শিরোনাম
◈ চৌকিতে আমু ফ্লোরে ঘুমান সালমান, খাবার অনেক সময় গন্ধ হয়ে যায়: যেমন কাটছে সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের কারাজীবন ◈ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্য কোটা বাতিল ◈ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কুরআন পোড়ানোর অভিযোগে শিক্ষার্থী গ্রেফতার ◈ পাকিস্তানের মুশতাক আহমেদ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের স্পিন বোলিং পরামর্শক ◈ ইউরোপিয়ান ফুটবলে জানুয়ারির মধ্যবর্তী দলবদল শেষ, দামী খেলোয়াড় খাভিছা ◈ পেলে, ম্যারাডোনা ও মেসির সঙ্গে আমার তুলনা চলে না, আমিই সর্বকালের সেরা: রোনালদো ◈ সুমাইয়াকে হয়রানি ও হত্যার হুমকি, কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছে বাফুফে ◈ বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত আজ ◈ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ◈ এবার জাবিতে পোষ্য কোটা বাতিল ঘোষণা

প্রকাশিত : ২১ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৪:১৩ দুপুর
আপডেট : ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ০৪:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

তার খালার আমলে মানুষ গুম করা হয়েছিল, এরপরও টিউলিপকে কেন মন্ত্রী করলেন স্টারমার: বিবিসির প্রতিবেদন

বাংলাদেশের মীর আহমেদ বিন কাসেমকে আট বছর বিনা বিচারে আটকে রাখা হয়েছিল। আহমেদ বিন কাসেমকে যখন রাতে সশস্ত্র ব্যক্তিরা বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যান, তখন সেখানে তার চার বছর বয়সী কন্যাও ছিল। কিন্তু সে এত ছোট ছিল যে, বুঝতেই পারেনি কী ঘটতে চলেছে। আটক অবস্থায় তার হাত ও চোখ বাঁধা থাকত। ফলে তিনি আজও জানেন না, কোথায় ছিলেন, কেনই–বা তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখা হয়েছিল।

আহমেদ বিন কাসেম বলেন, ‘তারা আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল, আমি ছিলাম খালি পায়ে। ছোট মেয়েটা আমার জুতা হাতে নিয়ে পিছু পিছু দৌড়ে আসছিল। বলছিল, “নাও, বাবা।” মনে হয়, সে ভাবছিল, আমি বাইরে যাচ্ছি।’ যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষিত এই ব্যারিস্টার (৪০) বাংলাদেশে ‘গুম’ হওয়া মানুষের একজন। শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম হওয়া এই ব্যক্তি ছিলেন তার সমালোচক। গত আগস্টে ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগপর্যন্ত ২০ বছরের বেশি সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেষ হাসিনা।

১৯৭১–এর মুক্তিযুদ্ধের পর হাসিনার আমলেই সবচেয়ে বেশি সহিংসতা দেখেছে বাংলাদেশ। সহিংসতায় নিহত হয়েছেন শত শত মানুষ। তার ক্ষমতায় আঁকড়ে থাকার শেষ দিনটিতেও অন্তত ৯০ জন নিহত হন। বিতর্ককে সঙ্গী করা হাসিনা যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির আইনপ্রণেতা (এমপি) টিউলিপ সিদ্দিকের খালা। নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ ওঠার পর গত সপ্তাহে টিউলিপ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের দুর্নীতি প্রতিরোধবিষয়ক মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি (টিউলিপ)।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর একটি হলো বাংলাদেশের অবকাঠামোগত ব্যয় থেকে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন (৩৯০ কোটি) পাউন্ড পর্যন্ত আত্মসাৎ করেছে টিউলিপের পরিবার। এ ছাড়া লন্ডনে তিনি তার খালার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের সম্পত্তি ব্যবহার করেছেন। কিয়ার স্টারমার সরকারের তদন্তে মন্ত্রিত্বের আচরণগত নীতিমালা টিউলিপ ভাঙেননি বলে দেখা গেছে। তবে যেকোনোভাবেই হোক পদত্যাগ করেছেন তিনি।

এ ঘটনা কিয়ার স্টারমারের বিবেচনাবোধ ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের ভোট আকর্ষণে লেবার পার্টির দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে যন্ত্রণাদায়ক নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ঘুরপাক খাওয়া প্রশ্নগুলোর একটি, কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়া খালার সঙ্গে টিউলিপের যে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, সে বিষয়ে অনেক আগে থেকে জানার পরও লেবার পার্টি এখনকার ঘটনা আঁচ করতে পারল না কেন। কেননা, হাসিনার আমলে সেই ২০১৬ সালেই বিন কাসেমের ঘটনা প্রথম প্রকাশ্যে এসেছিল।

বিন কাসেম ও অন্য বাংলাদেশিদের ‘গুম’ হওয়ার ঘটনা মানবাধিকার বিষয়ে ওই সময় থেকে টিউলিপের সোচ্চার হওয়া নিয়ে একটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবনারও জন্ম দিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, নিজ নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা নাজানিন জাঘারি–র‍্যাটক্লিফকে ইরান থেকে মুক্ত করার জন্য দীর্ঘ প্রচার চালিয়েছেন টিউলিপ। বিপরীতে বাংলাদেশে তার খালার শাসনামলে লোকজনের দুঃখ–দুর্দশা এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে জনসমক্ষে বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে টিউলিপের নির্লিপ্ততা ছিল উল্লেখ করার মতো।

যুক্তরাজ্যে লেবার দল থেকে ২০১৫ সালে এমপি নির্বাচিত হতে সহায়তা করায় আওয়ামী লীগের সদস্যদের ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন টিউলিপ। দলটির সঙ্গে নিজের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তিনি ২০০৮ ও ২০০৯ সালে তার ওয়েবসাইটে দুই পৃষ্ঠাজুড়ে বর্ণনা দেন। যদিও পরে তা মুছে ফেলা হয়।

একসময় পার্লামেন্টে টিউলিপ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব খাটানোর কোনো সক্ষমতা বা আকাঙ্ক্ষা’ তার নেই। তবে সব মিলিয়ে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে টিউলিপের সংশ্লিষ্টতা গোপন ছিল না। কিন্তু সম্ভবত লেবার পার্টি এ সংশ্লিষ্টতাকে খারাপ হিসেবে দেখেনি। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে দলটির দূরত্ব বজায় রাখার লক্ষণ খুব কমই দেখা গেছে।

২০১৫ সালে স্টারমারও টিউলিপের পাশের আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে পার্লামেন্টে প্রবেশ করেন। একাধিকবার হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। হাসিনার সঙ্গে স্টারমারের এমন এক সাক্ষাৎ ঘটেছিল ২০২২ সালে। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা ওই সময় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিতে লন্ডনে ছিলেন। ওই বৈঠককে ‘হৃদয়বিদারক ও মর্মন্তুদ’ বলে আখ্যায়িত করেন বিন কাসেম। তবে স্টারমারের একজন সহযোগী যুক্তি দিয়ে বলেন, হাসিনার সঙ্গে স্টারমারের ওই সাক্ষাৎ করা ছিল ‘খুবই যৌক্তিক’। বৈঠকটি হাসিনার নীতির প্রতি তার সমর্থনের বহিঃপ্রকাশ ছিল না।

বাংলাদেশকে বছরের পর বছর লেবার পার্টির পাশে রাখার দৃশ্যত এমন চেষ্টা ছিল যুক্তরাজ্য, বিশেষ করে রাজধানী লন্ডনের অংশবিশেষের রাজনৈতিক বাস্তবতারই হয়তো প্রতিফলন। লেবার পার্টির একজন বিশিষ্ট নেতা বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেন, ‘বাংলাদেশি ভোট না বুঝে পূর্ব লন্ডনে আপনি সফল হতে পারবেন না।’ অবশ্য তিনি বলেন, ‘আপনার কথা ও কাজের মধ্যে সতর্কভাবে ভারসাম্য বজায় রাখা উচিত। আপনি যদি একটি দলের (বাংলাদেশি) ব্যাপারে অতিরিক্ত খোলামেলাভাব দেখান, তবে আপনার সমালোচনা হবেই।’

গত জুলাইয়ে নির্বাচনে জেতার অল্প পরই স্টারমার যুক্তরাজ্যের দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে টিউলিপকে নিয়োগ দেন। ওই সময় আওয়ামী লীগের প্রতি লেবার পার্টির সহানুভূতি ও লন্ডনের রাজনৈতিক বাস্তবতাই কি দুর্নীতি নিয়ে সম্ভাব্য ঝড়ের ব্যাপারে স্টারমারের বিচারবোধ ম্লান করে দিয়েছিল? উঠেছে এমন প্রশ্ন।

একটি লেবার সূত্র বলেছে, ‘নিজের বন্ধুবান্ধব ও রাজনৈতিক সহকর্মীদের প্রতি স্টারমারের অন্ধভক্তি রয়েছে। এটা নতুন কিছু নয়।’ অনুসন্ধানী সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে টিউলিপের এক দশকের সংশ্লিষ্টতার ওপর আলোচনা করেছেন। এ ক্ষেত্রেও তিনি ‘পটভূমিই সবকিছু’ বলে ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, ‘লেবার পার্টির ক্ষমতায় আসা ও টিউলিপ সিদ্দিক মন্ত্রী হওয়া এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে এটি (টিউলিপকে নিয়ে হইচই, তার সম্ভাব্য পদত্যাগ ও সরকারের ঝামেলায় পড়া) কোনো বড় গল্প ছিল না।’

বার্গম্যানের যুক্তি, অনেক বছর আগেই এ নিয়ে (টিউলিপের ব্যাপারে) লেবার পার্টির কারও না কারও উদ্বেগ প্রকাশ করা উচিত ছিল। টিউলিপকে নিয়ে প্রথম অনাবিষ্কৃত উদ্বেগের ক্ষেত্র ছিল, বাংলাদেশে জোর করে গুমের ঘটনায় তাঁর সাড়া দেওয়ার ব্যর্থতার বিষয়টি। এরপরের ক্ষেত্রটি ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি।’

এ বিষয়ে লেবার পার্টির এমপিদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, ব্রিটিশ গণমাধ্যমের পাশাপাশি লেবার পার্টির মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে জানার ঘাটতি আছে। যুক্তরাজ্যে প্রায় ৬ লাখ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ রয়েছেন। তাদের কথায়, এটি বিশ্বের অষ্টম বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ। অথচ ৫ আগস্টের পর এখানকার গণমাধ্যমের কাছ থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে আমরা কোনো খবর শুনিনি।

হাসিনার বিরুদ্ধে আরও কিছুদিন দুর্নীতির তদন্ত চলতে পারে। ফলে টিউলিপ লেবার পার্টির এমপি থাকতে পারবেন কি না, সামনের মাসগুলোয় সেটিও স্টারমারের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের জন্য সম্ভাব্য আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠতে পারে। হাসিনা সরকারের পতনের পর আহমেদ বিন কাসেমকে হঠাৎই তার কক্ষ থেকে জাগিয়ে তোলা হয়। পরে একটি গাড়িতে উঠিয়ে খাদে ফেলে দেয়া হয়। অবশেষে তিনি বাড়িতে তার দুই মেয়ের কাছে ফিরতে পেরেছেন। অনুবাদ: চ্যানেল২৪

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়