শিরোনাম
◈ বাংলাদেশের মানুষ কারো দাদাগিরি পছন্দ করে না : জামায়াত আমির ◈ আসছে নতুন টাকা, বঙ্গবন্ধুর ছবির পরিবর্তে থাকছে ‘জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি’ ◈ ভারতকে শান্তিরক্ষী বাহিনীর সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ আসিফ মাহমুদের ◈ কমনওয়েলথ শুটিংয়ে স্বর্ণজয়ী সাদিয়া সুলতানা মারা গেছেন ◈ বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা অনেক নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে আছে: মাহমুদুর রহমান ◈ এক সময়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এখন বৈরী: বাংলাদেশ-ভারত ◈ এবার বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বিল বাবদ পাওনা ১৩৫ কোটি রুপি চাইল ত্রিপুরা ◈ ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ চেয়ে হাইকোর্টে রিট ◈ ৭ হাজার বাংলাদেশি গ্রেফতার মালয়েশিয়ায় ◈ আগরতলায় হাইকমিশনে সহিংস হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের তীব্র নিন্দা-প্রতিবাদ

প্রকাশিত : ০২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৯:১৮ রাত
আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:০৭ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অসভ্যতার চরম উদাহরণ দেখালো উগ্রপন্থী ভারতীয়রা

আগরতলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা, মমতার বক্তব্য, ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচারে তীব্র নিন্দা, বিক্ষোভের ডাক

মহসিন কবির: বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতে একের পর এক বিক্ষোভ হচ্ছে। এরই মধ্যে এবার আগরতলার অবস্থিত বাংলাদেশি সহকারী হাই কমিশনে হামলা হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশের লাল সবুজ পতাকা টেনে হিঁচড়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। ডাকা দেওয়া হয়েছে বিক্ষোভের। 

ভারতে বাংলাদেশ মিশনে হামলায় নাগরিক কমিটির নিন্দা জানিয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা মানে দেশের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত করা। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে ভারতের রাজনীতিবিদদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠানো নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বক্তব্য রেখেছেন তা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি স্বরুপ মন্তব্য করে অবিলম্বে এই ধরনের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সোমবার রাতে লন্ডন থেকে মুঠোফোনে গণমাধ্যমের কাছে বিএনপির পক্ষ থেকে তিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, সকালে কয়েকটি পত্রিকায় একটা সংবাদ দেখলাম, যে ভারতের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে মুখমন্ত্রী যে উক্তি করেছেন বাংলাদেশ সম্পর্কে, সে বিষয়ে আমি বক্তব্য না রেখে পারছি না। তিনি (মমতা বন্দোপাধ্যায়) যে উক্তি করেছেন বাংলাদেশে শান্তি বাহিনী প্রেরণের, এটা সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি একটা হুমকি স্বরুপ এবং আমরা মনে করি, এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নেতৃবর্গের যে দৃষ্টিভঙ্গি তা কিছুটা হলেও প্রকাশিত হয়েছে।
 
এ সময় বাংলাদেশের নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো উসকানির ফাঁদে আমরা পা দেবো না। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ বহু জাতির এই দেশে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বাস করছি। আমাদের এই সম্প্রীতির বাংলাদেশ রক্ষায় সবাইকে শান্ত ও ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করতে হবে।  

সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আগরতলায় বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে ভাঙচুর ও জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) দুপুরের দিকে এই ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার সময়কার কিছু ভিডিওতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলার পর তাতে আগুনও ধরিয়ে দিয়েছে।

কোলকাতা ২৪ এর খবরে বলা হয়, বিজেপি শাসিত রাজ্য ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় থাকা বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে আন্দোলনকারীরা আচমকা নিরাপত্তা বলয় ভেঙে ঢুকে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা খুলে নিয়ে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। 

খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভটি সার্কিট হাউসের মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্যের সামনে পৌঁছালে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে তার পুলিশি ব্যারিকেট ভেঙে বাংলাদেশি সহকারী হাইকমিশনারের অফিসে প্রবেশ করে। ঘটনার পরপরই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে যায়। পশ্চিম ত্রিপুরার এসপি ড. কিরান কুমা এবং ডিজিপি অনুরাগ ধানকার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। 

তবে এই হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সোমবার এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আগরতলায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের প্রাঙ্গণ ভাঙার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। কোনও অবস্থাতেই কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার সম্পত্তি লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। 

আগরতলায় বাংলাদেশি সহকারী হাই কমিশনে এর প্রতিবাদে রাজু ভাস্কর্যে রাত ৮টায় বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহবায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। সোমবার (২ ডিসেম্বর) সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ ঘোষণা দেন। পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ভারতের আগরতলাস্থ বাংলাদেশ উপহাই কমিশনে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল। সময়-রাত ০৮ টা, স্থান: রাজু ভাস্কর্য।

এদিকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের পাশাপাশি সেখানকার পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতিসংঘের শান্তিসেনা পাঠানোর প্রস্তাব করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার দুপুরে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার শীতকালীন অধিবেশনে যোগ দিয়ে মমতা বাংলাদেশে শান্তিসেনা পাঠানোর জন্য ভারত সরকারকে জাতিসংঘের সঙ্গে কথা বলার আর্জি জানিয়েছেন।

অপপ্রচার: আগরতলা থেকে ঢাকা হয়ে কোলকাতার পথে চলা একটি যাত্রীবাহী বাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুর্ঘটনায় পড়লেও ত্রিপুরার পরিবহনমন্ত্রী ও ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম এটিকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে জানায় পুলিশ।

ত্রিপুরার পরিবহনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাসটিতে হামলা হয়েছে দাবি করে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে তার এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট দিয়েছেন। তার সেই পোস্টের বরাত দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে এবিপি আনন্দ নামে ভারতের একটি সংবাদমাধ্যম।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপি মোহাম্মদ জাবেদুর রহমান রোববার দুপুরে তার কার্যালয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে ভারতের সংবাদমাধ্যম ও পরিবহণমন্ত্রীর দাবি প্রত্যাখান করে বলেন, “বাসের যাত্রীদের ওপর হামলার কোনো ঘটনা ঘটেনি। যানটি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল।”

সংবাদ সম্মেলনে শ্যামলী পরিবহনের বাসটির চালক আসাদুল হকও ছিলেন। ২০০৩ সাল থেকে আগরতলা থেকে ঢাকা হয়ে কোলকাতাগামী বাস চলাচল শুরু হয়।

এ রোডে চলাচল করা শ্যামলী পরিবহনের বাসটির চালক আসাদুল হকের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, ভারতীয় সময় শনিবার সকাল সাড়ে ৯টায় আগরতলা থেকে ছেড়ে আসা শ্যামলী পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসটি বেলা ১১টার দিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চান্দিয়ারা এলাকায় আসার পর একটি ট্রাক যাত্রীবাহী বাসটিকে পাশ কাটাতে যায়। তখন চালক ব্রেক কষে থামানোর চেষ্টা করলে বাসটি সড়কের একপাশে চলে যায় এবং সেখানে থাকা একটি তিন চাকার ভ্যানকে চাপা দেয়। এতে ভ্যানচালক ইব্রাহিম (৩০) সামান্য আহত হন।

এ নিয়ে ইব্রাহিম ও বাসচালক মো. আসাদুল হকের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
পরে স্থানীয় লোকজন ভ্যানচালক ইব্রাহিমকে সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। খবর পেয়ে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রেকারের মাধ্যমে ভ্যানটিকে উদ্ধার করে।

এ সময় শ্যামলী পরিবহনের কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি মেহেদী হাসান ও ভ্যান কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টির মীমাংসা হয়। পরে বাসটি ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

বাসে হামলা হয়নি জানিয়ে চালক আসাদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, বাসে থাকা ভারতীয় যাত্রীদের সঙ্গেও স্থানীয় সাধারণ মানুষের কোনো বাক্‌বিতণ্ডা বা ঝামেলা হয়নি। তিনি বলেন, “ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে বাসে হামলার খবর দেখে আমিও অবাক হয়েছি। ঘটনার পর থেকে ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দুর্ঘটনার বিষয়টিকে ‘হামলা’ বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।”

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘ভারতের মতো একটি বন্ধুপ্রতীম দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো হওয়ার কথা। এদেশের মানুষ কিন্তু ভারতবিরোধী নয়, তাই আমরা আশা করি আমাদের সঙ্গে যতটুকু ভুল বোঝাবুঝি আছে সেটা দূর হবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ধর্মীয় সংখ্যালঘু ইস্যুতে ঢাকায় বি‌ভিন্ন মিশনে দা‌য়িত্বরত বিদে‌শি কূটনী‌তিকদের ব্রিফ করেছেন। এতে অংশ নেন ভারত-পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি। সোমবার (২ ডিসেম্বর) বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এ সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। 

ব্রিফিংয়ে যোগ দেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মান, জাপান, চীন, কানাডা, সৌদি আরব, ইরান, সিঙ্গাপুর পাকিস্তানসহ একাধিক রাষ্ট্রের প্রতিনিধি। সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের প্রতিনিধিও।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশি হিন্দুদের সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা তৈরি করেছে ভারতীয় গণমাধ্যমের একাংশ। সেটি কূটনীতিকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে।  

ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের সংখ্যালঘু পরিস্থিতি নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানত ভারতীয় মিডিয়ায় অপপ্রচার চাালানো হচ্ছে। এর বাইরেও অনেক মিডিয়া ভারতীয় মিডিয়াকে উপজীব্য করে অপতথ্য ছড়াচ্ছে। তবে আমরা বলতে চাই, সব সরকারের আমলেই বছরে দুই-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। সরকারের কাজ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। আমরা সেটি করেছি। এরপরও দেশ ও দেশের বাইরে এ নিয়ে মিথ্যা তথ্য ও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।’

সরকারের অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমরা বার্তা দিতে চাই, বর্তমান সরকার সাম্প্রদায়িক কোনো অপতৎপরতা বরদাশত করবে না। আমরা হিন্দু-মুসলিম কোনো ভেদ করতে চাই না। কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা গেলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়