মনিরুল ইসলাম : আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনে রাজনৈতিক দলের বিচারের বিষয়টি যুক্ত হচ্ছে না। ট্রাইব্যুনালে দল বা সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ রেখে সংশ্লিষ্ট আইন সংশোধনের প্রস্তাবনা তোলা হলেও ওই বিধানটি যুক্ত হয়নি। তবে সরকার চাইলে প্রচলিত আইনে বিদ্যমান দল বা সংগঠন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
বুধবার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এ কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, উপদেষ্টা পরিষদ আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) ১৯৬৩ সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এই আইনের বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহল থেকে অনেক সমালোচনা ছিল। আমরা একটি নিরপেক্ষ বিচার করতে চাই বলে প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এই সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছি।
তিনি জানান, এই আইন সংশোধনের আগে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দেশি বিদেশি আইনজীবী ও মানিবাধিকার সংগঠনের কাছে পাঠিয়েও মতামত নেওয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হলে এটি গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তবে উপদেষ্টা পরিষদে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়েছে। তা হচ্ছে, আমরা যে সংশোধনীর খসড়া করেছিলাম— সেখানে সংগঠনকে শাস্তি দেওয়ার বিধান ছিল। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বলা হয়েছিল— ট্রাইব্যুনাল প্রয়োজন মনে করলে কোনও সংগঠনকে শাস্তি দেওয়ার জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশ করতে পারবে। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বলা হয়েছে— আমরা এই বিচারকে অন্যকোনও বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত করতে চাই না। রাজনৈতিক দল বা কোনও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার প্রশ্ন আসলে এই আইনকে অযথাই প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আমরা সেই সুযোগ দিতে চাই না। আমরা ডিসেন্ট ও ফেয়ার ওয়েতে বিচারটা করতে চাই। এজন্য ওই প্রভিশনটা বাতিল করা হয়েছে।’
রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কোনও রাজনৈতিক দল বা সংগঠন তাদের অপরাধমূলক কার্যক্রমের জন্য নিষিদ্ধ করার প্রয়োজন হয় বা সমাজে দাবি ওঠে— এ বিষয়ে আমাদের অন্যান্য আইন হয়েছে। সেই সব আইনে নিষিদ্ধ করার বিধান আছে। সন্ত্রাস দমন আইনে রয়েছে। নির্বাচনি আইন রয়েছে। ১৯৭৮ সালের রাজনৈতিক দল আইন রয়েছে। কাজেই এই আইনে এই বিধানটা নেই দেখে আমাদের সেই সুযোগ আর থাকলো না, সেটা নয়। এটা যুদ্ধাপরাধ বিচার আইনে থাকলো না। কিন্তু অন্যান্য প্রচলিত আইনে রয়েছে। সেটার বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য হলে জনমত ও জনদাবি আসলে তাদের শ্রদ্ধা জানিয়ে পরে বিবেচনা করা হবে। এটা আইনের ভেতরে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার বিষয় নয়।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের দেশের আইনে শত শত বছর ধরে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। নতুন করে এটা করা হয়নি। আমাদের পেনাল কোডে বহু আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে। আমরা মৃত্যুদণ্ড বিলোপ সম্পর্কিত যে আন্তর্জাতিক কনভেনশন আছে— সেখানে বাংলাদেশ স্বাক্ষরকারী নয়। আমাদের আইনগত সংস্কৃতির সঙ্গে এটা সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আমরা আন্তর্জাতিক ফোরামকেও এটা স্পষ্টভাবে জানিয়েছি।
আপিলের সুযোগও বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
আপনার মতামত লিখুন :