মনিরুল ইসলাম: মিয়ানমারের আরাকান থেকে বাস্তুচ্যুত বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য জীবনরক্ষকারী খাদ্য ও পুষ্টি সহায়তা অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাৎ দেশটির পক্ষ থেকে দেওয়া সাহায্য স্থগিতাদেশের বাইরে থাকবে বাংলাদেশ।
এজন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ঢাকাস্থ আমেরিকান দূতাবাসের কর্মকর্তারা রোববার বিকেলে হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাকে পরিত্রাণের এ বিষয়টি অবহিত করেন।
এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড) সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সহযোগিতা কার্যক্রম স্থগিত করে। এ সংস্থার মাধ্যমে মার্কিন সরকার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) এক চিঠিতে মার্কিন সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাঠানো চিঠিতে এ কথা জানানো হয়। চিঠিতে সই করেন ইউএসএইডের অধিগ্রহণ ও সহায়তা তত্ত্বাবধায়ক চুক্তি কর্মকর্তা ব্রায়ান অ্যারন।
এতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সংস্থাটির সঙ্গে চুক্তির আওতাধীন সব প্রকল্প ও কর্মসূচির মার্কিন অংশের ব্যয় বন্ধ রাখতে বলা হয়।
ইউএসএইডের চিঠিতে বলা হয়, ইউএসএআইডি, বাংলাদেশ বাস্তবায়নকারী সব অংশীদারদের চুক্তি, কার্য আদেশ, অনুদান, সমবায় চুক্তি বা অন্য অধিগ্রহণ বা সহায়তা স্মারকের অধীনে সম্পাদিত যে কোনো কাজ অবিলম্বে বন্ধ অথবা স্থগিত করার জন্য একটি নির্দেশনা হিসেবে কাজ করে এ চিঠি। চিঠিতে বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের প্রাপ্ত বরাদ্দ থেকে ব্যয় কমানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। এছাড়া লিখিত কোনো নির্দেশ না আসা পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয় চিঠিতে। চিঠিতে রেফারেন্স হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের কথা উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া এই সংক্রান্ত নির্দেশনা বাস্তবায়নে দ্রুত একটি গাইডলাইন পাঠানোর কথাও বলা হয়।
কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ গণতন্ত্র ও শাসন, মৌলিক শিক্ষা এবং পরিবেশগত কার্যক্রমের পাশাপাশি বিশ্বের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য কর্মসূচি নিয়ে বাংলাদেশে ইউএসএআইডি কর্মসূচি এশিয়ার বৃহত্তম। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ইউএসএআইডি বাংলাদেশে বড় ধরনের মানবিক সহায়তা তদারকি করে।
২০২৪-এ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ৫০ বছর উপলক্ষে মার্কিন দূতাবাস ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, বিগত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, পরিবেশ, খাদ্যনিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং আরও অনেক কিছু মোকাবিলায় ৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের সঙ্গে অংশীদারত্ব করেছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ‘ফরেইন অ্যাসিস্ট্যান্স ডট গভ’ ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্নভাবে বাংলাদেশে ২০২১ সালে ৫০০ মিলিয়ন ডলার, ২০২২ সালে ৪৭০ মিলিয়ন ডলার, ২০২৩ সালে ৪৯০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৪ সালে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে নানাভাবে সহায়তা দিয়েছে দেশটি। রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকে ওয়াশিংটন বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। বিগত কয়েক বছরে মার্কিন সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ ১০-এর মধ্যেই ছিল বাংলাদেশ।
আপনার মতামত লিখুন :