শিরোনাম
◈ ট্রাম্পের 'সহায়তা স্থগিত', বাংলাদেশে মার্কিন কর্মসূচি ঢেলে সাজানোর সুযোগ ◈ নতুন দুই বিভাগ ও দেশকে চারটি প্রদেশে ভাগ করার প্রস্তাব সংস্কার কমিশনের ◈ 'ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলে’ মানুষই ব্যবস্থা নেবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ বেরোবির ১১ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শোকজ অফিস ফাঁকির অভিযোগে ◈ বিমানবন্দরে গ্রেফতার ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ◈ হাহাকার বেড়েই চলছে কলকাতার ‘মিনি বাংলাদেশ’-এ, বন্ধের পথে অনেক হোটেল-রেঁস্তোরা ◈ আওয়ামী লীগ নামে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না: সালাহউদ্দিন আহমেদ ◈ পরিবর্তন হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা, বাদ যাচ্ছে শেখ মুজিবের নাম ◈ সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান  হান্নান অস্ত্রসহ গ্রেফতার  ◈ শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ আসামিসহ সবাই খালাস

প্রকাশিত : ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৬:৩১ বিকাল
আপডেট : ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরালো হচ্ছে, মিথ্যা প্রচার বন্ধের দাবি

ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জোরালো হচ্ছে, মিথ্যা প্রচার বন্ধের দাবি

মহসিন কবির: বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিরামহীনভাবে অপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ভারতের মিডিয়া। মিথ্যাকে সত্য বলে প্রচার করছে। বিভিন্ন গুজব প্রচার করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের মিডিয়া সোচ্চায় থাকায় তারা সুবিধা করতে পারেনি। 

এদিকে বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) নয়াদিল্লিতে তৃণমূলের লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা আগেই বলেছি বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সংসদে বিবৃতি দিতে হবে বিদেশমন্ত্রীকে।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপরে লাগাতার অত্যাচার হচ্ছে৷ অবিলম্বে তা বন্ধ হওয়া উচিত। ভারত সরকারের তরফে এই মর্মে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে। আমাদের বিদেশসচিব বাংলাদেশে গিয়ে ওদেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে দেখা করে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বন্ধের দাবি তুলতে পারেন। বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারত সরকারের অবস্থান জানার জন্য আমরা লোকসভায় অত্যন্ত উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছি। বিজেপির সাংসদরাও এ ব্যাপারে সরকারের অবস্থান জানতে চাইছেন।’

ভারতের সংবাদমাধ্যম বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে মন্তব্য করে তাদের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সত্য তুলে ধরতে সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা উপদেষ্টা বলেছেন, দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়নি। পাশের দেশের মিডিয়া আমাদের সম্পর্কে অনেক মিথ্যা প্রচার করছে। একমাত্র আপনারাই এটার বিরুদ্ধে কাউন্টার সত্যটা তুলে ধরতে পারেন।

তিনি আরও বলেছেন, আমাদের দেশের সাংবাদিকরা সত্যি ঘটনাটাই বলে এবং আপনারা সত্যি ঘটনা প্রকাশ করেন। তাহলে যারা অপপ্রচার করছে তাদের মুখে চুনকালি পড়বে।

বাংলাদেশের ইস্যুতে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভূমিকাকে ‘অবন্ধুসুলভ’ আখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। রোববার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানী ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে জমা দেওয়া স্মারকলিপিতে এই অবস্থা ব্যক্ত করে বিএনপি।

গভীর উদ্বেগ ও বিস্ময় প্রকাশ করে স্মারকলিপিতে বলা হয়, ‘দুনিয়া কাঁপানো ছাত্র-জনতার অভাবনীয় তুমুল আন্দোলনে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা আপনার দেশে পালিয়ে যাওয়ার পর আপনারা তাঁকে আশ্রয় দিয়েছেন। অতঃপর আপনার দেশের অতি উগ্রবাদী নেতৃবৃন্দ এবং বিশেষ করে কতিপয় সংবাদমাধ্যম ও মিডিয়া বাংলাদেশের এই গণশত্রু হাসিনা ওয়াজেদকে পুনরায় পুনর্বাসন এবং বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অস্থিতিশীল করবার নিমিত্তে একের পর এক অজ্ঞ-অর্বাচীনের ন্যায় কাজ করে যাচ্ছে। যাতে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয়, আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের বন্ধুত্ব ছিল হাসিনার সঙ্গে, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে নয়।’

ভারতীয় হাইকমিশনে দেওয়া স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘আপনি সম্যক অবগত আছেন যে গত ২ ডিসেম্বর ২০২৪ তারিখে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে ন্যক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে। নৈতিক পদস্খলনের কারণে ইসকন থেকে বহিষ্কৃত সাবেক নেতা শ্রী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে উগ্র হিন্দুত্ববাদী হাজার হাজার মানুষ যখন রাষ্ট্রীয় মদদ ও প্রশ্রয়ে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা করছিল তখন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে আপনার দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে হামলা, কলকাতায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অবমাননা, সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা উসকে দেওয়ার ষড়যন্ত্রসহ বেশ কয়েকটি ঘটনার প্রতিবাদে ভারতীয় হাইকমিশন অভিমুখে পদযাত্রা করে বিএনপি তিন সংগঠন। পদযাত্রাটি রামপুরা ব্রিজের কাছে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দিলে সেখান থেকে একটি প্রতিনিধিদল হাইকমিশনে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে আসে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, 'ওরা বিদ্বেষপরায়ণ, বাংলাদেশের মানুষকে পছন্দ করে না, ওরা বাংলাদেশবিরোধী। ভুটান তাদের (ভারত) সঙ্গে নেই, নেপাল নেই, পাকিস্তান তাদের সঙ্গে নেই, শ্রীলঙ্কা নেই, ছোট্ট দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপও তাদের সঙ্গে নেই। কেউ ওদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারে না।

রিজভী আরও বলেন, 'আমি ভারতের শাসকগোষ্ঠীকে বলি, আপনারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কথা বলছেন… আমি তো দেখলাম এখানে ইসকন সমর্থকদের দ্বারা একজন আইনজীবী মারা গেলেন… তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। আপনাদের ওখানে যে শুভেন্দুসহ যারা আছেন তারা তো এ ব্যাপারে একটা কথাও বললেন না, আওয়াজ পর্যন্ত তুললেন না।

সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যরা বলেছেন, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যেকোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রস্তুত আছেন দেশের অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তারা। ভারতীয় আগ্রাসন ও অপপ্রচার অবিলম্বে বন্ধ দেখতে চায় বাংলাদেশ। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর রাওয়া কমপ্লেক্সের নিচে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যবৃন্দের আয়োজনে প্রতিবাদ সমাবেশে এমন আহ্বান জানানো হয়।

সভায় অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মানিক দেওয়ান বলেছেন, দেশকে রক্ষার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রশিক্ষিত সব সৈনিক প্রস্তুত আছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন যুদ্ধ উপযোগী এবং যেকোনো শত্রু মোকাবেলায় প্রস্তুত। বর্তমান সেনাবাহিনী এখন ১৯৭১ সালের মতো নয় বলে মনে রাখতে বলেন সবাইকে।

প্রতিবেশী বন্ধুর কাছ থেকে সুবিধা নিতে চায় ভারত, তাই সব দেশ ভারতের বিরুদ্ধে চলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ আরো বলেন,‘বাংলাদেশকে ধংস করতে ভারতীয় মিডিয়াতে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিজেপি সরকার।’

ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর, খুলনা ও ফেনীতে বিক্ষোভ হয়েছে। ২ ডিসেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে এসব কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।

৪ ডিসেম্বর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক কমিটি। বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাকার বিভিন্ন থানা কমিটি মিছিল নিয়ে যোগ দেয়। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে থেকে বিভিন্ন কমিটির সদস্যরা যোগ দেন। এ সময় তারা ‘দিল্লি না ঢাকা? ঢাকা ঢাকা’, ‘গোলামি না আজাদি? আজাদি আজাদি’, ‘দালালি না রাজপথ? রাজপথ রাজপথ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।

মৌলভীবাজারের জুড়ী সীমান্তে ভারতীয় আগ্রাসন ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সর্বধর্মীয় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) উপজেলার বটুলী সীমান্তে এ কর্মসূচি পালিত হয়। সমাবেশ পরিচালনা করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জুড়ীর সমন্বয়ক তারেক মিয়া।

কুড়িগ্রামের উলিপুরে ভারতীয় আগ্রাসন এবং ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাস হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) বিকেলে সচেতন নাগরিক সমাজের আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামন থেকে মিছিলটি বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে মসজিদুল হুদা মোড়ে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

ভারতের সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। ৬ ডিসেম্বর বিকালে নওগাঁর সদর উপজেলা আমতলী মোড় জামে মসজিদ এলাকায় তাফসিরুল কোরআন ও শানে রিসালাম সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান।

ভারতের আগরতলা হাই কমিশনে হামলা ও ভারতের সীমানা থেকে বাংলাদেশকে কটাক্ষ করে বিভিন্ন উগ্র বক্তব্যের প্রতিবাদে, বিলোনিয়া স্থলবন্দরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ০৪ ডিসেম্বর ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বিলোনিয়া স্থলবন্দরে এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েন ও উত্তেজনার মধ্যে  দুই দেশের পূর্বনির্ধারিত পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠক ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে চলছে। পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রির বৈঠকটি ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়