দীপক চৌধুরী: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, এখনো দেশের সর্বস্তরে স্বাধীনতাবিরোধীদের আধিপত্য সর্বত্র। মানুষ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলে যাচ্ছে বলেই মুক্তিযোদ্ধারা আজ অবমূল্যায়িত হচ্ছেন।
শুক্রবার বেলা ১১টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডো অ্যাসোসিয়েশনের’ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডো এসোসিয়েশনের মহাসচিব অনিল বরণ রায়ের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ইস্যু উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের দিনগুলো কীভাবে কেটেছে সেটি আমাদের সবাইকে জানানো দরকার। এজন্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাসের পাশাপাশি স্বাধীনতাবিরোধীদের ইতিহাসও পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোর ইতিহাস জানাতে হবে জাতিকে। মন্ত্রী বলেন, পাঠ্যসূচিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যথেষ্ট নয়।এসব আরও সমৃদ্ধ করা দরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের ইতিহাস সংরক্ষণ করলেই হবে না এর সঙ্গে রাজাকারদের অপকর্ম ও নৃশংসতা তুলে ধরতে হবে। যুদ্ধাপরাধী-রাজাকারেরা কীভাবে লুটপাট করেছে, অগ্নি সংযোগ করেছে, ধর্ষণ করেছে, নির্যাতন করেছে সেই ইতিহাসগুলো তুলে ধরতে হবে। পাঠ্যসূচিতে এগুলো থাকা উচিত।
১২ ধরনের বারকোড দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের ডিজিটাল সার্টিফিকেট ছাপানো শেষ হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ১৮ জুলাই থেকে মুক্তিযোদ্ধারের ডিজিটাল সনদ বিতরণ করা হবে। আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বাতিল করলেও হাইকোর্ট তা গ্রহণে তালিকা পাঠায়। আমরা কি কোর্টের আদেশে মুক্তিযুদ্ধ করেছি? না, করি নাই। যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের নৃশংসতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সংসদ ভবন এলাকা থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের কবর সরাতে হবে। এটি জাতির জন্য কলঙ্কের।
কোটা সংস্কার করা একটি যৌক্তিক দাবি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা চাকরিতে না আসতে পারলে চাকরিতে স্বাধীনতাবিরোধীদের নৈরাজ্য বেড়ে যাবে।
মন্ত্রী আরও বলেন, আমরা এখনো অনেক ব্রিটিশ আইনেই চলি। বিসিএস পরীক্ষায় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের উপর ১০০ নম্বরের পরীক্ষা নিতে হবে। অনেক বলার পর ৫০ নম্বর করা হয়েছে। কিছু কিছু বিষয়ে এখনো নতুন আইন হয়নি স্বাধীনতার পরে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এমপি শাজাহান খান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে ‘অপারেশন জ্যাকপট’ চলচ্চিত্র তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিভিন্ন বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে শাজাহান খান বলেন, অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানে না। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সন্তানদের ইতিহাস না শেখালে অচিরেই দেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিলুপ্ত হয়ে যাবে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের ১৮টি সংগঠন। অথচ একটার সঙ্গে আরেকটার ঐক্য নেই।
নৌ-কমান্ডো এসোসিয়েশনের ৬টি দাবির মধ্যে সর্বাগ্রে থাকা প্রথম দাবি ছিল, নৌ-কমান্ডোদের বীরত্বগাথা পাঠ্য বইয়ে সন্নিবেশিত করা। যাতে আগামী প্রজন্মের সন্তানেরা তা পাঠের মাধ্যমে একাত্তরের নৌ-কমান্ডোদের ত্যাগ ও বিস্ময়কর সাহসিকতার ছোঁয়া পেয়ে দেশকে ভালোবাসার মন্ত্রে উজ্জীবিত করতে পারে।
নৌ-কমান্ডো অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান বীর প্রতীক শাহজাহান কবীরের সভাপতিত্বে সংসদ সদস্য নৌ-কমান্ডো মীর মোশতাক আহমেদ (রবি), মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডো এসোসিয়েশনের মহাসচিব অনিল বরণ রায় বক্তব্য রাখেন। নৌ-কমান্ডো অ্যাসোসিয়েশনের অন্য সদস্যরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :