শিরোনাম
◈ ‘আমি দলের সমস্ত নেতাকর্মীদের ফেলে পালিয়ে যাই’, বিএনপির শোভাযাত্রায় ‘খাঁচায় বন্দি শেখ হাসিনা’ ◈ অন্তর্বর্তী সরকার 'এনজিও শাসিত' নয়, প্রমাণ দিলেন প্রেসসচিব ◈ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডারের বাংলাদেশ সফর ◈ চীন গেলেন  বিমান বাহিনী প্রধান  ◈ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের সঙ্গে মামলাও বাতিল হবে: আইন উপদেষ্টা (ভিডিও) ◈ আয়কর রিটার্ন  দাখিল বাধ্যতামূলক যাদের জন্য ◈ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কানপুর টেস্টে বাজে আউটফিল্ড, শাস্তি পেলো ভারতের মাঠ ◈ মিরাজের দাবি, পিচের কারণে প্রথম ওয়ানডে হেরেছে বাংলাদেশ ◈ নিজেদের মাঠে পাকিস্তানের কাছে ৯ উইকেটে হারলো অস্ট্রেলিয়া ◈ পিনাকী ভট্টাচার্যের সঙ্গে প্যারিসে উপদেষ্টা আসিফ

প্রকাশিত : ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ০৪:৪২ দুপুর
আপডেট : ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ০৯:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতায় তিন মাস

মহসিন কবির : অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস পূর্ণ হলো শুক্রবার (৮ নভেম্বর)। এই দিনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয়। সরকার গঠন করে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিছুটা সফলতা এসেছে। পুরো সফলতা আসতে সময় লাগবে। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে রাষ্ট্র মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছে। শেখ হাসিনার রেখে যাওয়া ১২ বিলিয়ন রির্জাভ ইতোমধ্যে ২০ বিলিয়নে উন্নিত হয়েছে। 

ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন, পুলিশ, আদালত, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, সংবিধানকে হাসিনা যেভাবে ফ্যাসিবাদে পরিণত করেছিল তা সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশন কাজ করছে এবং দ্রুতই তারা তা শেষ করে প্রস্তাব পেশ করবে। আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এটি অবশ্যই অন্যতম জনপ্রত্যাশা ও বিপ্লবের চেতনা বাস্তবায়নের একটি দিক। 

পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচারকাজ শুরু, সহিংসতায় অচল মেট্রোরেলের মিরপুর ১০ ও কাজীপাড়া স্টেশন চালু, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও আটটি জাতীয় দিবস বাদ দেওয়াসহ নানান কাজে ব্যস্ত ছিল অন্তর্বর্তী সরকার।

ড. ইউনূসের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোট ছাড়া অন্যান্য সব রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা প্রতিনিয়ত বৈঠক করছেন। সেখানে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা সাক্ষাৎ করেন। দলগুলোর প্রতিনিধিরা বৈঠকে রাজনীতিতে সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে তাদের বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, সংস্কার এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়েও আলোচনা চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে। সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। 

এছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে গত ৪ সেপ্টেম্বর সচিব সভা হয়। ওই সভায় তিনি সিনিয়র সচিবদের উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেন। 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বিশ্বজুড়ে তার খ্যাতি ও গ্রহণযোগ্যতার কারণে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, জার্মানি, চীন, মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে বিশ্বের ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলো ফোকলা হয়ে যাওয়া দেশের অর্থনীতি পুনর্গঠনে যেভাবে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে, শুধুমাত্র ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারণে। 

এই সরকার যদি মনে করে, সে আরও সময় নিয়ে দেশ পুনর্গঠনের কাজ করবে, তাহলে তাকে সবার আগে অর্থনীতিকে শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে হবে। এজন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গণের প্রতিশ্রুত অর্থ আনার ব্যবস্থাসহ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। 

এতে চাকরির বাজার চাঙা হবে। মানুষের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধি পাবে। ইতোমধ্যে অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর হাসিনার লুটপাটে ধ্বংস হওয়া ব্যাংক খাত সংস্কার করে সুশৃঙ্খল অবস্থায় আনতে পেরেছেন। 

অন্যদিকে, ভারত হাসিনাকে দিয়ে যেভাবে বাংলাদেশকে তার করদরাজ্যে পরিণত করেছিল, সে অবস্থা থেকে অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে বের করে আনতে পেরেছে। এটা এ সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য। 

অন্যান্য দেশের সাথে সম্মানজনক অবস্থানের মাধ্যমে ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে বিশ্বে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অসামান্য গ্রহণযোগ্যতার কারণে। 

অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাসে যেমন ব্যর্থতা রয়েছে, তেমনি সাফল্যও আছে। তবে যে ব্যর্থতা অমার্জনীয় হয়ে উঠেছে, তা হচ্ছে, নিত্যপণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে না পারা। হাসিনার আমলে মানুষের জীবনযাপন যে কষ্টের মধ্যে ছিল, এখনও সেই অবস্থার মধ্যে রয়ে গেছে। স্বস্তির মধ্যে থেকে দুবেলা খাওয়ার মতো সুবিধা করে দিতে পারেনি সরকার। 

যদিও সরকার আমদানি করা খাদ্যপণ্যের উপর থেকে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার, টিসিবির মাধ্যমে ট্রাকে করে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করেছে, তারপরও নিত্যপণ্যের দাম কমেনি। সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধির জন্য দায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করে নির্মূলের কথা বললেও কাজ হচ্ছে না। জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। 

অস্বীকার করার উপায় নেই, ভয়াবহ বন্যা, ঝড়-বৃষ্টির কারণে কৃষিপণ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদন খরচও বৃদ্ধি পেয়েছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির এটিও অন্যতম কারণ। তবে কারণ যাই থাকুক না কেন, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে এবং যেভাবেই হোক তা নিয়ন্ত্রণ করবে। এ কাজটি সরকার করতে পারেনি। ফলে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও অসন্তোষ রয়েই গেছে। 

অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাসের অর্জন কী? এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, তিন মাসে এ সরকার যথেষ্ট অর্জন করেছে। তারা সিনসিয়ার ছিল, কোনো কেলেঙ্কারির কথা শুনেছেন? আমরা বলতে পারি, মোটাদাগে ৫টা কাজ হয়েছে।

স্মুথ একটা ট্রানজিশন হয়েছে। একটা ভঙ্গুর অবস্থা থেকে ইকোনমিক রিকভারি হয়েছে। ম্যাসিভ গ্লোবাল সাপোর্ট পেয়েছি আমরা। রিফর্ম এবং ইলেকশনের একটা রোডম্যাপ দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করে রিফর্ম কতটুকু করা হবে এবং সে অনুযায়ী ইলেকশনের ডেট ঠিক হবে। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি, বন্যা, গার্মেন্টসে অশান্তিসহ অনেকগুলো ক্রাইসিস ছিল। এ ক্রাইসিসগুলো থেকে উত্তরণে, কতটা ভালোভাবে মোকাবিলা করা যায় সে চেষ্টা করেছে সরকার।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

কিছু সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিলের বিষয়ে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, এটি তথ্য মন্ত্রণালয় করেছে। তাদের ব্যাপারে অবশ্যই কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ ছিল, তার ভিত্তিতে তারা এটা করেছে। গত ১৫ বছরে আমরা অনেক সাংবাদিকের রোল দেখেছি। তারা স্বৈরাচারের কণ্ঠস্বর ছিলেন। তারা আরেকজনের ভয়েস কেড়ে নেওয়ার ব্যাপারে গ্রাউন্ড তৈরি করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে অনেক সাংবাদিক ভায়োলেন্স ইনস্টিগেট করেছেন। এগুলো নিয়ে তো ইনভেস্টিগেট হওয়া উচিত। সংবাদপত্র বা টেলিভিশনের স্বাধীনতা খর্ব করার মতো কোনো কাজ সরকার করছে না।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়