শিরোনাম
◈ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অস্থির ঢাকা, শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার ◈ কোনো শিক্ষার্থী নিহত হয়নি, অপপ্রচার থেকে বিরত থাকার অনুরোধ ডিএমপির ◈ শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে ফেরাতে হবে, না হলে দেশ অন্যদিকে চলে যাবে: মোল্লা কলেজের অধ্যক্ষ ◈ জরুরি সভা ডাকল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ◈ গণতন্ত্রকামীদের সর্তক থাকতে হবে, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা একসাথে যায় না: তারেক রহমান  ◈ নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন করলেন ডিএমপি কমিশনার ◈ শাহজালাল বিমানবন্দরে ইসকন নেতা চিন্ময় দাস গ্রেপ্তার ◈ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার নামে ঢাকায় জমায়েতের চেষ্টা, ফিরিয়ে দিল পুলিশ-শিক্ষার্থীরা (ভিডিও) ◈ মোল্লা কলেজের ক্ষয়ক্ষতির বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন অধ্যক্ষ (ভিডিও) ◈ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ নিয়ে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব

প্রকাশিত : ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ০৭:৫০ বিকাল
আপডেট : ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে অস্থির ঢাকা, শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার

মহসিন কবির: রাজধানীতে গত কয়েকদিন ধরেই আন্দোলন চলছে। দাবি আদায়ে প্রতিদিনই মাঠে নামছে কোন না কোন সংগঠন। কোন একটু ছুতা পেলেই রাস্তায় নামছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে পুরো শহর যানজটের নগরীতে পরিণত হচ্ছে। এখন সর্বত্র একটাই আলোচনা, কারা উসকানি দিয়ে রাস্তা দখল করে আন্দোলন করাচ্ছে। নাকি তাদের অন্য উদ্দেশ্য আছে। সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার।  

নিয়মিত আন্দোলন, সড়ক অবরোধ, সচিবালয় ঘেরাও এবং নানা দাবিতে শিক্ষার্থীদের সড়কে নামা যেন এখন রোজকার ঘটনা, যার ফলাফল অস্থিরতা বেড়েই চলেছে শিক্ষাঙ্গনে।

পুরান ঢাকায় হাসপাতালে কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জেরে ওই এলাকায় তুলকালাম কাণ্ড ঘটে। হাসপাতালসহ ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। পরীক্ষা চলাকালে সোহরাওয়ার্দী সরকারি কলেজে হামলা হলে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। কলেজটিতে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। হামলা-সংঘর্ষের সময় ওই এলাকায় এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়। 

এই হামলার জেরে সোমবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে পাল্টা হামলা করেছে কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের ছাত্ররা। কলেজের ভাবনে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন, কলেজের জানালার গ্লাস ভাংচুর করা হয়। পুরো ক্যাম্পাস এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়। এঘটনায় আহতও হয়েছেন বেশ কয়েকজন।  

এদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক ও মালিকদের বিক্ষোভ হয়েছে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় অনেক এলাকায়। এতে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। উচ্চ আদালত থেকে অটোরিকশা বন্ধের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করার দাবিতে অটোরিকশা চালকরা কয়েকদিন থেকেই এই আন্দোলন করছেন। 

অবশেষে ঢাকা মহানগর এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বন্ধে হাইকোর্টের আদেশের ওপর একমাসের জন্য স্থিতাবস্তা দিয়েছেন চেম্বার আদালত। সোমবার (২৫ নভেম্বর) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হকের আদালত এ আদেশ দেন।

কাওরান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ের সামনে দিনভর বিক্ষোভ করেছেন একদল লোক। তারা পত্রিকাটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলে এই কর্মসূচি পালন করেন। পত্রিকা কার্যালয়ের সামনে গরু জবাই করে ‘জিয়াফত’ এর আয়োজন করা হয়। দুপুর থেকে চলা এই অবস্থান ও বিক্ষোভ সন্ধ্যা পর্যন্ত গড়ায়। আন্দোলনকারীদের সরে যেতে বারবার অনুরোধ করেও সাড়া না পেয়ে সন্ধ্যার পর কঠোর অবস্থানে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা আন্দোলনকারীদের সরাতে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা অলিগলিতে সরে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। 

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা সম্পর্কে উচ্চ আদালত থেকে একটি ভালো নির্দেশনা আসবে বলে আশা করছি। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ করবো। 

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর পুলিশ ও সেনা সদস্যরা  আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। তখন আন্দোলনকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় টিয়ারশেলের আঘাতে একটি ছিন্নমূল শিশু আহত হয়। 

তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ও ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী। রোববার (২৪ নভেম্বর) রাত ১০টার পর বুটেক্সের আজিজ হল ও ঢাকা পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের লতিফ হলের শিক্ষার্থীর মধ্যে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। সংঘর্ষের কারণ সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া গেছে। কেউ বলছেন, টং দোকানে কথা কাটাকাটি থেকে এর সূত্রপাত। আবার কেউ বলছেন, পরিকল্পিতভাবে এক পক্ষ হামলা করেছে।

বাসে ওঠা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে গত বুধবার (২০ নভেম্বর) রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় সংঘর্ষে জড়ান ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। কার্যত অচল হয়ে পড়ে পুরো রাজধানীর সড়কপথ। এর ঠিক দুদিন আগেই সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে রেললাইন অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। ব্যাহত হয় রেল যোগাযোগ।

এ ছাড়া গত বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) হলের সিট বরাদ্দের জেরে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অচল হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। এমন নানা বাস্তবতায় ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলে সারা দেশের শিক্ষাঙ্গনেই চলছে অস্থিরতা। সবশেষ রোববার (২৪ নভেম্বর) থেকে তিন কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় হতবাক দেশবাসী। দিন পেরিয়ে রাত তবুও শেষ হয়নি সংঘর্ষ।
 
রাজধানীতে কবি নজরুল সরকারি কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ জড়ানো এবং ভাঙচুরের ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সোমবার বিকেলে নিজের ফেসবুক ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে তিনি বলেন, শত চেষ্টার পরও, বসে সমাধান করার আহ্বান জানানোর পরও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে জড়ানো থেকে আটকানো গেলো না।

শিক্ষার্থীদের কোনও ধরনের সংঘর্ষে না জড়িয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ধরনের সংঘাতের পেছনে কোনো ধরনের ইন্ধন থাকলে তা কঠোর হাতে দমন করা হবে। রাজধানীতে কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সোমবার এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে, সরকার তার প্রতি নজর রাখছে। আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের কোনো ধরনের সংঘর্ষে না জড়িয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়