আইরিন হক, বেনাপোল(যশোর) প্রতিনিধি : বানিজ্য সম্প্রসারনে বেনাপোল বন্দর কার্গোভেহিকেল টার্মিনাল উদ্বোধন করা হয়েছে। অন্তবর্তীকালিন সরকারের নৌ-পরিবহন এবং শ্রমও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা ড.এম সাখাওয়াত হোসেন বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১ টায় ফিতা কেটে ও বেলুন উড়িয়ে টার্মিনালটির উদ্বোধন করেন। পরে তিনি বেনাপোল বন্দর অডিটোরিয়ামে বানিজ্যিক নেতাদের সাথে মত বিনিময় করেন।
সরকারী অর্থায়নে ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪১ একর জমিতে নির্মাণাধীন এই অত্যাধুনিক টার্মিনালটিতে দেড় হাজার ভারতীয় ট্রাক পার্কিংয়ের ধারণ ক্ষমতা, ব্রাক বিল্ডিং,টয়লেট কমপ্লেক্স,ফায়ার সার্ভিস,সিসি ক্যামেরা, রফতানি টার্মিনাল ও কেমিকেল শেডসহ নানান সুবিধা থাকছে। বানিজ্যিক সংশিষ্টরা বলছেন টার্মিনালটি চালুর পর বন্দর যেমন পণ্যজট ও যানজট মুক্ত হবে তেমনি বানিজ্যিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহুগুন বাড়বে।
প্রতিবছর ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যে বাণিজ্য হয়ে থাকে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে তার ৮০ শতাংশ হয় বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করে। বানিজ্যিক সুবিধা বাড়াতে ভারত অংশে বেশ আগে তাদের অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। তবে চাহিদা মতো বেনাপোল বন্দরের অবকাঠামো গড়ে না ওঠায়, স্বাভাবিক বাণিজ্য পরিচালনা নানাভাবে বিঘ্ন ঘটতো। দিনে ৭০০ এর অধিক ট্রাক পণ্য আমদানির চাহিদা থাকলেও জায়গার অভাবে ৪০০ ট্রাকের বেশি পণ্য আমদানি সম্ভব হতো না।৷ জায়গার অভাবে পণ্য খালাস করতে না দিনের পর দিন ট্রাক দাড়িয়ে থাকায় অর্থদন্ড ও শিল্পকরকারখানার উৎপাদন ব্যহত হতো। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের দাবি ছিল জায়গা অধিগ্রহণ করে বন্দর আধুনিকায়নের।
অবশেষে বাণিজ্যিক গুরুত্ব বিবেচনা করে সরকার ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৩২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু করে কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল নির্মাণ। কাজের শেষ মুহূর্তে পর পর তিন বার উদ্বোধনের দিন ঘোষনা করা হয়। তবে বৈশ্বিক মন্দা, সীমান্তে বিএসএফের বাঁধা এবং বৈশম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় পিছিয়ে যায় উদ্বোধন। অবশেষে সববাঁধা অতিক্রম করে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কাজ শেষের পর আজ টার্মিনালটি উদ্বোধন করা হয়। টার্মিনালটিতে একসঙ্গে ভারতীয় পণ্যবাহী ২ হাজার ট্রাক পার্কিং, ট্রাক চালকদের জন্য অত্যাধুনিক ৩ টা টয়লেট কমপ্লেক্স ও থাকা, খাওয়ার সু ব্যবস্থায় ব্লাক বিল্ডিং,ফায়ার সার্ভিস, কেমিকেল শেড থাকছে।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বারের পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, টার্মিনাল সুবিধায় পণ্যবাহী ট্রাকের ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এতে দুই দেশের মধ্যে বানিজ্য বৃদ্ধি ও সুসম্পক্য বাড়বে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের বন্দর বিষয়ক সম্পাদক মো: মেহেরুল্লাহ জানান,
টার্মিনাল চালুতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য গতিশীল ও সরকারের রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি পাবে।
বেনাপোল বন্দর পরিচালক মামুন কবির তরফদার জানান, কার্গো ভেহিকেল টার্মিনাল তৈরীতে বেনাপোল বন্দরে পণ্যের ধারন ক্ষমতা ৫৫ হাজার মেট্রিক টন থেকে বেড়ে তিন গুন বৃদ্ধি পাবে। এতে বন্দরে চলমান সমস্যার ৮০ শতাংশ সমাধান হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা বলেন, বেনাপোল বন্দরের দ্রুত পণ্যখালাস না হওয়ায় ভারতীয় ব্যবসায়ীদের নানান অভিযোগ ছিল। কার্গোভেহিকেল টার্মিনাল উদ্বোধনে এখন একসাথে ১৫০০ ট্রাক পার্কিং করতে পারবে। এতে বানিজ্য সহজিকরন ও গতিশীলতা বাড়বে। তিনি আরো বলেন, মাস্টার প্লানে বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ চলছে। খুব দ্রুত তার সুফল আপনারা দেখতে পারবেন। পাসপোর্টধারী যাত্রী হয়রানি বন্ধ করে নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করতে বন্দরকে তাগিদ দেন উপদেষ্টা।
আপনার মতামত লিখুন :