শিরোনাম
◈ সৌদি সরকারের নিয়মের বাইরে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না: ধর্ম উপদেষ্টা ◈ ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিক’ হাসপাতালে চি‌কিৎসা চলছে খালেদা জিয়ার, খাচ্ছেন বাসার খাবার ◈ ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের সঙ্গে টিউলিপের সম্পর্ক এখন আলোচনার কেন্দ্রে: গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন ◈ দিল্লির ‘হাসিনাপ্রীতিতে’ অসন্তুষ্ট খালেদার দল: আনন্দবাজারের প্রতিবেদন ◈ স্বাস্থ্য অধিদফতরের এইচএমপিভি নিয়ে ৭ নির্দেশনা ◈ জনপ্রিয় ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানে ভাঙচুর-মারামারি, অনুষ্ঠান স্থগিত! (ভিডিও) ◈ ‘নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি’ কনটেন্ট ক্রিয়েটর কাফির (ভিডিও) ◈ প্রথম চীন সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, লক্ষ্য সম্পর্ক জোরদার ◈ আকু'র বিল ১.৬৭ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের পর রিজার্ভ এখন ২০ বিলিয়ন ডলার ◈ খুব সহজেই ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের স্কুল বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড করা যাবে যেভাবে

প্রকাশিত : ১০ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:১৮ রাত
আপডেট : ১০ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৯:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রথম চীন সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, লক্ষ্য সম্পর্ক জোরদার

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন

মহসিন কবির: বাংলাদেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ঢাকা ও নয়াদিল্লির সম্পর্ক অনেকটাই শীতল হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারি চীন সফরে যাচ্ছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। এরই মধ্যে সফরের প্রস্তুতি হিসেবে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকও করা হয়েছে।

সূত্র বলছে, এ সফরের লক্ষ্য বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও গভীর করা। বর্তমান বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করা বাংলাদেশের জন্য তো বটেই, চীনের জন্যও অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। যদিও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন এ সরকার শুধু চীনের সঙ্গেই নয়, সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার নীতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ইইউভুক্ত দেশগুলো চীনের ওপর বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণের প্রধান উৎস হয়ে উঠেছে চীন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, চীনের সাথে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ভারত ও পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য একটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগের বিষয়। চীন গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে একটি বড় বিনিয়োগকারী। 

তথ্য বলছে, চীনা উদ্যোক্তারা ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৪২৮.০৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬৮.১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৮৩.৫৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এ ছাড়া হংকং, যেটি চীনের একটি অংশ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১২১.৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৪৭.৫৫ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮১.১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন তার সফরকালে সম্পর্কের বিস্তৃত বিষয় নিয়ে আলোচনায় অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে থাকবে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্প, বিভিন্ন চীনা বিনিয়োগ, রোহিঙ্গা সংকট ও মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ। একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাদের সময়কে জানিয়েছে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক চাপ সামলাতে চীনের কাছ থেকে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক প্যাকেজ চাইতে পারে বাংলাদেশ।

অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রতিবেশী ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কে শীতলতা বিরাজ করছে। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ভারত তাকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়া অধিক হাসিনাপ্রীতিও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অন্তরায়। এরই মধ্যে শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে কূটনৈতিক পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ। সেই পত্রের এ পর্যন্ত কোনো উত্তর দেয়নি নয়াদিল্লি।

সূত্র বলছে, হাসিনাবিহীন বাংলাদেশের বাস্তবতা মেনে নিয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার বার্তা এসেছে ভারতের তরফ থেকে। আর বাংলাদেশও হাসিনা ইস্যুকে প্রাসঙ্গিক রেখে সমান্তরলভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চাচ্ছে। পারস্পরিক আস্থা বাড়ানো ও স্থিতিশীলতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতি দুই প্রতিবেশীই আগ্রহ দেখিয়েছে। দুই দেশের সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহযোগিতার ইচ্ছাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকসহ সাম্প্রতিক কূটনৈতিক আদান-প্রদান দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার আভাস দিচ্ছে। পাশাপাশি বিরোধের ইস্যুগুলো মীমাংসার ক্ষেত্রেও দুই দেশের কূটনৈতিক আচরণ ইতিবাচক বলেই বিবেচিত হচ্ছে।

গত ১ জানুয়ারি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন স্পষ্ট করে বলেছেন- যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীন ২০২৫ সালে এই তিন বড় শক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষায় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। আর ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক শুধু একটি ইস্যুতে আটকে থাকবে না, বরং আরও বিস্তৃত হবে। কিন্তু ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের বিষয়টির সুরাহা না হলে ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক কীভাবে এগিয়ে যাবে, তা নিয়ে অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, অবশ্যই এটি একটি ইস্যু, আমাদের মধ্যে আরও অনেক দ্বিপক্ষীয় ইস্যু আছে। আমি মনে করি, দুই পক্ষ যুগপৎভাবে সম্পর্ক এগিয়ে নেবে। পারস্পরিক স্বার্থগত অনেক ইস্যু রয়েছে। একে একে আমরা এসব ইস্যু নিয়ে কাজ করব।

অন্যদিকে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কও বৃদ্ধি পেয়েছে, যেটি গত ১৫ বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় বন্ধ ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর প্রথম পণ্যবাহী কোনো জাহাজ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে এসেছে। ১৩ নভেম্বর জাহাজটি করাচি থেকে রওনা হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করে। ঘটনাটিকে দুই দেশের মধ্যে প্রথম সরাসরি সামুদ্রিক সংযোগ বলে উল্লেখ করেছে ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশন। বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ এ ঘটনাকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে একটি প্রধান পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন। তবে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে জাহাজ আসার ঘটনায় উদ্বিগ্ন ভারতের নিরাপত্তা বাহিনী। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আসন্ন এই সফরের সময়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বছরব্যাপী যে কর্মযজ্ঞ চলবে তার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়