আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকাল থেকেই ভীর ছিল গণমাধ্যম কর্মী, আইনজীবী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অনেকের। এদিন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়িত্ব পালন করা ৯ মন্ত্রী, বিচারক, সচিবসহ ১৩ জনকে হাজির করা হয়েছিল জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচারের জন্য। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে ট্রাইবুনালে আনা হয় সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীকে। এরপর ঢাকার পুলিশের গাড়িতে করে আনা হয় সাবেক মন্ত্রী দীপু মনিকে, তার কিছুক্ষণ পরেই আরেকটি গাড়িতে বাকীদের নিয়ে আসা হয়।
তারা হলেন- আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শাহজাহান খান, ফারুক খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, জুনায়েদ আহমেদ পলক। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান ও তৌফিক এলাহী। সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। সাবেক মন্ত্রী দীপু মনিকে কাঠগড়ার পাশে চেয়ারে বসানো হয়। অন্যদিকে অসুস্থতার জন্য সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাককে আজ হাজির করা হয়নি।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই ট্রাইব্যুনালের বিচারে জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ কয়েকটির রাজনৈতিক দলের সাবেক মন্ত্রী, এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের বিচার করা হয়।
যুদ্ধাপরাধের গঠিত শেখ হাসিনা সরকারের গড়া যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছিল, জুলাই-আগস্ট ‘গণহত্যার’ অভিযোগে সেই ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায়তেই দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীরা।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকালে হাইকোর্ট মাজার সংলগ্ন গেট দিয়ে তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। প্রথমে ট্রাইবুনালের হাজত খানায় রাখার পর তাদের সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে তোলা হয় ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায়। এরপর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত ট্রাইব্যুনালে হাসিনা সরকারের দুঃশাসনের চিত্র তুলে ধরেন। বিডিআর হত্যাকাণ্ড, ৫ মে শাপলা চত্তরে গণহত্যাসহ নানা অপরাধের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। বর্ণনা করেন জুলাই-আগস্টের চিত্র।
এ সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের টিনশেডর এজলাসে একসঙ্গে বসে ছিলেন আসামিরা। ১২ জন পুরুষ আসামি কাঠগড়ার ভেতরে বসলেও সাবেক মন্ত্রী দীপু মনি বসেন কাঠগড়ার বাইরে। টানা প্রায় দুই ঘণ্টা শুনানি করা হয়। এ সময় তারা পেছনে বসে সব কিছু দেখছিলেন। শুনছিলেন আইনজীবীদের সাবমিশন। ফাঁকে ফাঁকে একজন আরেকজনকে কথা বলতেও দেখা গেছে। পরে এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৭ ডিসেম্বর দিন নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ ওইদিন এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ঠিক করা হবে।
এদিন আসামি পক্ষে শুনানি করার জন্য ঢাকা বারের বিজ্ঞ আইনজীবী এহসানুল হক সমাজিসহ আরও বেশ কয়েকজন আইনজীবী এসেছিলেন আসামির পক্ষে শুনানি করতে। কিন্তু সঠিকভাবে লিখিত আবেদন উপস্থাপন না করায় তাদেরকে সময় দেওয়া হয়। আদালত বলেন, আপনারা লিখিত আকারে আসেন আমরা শুনব। পরে বেলা ১টার কিছু আগে বিচারকরা উঠে যান। এদিন আসামিদের সঙ্গে কথা বলার জন্য মৌখিক আবেদন করেন আইনজীবীরা। পরে ট্রাইব্যুনাল আদেশে বলেন, রেজিষ্ট্রারের মাধ্যমে আইনজীবীরা আজকে কিছু সময়ের জন্য আসামিদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবেন।
গত ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। যেখানে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পান হাইকোর্টের বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার। আর ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে নিয়োগ পান হাইকোর্টের বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এদিকে, গত ৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
অন্যদিকে, ১০ জন কর্মকর্তার সমন্বয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা পুনর্গঠন করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারাদেশে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের কয়েকশো অভিযোগ এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে। গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়।
এর আগে, গত ২৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ১০ মন্ত্রী, দুই উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি ও সাবেক এক সচিবকে হাজিরের নির্দেশ দেন। ঢাকা মেইল ও চ্যানেল২৪
আপনার মতামত লিখুন :