অনুজ দেব বাপু, চট্টগ্রাম : ভারতের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ৯০ বাংলাদেশি নাবিক ও জেলে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় পৌঁছেছেন। মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় পতেঙ্গার কর্ণফুলী চ্যানেলের ১৫ নম্বর ঘাটে এসে পৌঁছান তারা। একই সঙ্গে বাংলাদেশের ‘এফভি লায়লা-২’ এবং ‘এফভি মেঘনা-৫’ নামের দুটি ফিশিং ভেসেলও ফেরত এসেছে।
মঙ্গলবার সকাল ১০টায় পতেঙ্গা কোস্টগার্ড ঘাটে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ফেরত আসা ৯০ জেলে-নাবিককে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মো. জহিরুল হক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মনোয়ার মোকারমসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। নাবিক-জেলেদের বরণ করতে আগে থেকে উপস্থিত ছিলেন স্বজনরা। এদিকে ফেরত আনা দুটি ফিশিং জাহাজ ‘এফভি লায়লা-২’ ও ‘এফভি মেঘনা-৫’ মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রোববার (৫ জানুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে বঙ্গোপসাগরে খুলনায় হিরণ পয়েন্ট এলাকায় আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমানায় ৯০ নাবিককে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করে ভারতীয় কোস্টগার্ড। এর আগে বাংলাদেশে আটক থাকা ৯৫ ভারতীয় জেলে ও ছয়টি ফিশিং বোট ভারতের কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করেছিল বাংলাদেশ কোস্টগার্ড।
গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা অতিক্রম করে ভারতীয় সীমানায় প্রবেশের অভিযোগে বঙ্গোপসাগরে খুলনায় হিরণ পয়েন্ট এলাকা থেকে ‘এফভি লায়লা-২’ ও ‘এফভি মেঘনা-৫’ নামের দুটি ট্রলার আটক করে নিয়ে যায় ভারতীয় কোস্টগার্ড সদস্যরা। এ দুটি ট্রলারে ৭৮ জন নাবিক-জেলে ছিল।
ভারতীয় কোস্টগার্ড তাদের আটকের পর দেশে ট্রলারগুলোর মালিক কর্তৃপক্ষ এবং নাবিকদের স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এফভি লায়লা-২ ট্রলারটি এস আর ফিশিং নামের প্রতিষ্ঠানের। আর এফভি মেঘনা-৫ ট্রলারটি সিঅ্যান্ডএফ অ্যাগ্রো লিমিটেডের মালিকানাধীন। এফভি লায়লা-২ ট্রলারটি গত ২৭ নভেম্বর মাছ ধরার জন্য সাগরে যায়।
২০ ডিসেম্বর ঘাটে ফেরার কথা ছিল। এ ট্রলারটিতে ছিল ৪১ জন নাবিক-জেলে। এফভি মেঘনা-৫ ট্রলারটি গত ২৪ নভেম্বর সাগরে যায়। ১৪ ডিসেম্বর ফিরে আসার কথা ছিল। এটিতে ছিল ৩৭ জন নাবিক-জেলে। ঘটনার পরদিন ১০ ডিসেম্বর খুলনার হিরণ পয়েন্ট এলাকার অদূরে সমুদ্র থেকে ট্রলারসহ তাদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে মালিকপক্ষ ও নৌপরিবহন অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছিল।
সূত্র আরও জানায়, ভারতীয় জলসীমায় মাছ শিকারের অভিযোগ এনে ভারতীয় কোস্টগার্ড তাদের আটকের পরে তাদের উড়িষ্যার প্যারাদ্বীপে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আদালতের মাধ্যমে অনুপ্রবেশের দায়ে কারাগারে রাখা হয়। ১০ ডিসেম্বর রাতে ভারতীয় কোস্টগার্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে তিনটি ছবি প্রকাশ করে বলা হয়, ভারতীয় সমুদ্রসীমায় মৎস্য আহরণের অভিযোগে এক অভিযানে ট্রলার দু’টিসহ ৭৮ নাবিককে আটক করা হয়েছে।
নাবিকসহ ট্রলার দুটি প্যারাদ্বীপের কাছে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশি মাছ ধরার নৌকা ‘এফভি কৌশিক’ প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে ডুবে যায়। ওই নৌকায় থাকা ১২ বাংলাদেশি জেলেকে ভারতীয় কোস্টগার্ড আটক করে নিয়ে যায়। তাদের ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কাকদ্বীপে ভারতীয় কোস্টগার্ডের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছিল। পরে তাদেরও অনুপ্রবেশের দায়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে রাখা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :