়। পররাষ্ট্র উপদেষ্টার চীন সফরের বিষয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমরা আরও চীনা বিনিয়োগ দেখতে চাই।

আলোচনায় পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যনীতি বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশকে অর্থনীতি ও রাজনৈতিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তাহলেই বহির্বিশ্বে অভিন্ন স্বার্থ ও সম্মানের বৈদেশিক সম্পর্ক তৈরিতে এগিয়ে থাকবে। জুলাই-আগস্ট গণঅভুত্থ্যান সমতা ও মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখিয়েছে। এখন সময় এসেছে আগের ভুল শুধরে নেওয়ার। সাবেক রাষ্ট্রদূত ফারুক সোবহান বলেন, এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অর্থনীতিকে ঠিক করা। বেশির ভাগ বৈদেশিক বিনিয়োগকারী বর্তমানে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চাইছে না। কারণ, তারা একটি সরকারকে চার-পাঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চায়। এ কারণে প্রবাসী বাংলাদেশি ডায়াসপোরাদের কাছে যেতে হবে রেমিট্যান্সের জন্য।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ও বৈদেশিক সম্পর্ক নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি কমিশন করার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজের (বিআইপিএসএস) গবেষণা ফেলো সাফকাত মুনির। তিনি বলেন, হাসিনার আমলে যেসব পররাষ্ট্র নীতি পাস করা হয়েছিল, তা সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। আমাদের পররাষ্ট্র নীতিতে কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে হবে। আমাদের কী ধরনের পররাষ্ট্র নীতি দরকার আর কী রয়েছে, তা-ও দেখতে হবে।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের ভূরাজনীতি টেকসই নয়, অনিশ্চিত এবং আমাদের অনুকূলে নয়। অনিশ্চিত ভূরাজনীতিতে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রভাব ফেলবে। এ পরিস্থিতিতে নিয়মভিত্তিক বাণিজ্য ব্যবস্থা থেকে হয়তো আমরা ৫০-৬০ বছর আগের বাণিজ্য ব্যবস্থায় ফেরত যাব। বর্তমান আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র আলাদা করে কোনো দেশের ওপর সরাসরি শুল্ক আরোপ করতে পারবে না। কারণ তা হলে সে দেশটি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারবে। তবে এখন ডব্লিউটিও সচল নয়। অনিশ্চিত ভূরাজনীতি অনেক সময় কিছু দেশের জন্য সুফলও বয়ে আনে জানিয়ে তিনি বলেন, ট্রাম্পের আগের মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য সুযোগ বয়ে এনেছিল। তবে তা আমরা ব্যবহার করতে পারিনি। কারণ আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। সেই বাস্তবতায় এ ধরনের পরিস্থিতিতে আমরা এখনও প্রস্তুত নই।

অন্তর্বর্তী সরকার ভারতকে কীভাবে মোকাবিলা করবে, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের প্রশ্নে আলোচকরা বলেন, ভারত বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অকার্যকর সম্পর্কের ওজন আমাদের জন্য ভারী হবে। এমনকি চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও অকার্যকর সম্পর্কের ওজনও আমাদের জন্য ভারী হবে। তবে হাসিনার আগে ও পরে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যধিক বন্ধুত্ব থেকে অত্যধিক খারাপের দিকে গেছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কটা হতে হবে গঠনমূলক ও ইতিবাচক। যেটা ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতি রেখে এবং সময়ের দাবির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে পারস্পারিক আস্থা ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, বাংলাদেশে ভারতের সঙ্গে জামায়াত ও পাকিস্তান– এ দুটি বিষয় সবচেয়ে বেশি চিন্তার কারণ। বর্তমানে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টায় আছে। ভারত  বাংলাদেশে একটি নির্বাচন দেখতে চায়। কারণ হচ্ছে, ধারণা করা হচ্ছে নির্বাচন হলে বিএনপির ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বেশি। ভারত মনে করছে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। ফলে বিএনপির সম্ভাব্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ ভারতকে স্বস্তি দেবে। বাংলাদেশ ও ভারত একে অন্যকে প্রয়োজন।

মাহফুজ আনাম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। পত্রিকাটির জিওপলিটিক্যাল ইনসাইটের সম্পাদক রামিসা রবের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী, ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের অধ্যাপক ড. মারুফা আক্তার, সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক করিম, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে কূটনীতিক, গবেষক, শিক্ষাবিদ, সরকারি কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। উৎস: সমকাল।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়