বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, স্বাধীনতা হালকাভাবে নেওয়ার বিষয় নয়। এই দিনে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এটা গৌরবের দিন, এটা পুণ্যের দিন।
আজ সোমবার মুক্তিযুদ্ধের মহান বিজয় দিবসে প্রথমা প্রকাশন আয়োজিত বিজয় বইমেলার অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এ কথা বলেন।
বাংলাদেশিদের দেশপ্রেমের উদাহরণ টেনে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘পাকিস্তানিরা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধে পারেনি। কারণ, আমাদের ভেতরে ছিল দেশপ্রেম। ওসমানী বলেছিলেন ভারত সাহায্য না করলেও মুক্তিযুদ্ধে আমরা জয়ী হয়ে যেতাম। আমাদের ভেতরে ছিল গণতন্ত্রের চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা। পাকিস্তানিরা ছিল সামন্তবাদী। বাঙালি ২০০ বছর ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন করেছে। তারা রেনেসাঁর সময় অতিক্রম করেছে। এতে বাঙালির ভেতরে তৈরি হয়েছিল গণতান্ত্রিক চেতনা ও মূল্যবোধ। সেই চেতনা ও দেশপ্রেম নিয়ে যুদ্ধ করেছে ভয়ংকর অস্ত্রশস্ত্র সজ্জিত পাকিস্তানের হানাদার সেনাদের বিরুদ্ধে।
পাল, সেন, মোগল, পাঠান, তুর্কি, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বাঙালি তার চিরকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই অর্জনকে কেউ সহজভাবে নেবে না। বহু জীবনের বিনিময়ে, বহু সংগ্রামে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা মোটেই হালকাভাবে নেওয়ার বিষয় নয়।’
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ইতিহাস থেকে ঐতিহ্য, সাহিত্য থেকে সংস্কৃতি, ভূতত্ত্ব থেকে ভূগোল, ধর্ম থেকে দর্শন, রাজনীতি থেকে অর্থনীতি, সংগ্রাম থেকে স্বাধীনতা পর্যন্ত জ্ঞান ও প্রজ্ঞার বিশাল বিচিত্র ভুবন ছুঁয়ে গিয়েছিলেন তাঁর প্রসিদ্ধ অসাধারণ বাগ্মিতায়। মুগ্ধ হয়ে শুনেছেন শ্রোতারা। আসন ভরে গিয়েছিল, অনেকেই মাঠে দাঁড়িয়ে তাঁর বক্তব্য শুনেছেন।
এই শিক্ষাবিদ বলেন, পাকিস্তানের জন্ম, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ১৯৬৯–এর গণ–অভ্যুত্থান, ১৯৯০–এর গণ–অভ্যুত্থান ও সর্বশেষ ২০২৪–এর গণ–অভ্যুত্থান দেখার অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর জীবনে। তবে সাম্প্রতিক জুলাইয়ের ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে পুরো জাতি যেন পাগল হয়ে উঠেছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার চরণ উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘একবার মরে ভুলে গেছে আজ মৃত্যুর ভয় তারা’।
বাস্তবেই এমন করে মৃত্যুর ভয়কে ভুলে গিয়েছিল তরুণ প্রজন্ম। পুলিশ বলেছে, ‘একটি গুলি করলে একজনই মারা যায়, অন্যরা জায়গা থেকে সরে না।’ এই যে অমিত সাহস, এটাই বাঙালিকে অনন্য করেছে। এই সাহসিকতার জন্যই এ উপমহাদেশে কেবল বাঙালিরাই একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র গঠন করতে পেরেছে। এবার তারা তাদের সাহসী আত্মদানের ভেতর দিয়ে একটি নতুন পরিপ্রেক্ষিত সৃষ্টি করেছে। ব্রিটিশ আইনের সংস্কার করে নিজেদের জন্য একটি নতুন আইন, বিধিবিধান তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এটা বাঙালি ছাড়া আর কেউ করতে পারেনি।
সূত্র : বণিক বার্তা, প্রথমআলো
আপনার মতামত লিখুন :