শিরোনাম
◈ সতর্ক সংকেত জারি, আজ বজ্রপাতে মৃত্যুর ঝুঁকি খুবই বেশি ◈ পলাতক সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা যুক্তরাজ্যে আ.লীগ নেতার ছেলের বিয়েতে  ◈ বিএনপির নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণ: বাম দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা ◈ হাথুরুসিংহে ও তার দুই সহকারী ‘নাসুমকে চড় মারা’ প্রসঙ্গে যা বললেন ◈ অ্যাঞ্জেলিনা জোলির সমর্থন গাজার প্রতি, ইসরায়েলি হামলাকে বললেন ‘গণকবরের মতো ধ্বংসযজ্ঞ’ ◈ গুরুতর অসুস্থ ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, হাসপাতালে ভর্তি ◈ প্রাইমএশিয়া শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যা: ৩ জন আটক ◈ টাঙ্গাইলের ৭০০ বছরের নওয়াব শাহী জামে মসজিদে ৯৮ বছর ধরে চলছে অবিরাম কুরআন তিলাওয়াত ◈ প্রধান উপদেষ্টার কাতার সফরে এলএনজি ও ভিসা ইস্যু ছাড়াও যেসব বিষয় গুরুত্ব পাবে ◈ প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র খুন: ১০-১৫ জন নির্দয়ভাবে পেটায় জাহিদকে, ঘটনার সূত্রপাত যেভাবে

প্রকাশিত : ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১১:২৬ দুপুর
আপডেট : ০৭ এপ্রিল, ২০২৫, ১০:০০ রাত

প্রতিবেদক : এল আর বাদল

বিসিবির প্রতিবেদন: চিন্ময় দাসের জামিন শুনানিতে আইনজীবী ছিলেন না কেন?

এল আর বাদল: সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় দাসের জামিন শুনানিতে মামলা, হামলা এবং প্রাণনাশের হুমকির মুখে কোনো আইনজীবীকে তার পক্ষে আদালতে দাঁড়াতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। জামিনের শুনানির জন্য চিন্ময় দাসকে আদালতে হাজির করা হয়নি।

এমন প্রেক্ষাপটে জামিন আবেদনের শুনানি এক মাস (২রা জানুয়ারি) পিছিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রামের মহানগর দায়রা জজ আদালত।

গত ২৬শে নভেম্বর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিনকে ঘিরে সংঘর্ষ, ভাঙচুর এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হওয়ার পরে করা এক মামলায় ৭০ জন হিন্দু আইনজীবীকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় মি. দাসের জামিন আবেদনকারী আইনজীবীকেও আসামি করা হয়েছে। এছাড়া তার পক্ষে আদালতে শুনানি করতে পারেন এমন হিন্দু জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরাও এসব মামলার আসামি।

চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলা এবং এ সংক্রান্ত কোনো মামলাগুলোতে যাতে কোনো আইনজীবী অংশ না নেন সে বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।

ফলে এসব মামলায় অন্য আসামিদের জামিনের পক্ষে যেসব আইনজীবী ওকালতনামা দিতে যাচ্ছেন তারাই এক ধরনের চাপ ও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিনের দাবি কোনো আইনজীবীর ওপর হুমকি বা নিরাপত্তাজনিত কোনো ধরনের সংশয় ছিল না এবং নাই।

ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো আসামির পক্ষে আইনজীবীকে লড়তে না দিলে তার আইনি অধিকার বিঘিœত হয়।

এদিকে, মি. দাসের গ্রেপ্তার ও আইনি অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেছেন, যারা অপরাধে অভিযুক্ত তাদেরও উপযুক্ত আইনি সুযোগ দিতে হবে এবং মৌলিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মি. প্যাটেল।

কেন চিন্ময় দাসের পক্ষে আদালতে আইনজীবী দাঁড়ায়নি?

রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের পর গত ২৬শে নভেম্বর চট্টগ্রামের সিএমএম কোর্ট জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে মি. দাসের অনুসারীদের বিক্ষোভের মুখে ওইদিন তাকে আদালত থেকে কারাগারে নিতে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগে।

এক পর্যায়ে সংঘর্ষে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহত হন। আহত হন অন্তত ৩০ জন। ওইদিনই চিন্ময় দাসের আইনজীবীরা এ আদেশের বিরুদ্ধে মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করে জামিন চায়। কিন্তু সেদিন শুনানি হয়নি। তেসরা ডিসেম্বর শুনানির দিন ঠিক করা হয়েছিল।

ওইদিন বিকেলে আইনজীবী আলিফ নিহতের বিষয়টি জানাজানি হলে পরবর্তী দুই দিন কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেয় চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি।

এসব প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে চিন্ময় দাসকে সব মামলায় আসামি করার দাবি জানানো হয়। আবার আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকেও আসামিদের পক্ষে কোনো আইনজীবী না দাঁড়াতে আহ্বান জানানো হয়। আইনজীবীদের গ্রুপেও এ বিষয়ে পোস্ট দেয়া হয়।

পরে পহেলা ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম আদালতের স্বাভাবিক বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর জানা যায় মি. দাসের জামিন শুনানির দিন তেসরা ডিসেম্বর মঙ্গলবার।

কিন্তু রোববার পুলিশের কাজে বাধাদানের অভিযোগে করা এক মামলায় একজন আসামি মুফতি আহমদ হোসাইনের আইনজীবী কাজী মফিজুর রহমান ওকালতনামা জমা দিয়ে তা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। কারণ হিসেবে জানা যায়, এ ঘটনার কোনো মামলায় আইনজীবীদের না লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনজীবী সমিতি।

এ বিষয়ে ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, যেহেতু ঐ তিন মামলায় ওকালতনামা না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তাহলে আমি ঐ ওকালত নামার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি এবং প্রত্যাহার করে নিচ্ছি।

বিবিসি বাংলাকে মি. রহমান বলেন, জামিন চাওয়া যদি অপরাধ হয় আমি বারের পেইজে বলছি যে তাহলে আমি জামিন চাইবো না ,প্রত্যাহার করে নিব।

ওকালত নামা দেয়াটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। বাংলাদেশের বার কাউন্সিলের রুলসে আছে। কেউ বাধা দেয় নাই, আজকে সকালে ফেসবুকে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে যে আমি আলিফ হত্যা মামলার মধ্যে ওকালতনামা দিয়েছি।

মি. রহমানের বক্তব্য অনুযায়ী, নিহত আইনজীবী আলিফ তারই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই। স্বার্থান্বেষী মহল এ বিষয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। কারণ যে মামলায় আসামির পক্ষে তিনি আইনজীবী হতে গিয়েছেন সেটি পুলিশের করা মামলা। আলিফ হত্যা মামলা পৃথক আরেকটি মামলা।

মি. রহমান জানান আইনজীবী হত্যা মামলায় সবাই হিন্দু আসামি, মুসলিম নেই। আর পুলিশের করা ভাঙচুর মামলায় মি. দাসকে আসামিও করা হয় নাই বলে জানান তিনি।

২৬শে নভেম্বরের ঘটনায় যেসব মামলা হয়েছে তাতে আসামিদের পক্ষে না দাঁড়াতে এক ধরনের চাপ রয়েছে কি না এমন প্রশ্নে এই আইনজীবী বলেন, “অবশ্যই, অবশ্যই। না হলে বার কাউন্সিলের রুলস এন্ড অর্ডারের মধ্যে একজন আইনজীবী আসামির পক্ষে ওকালতনামা দেবে এটা স্বাভাবিক। মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। আমিই নিরাপদ না, আমার স্ত্রী, আমার বউ, আমার বাচ্চা নিরাপদ না।

পুলিশের কাজে বাধাদানের এসব মামলায় ভিডিও দেখে শনাক্ত করে আসামি করতে পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সোমবার দোসরা ডিসেম্বরও একই ঘটনা ঘটে।

এদিন পুলিশের ওপর হামলার মামলায় দুই জন আসামি দেলোয়ার হোসেন এবং মো. নুরুর পক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর নেজাম উদ্দিনের নামে আদালতে ওকালতনামা জমা দেয়া হয়। পরে আইনজীবীদের বিক্ষোভের মুখে ওকালতনামা প্রত্যাহার করা হয়।

আইনজীবী না থাকা নিয়ে সনাতনী জোটের বক্তব্য
কেন আইনজীবীরা চিন্ময় দাসের মামলা লড়তে আদালতে ছিল না এর কারণ সম্পর্কে সম্মিলিত সনাতনী জোটের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি আইনজীবী সুমন কুমার রায় বিবিসি বাংলাকে বলেন, আইনজীবী ছিল না তা নয়, কোনো আইনজীবীকে আদালতে দাঁড়াতে দেয়া হয় নাই। সেখানে প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।

গত দুই দিন বিভিন্ন মামলায় আসামিদের পক্ষে আদালতে শুনানি করতে গেলে বাধার সম্মুখীন হয় আইনজীবীরা এবং সমাবেশ করে যারা লড়বে তাদের গণপিটুনি দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয় বলে দাবি করেন মি. রায়।এখানে তো প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। হুমকি নিয়ে সে কীভাবে দাঁড়াবে আদালতে। এর আগে হিন্দু আইনজীবীদের চেম্বারও ভাঙচুর করা হয়েছে, বলেন মি. রায়।

সবকিছু মিলিয়ে একটা ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে যে কোন আইনজীবী সেখানে দাঁড়াতে পারেনি বলে দাবি করেন মি. রায়।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়