মনজুর এ আজিজ: আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারেও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। সম্প্রতি গণমাধ্যমে পাঠানো এক অডিও বার্তায় এই ইঙ্গিত দেন তিনি।
তবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে আবারও বিদ্যুতের দামও বাড়ানো হবে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখনও তেল নির্ভর। তাই তেলের খরচ মেটাতে বাড়ানো হতে পারে বিদ্যুতের দাম।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি প্রায় ৬ থেকে ৭ মাস ধরে তেলের মূল্য ঊর্ধ্বগতি প্রচণ্ডভাবে। যে তেল আমরা ৭০ থেকে ৭১ ডলারের কিনতাম সেটা এখন ১৭১ ডলার হয়ে গেছে। এটা সবসময় বাড়তির দিকেই যাচ্ছে। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি যে, তেলের দামে অ্যাডজাস্টমেন্টে যাবো। আমরা নিজেদের অর্থে ভর্তুকি দিয়ে গেলেও একটা সময় অ্যাডজাস্টমেন্টে যেতেই হবে প্রাইসে।
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তেলের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তেলের দাম তারা সমন্বয় করেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কথাই বলি, বিভিন্ন তেলের ক্ষেত্রে তাদের প্রায় ৩৫ থেকে ৫০ টাকা ডিফারেন্স লিটারপ্রতি।
গ্যাস দিয়ে আমাদের ৬৪ শতাংশ বিদ্যুৎ চলে। বিদ্যুৎ খাতে আমরা গ্যাস বাড়ালেও খনিগুলো থেকে আমরা স্বল্প পরিমাণে গ্যাস পাচ্ছি। আর যেটা কমছে সেটা কমছে দ্রুত গতিতে। সেটাও আমরা প্রায় ১০ বছর থেকে বলে আসছি, আস্তে আস্তে গ্যাস কিন্তু ডিকলাইনের দিকে যাবে।
তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অনেক খরচ। আবার তেলের দামও বেশ বেড়ে গেছে। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ বেশি পড়ছে। তবে গ্যাস সঙ্কটে আপাতত তেল দিয়ে হলেও বিদ্যুৎ চাহিদা সচল রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে বিদ্যুতের দামও বাড়াতে হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বড় কথা হলো আমরা যে অ্যাডজাস্টমেন্টটা করতাম, যে ঘাটতিটা ছিল গ্যাসে সেটা আমরা ইমপোর্ট গ্যাস দিয়ে পূরণ করতাম। এর মধ্যে আমার দুটি ধারা, একটি হলো লংটার্ম কনট্যাক্ট, সেই প্রাইসটা ফিক্স করা। তুলনামূলক এই দামটা তেলের সঙ্গে ওঠানামা করে। আরেকটা হলো স্পট মার্কেট। এই মার্কেটের ডিমান্ড বেড়ে গেছে প্রচণ্ডভাবে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তেল এবং গ্যাসের দাম প্রচণ্ডভাবে এফেক্ট করেছে।
তিনি বলেন, ইউরোপের অধিকাংশ দেশ গ্যাস নেয় রাশিয়া থেকে। সেটা তারা এখন বন্ধ করে দিচ্ছে বলেই সব দেশ এই গ্যাসের ওপর (স্পট মার্কেট) প্রচণ্ডভাবে নির্ভরশীল হয়ে গেছে। এ কারণে যেটা চার ডলারের গ্যাস সেটা ৩০ ডলার হয়ে গেছে স্পট মার্কেটে। সেটা কিনতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অর্থের জোগান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই পরিমাণ অর্থ জোগান দেওয়া সরকারি ভর্তুকি দিয়েও সম্ভব হবে না।
আমরা যদি শুধু দাম বাড়াতেই থাকি তাহলে সাধারণ মানুষের ওপর প্রচণ্ডভাবে চাপ তৈরি হবে। আমি আগে থেকেই বলে আসছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন কিছু করবেন না যাতে সাধারণ মানুষের ওপর বোঝা হয়ে থাকে। এ কারণে আমরা গ্যাসে সামান্য পরিমাণ মূল্য সংযোজন করেছি। এখনও আমরা তেলে করিনি। আমি আশা করবো সকলেই বিষয়টি বুঝতে পারবেন আর ধৈর্য ধরবেন। এটা খুব সাময়িক।
আমাদের প্রচুর পাওয়ার প্ল্যান্ট আছে। কিন্তু গ্যাসের কারণে সেগুলোতে আমরা পাওয়ার জেনারেশন কমিয়ে দিয়েছি। আমরা প্রায়োরিটি দিয়েছি গ্যাসটাকে যে সার উৎপাদনে বেশি খেয়াল রাখবো আর ইন্ডাস্ট্রিতে গ্যাসটা বেশি দেবো। তাই সকলকেই গ্যাস-বিদ্যুৎ ও তেল ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে।
আপনার মতামত লিখুন :