শিরোনাম
◈ মামলা থেকে নাম বাদ দিতে বিএনপি নেতার ১ লাখ টাকা দাবি, অডিও ভাইরাল ◈ আর নয় জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্ব ◈ বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলে নীতিগত সিদ্ধান্ত ◈ বায়তুল মোকাররমে তাবলিগের দু’পক্ষের বাকবিতণ্ডা-মারামারি ◈ আমরা একে অপরের ভাই, মিলেমিশে থাকা উচিত, আমরা একসঙ্গে থাকব : আদালতে আমির হোসেন আমু ◈ ক্লাব বিশ্বকাপের আগে দলবদলের সুযোগ দেবে ফিফা ◈ আমির হোসেন আমু ৬ দিনের রিমান্ডে ◈ ট্রাম্পের কট্টর সমালোচক থেকে ভাইস প্রেসিডেন্ট, কে এই জেডি ভ্যান্স? ◈ যাত্রী সেজে চালককে হত্যার পর অটোরিকশা ছিনতাই, গ্রেপ্তার ৩ ◈ সাবেক মন্ত্রী আমুর আইনজীবীকে মেরে বের করে দিলেন আইনজীবীরা (ভিডিও)

প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ০১:৫১ দুপুর
আপডেট : ০৭ নভেম্বর, ২০২৪, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : মনিরুল ইসলাম

আমরা বিশ্বের কাছে যাব না, বিশ্ব যেন আমাদের কাছে আসে: প্রধান উপদেষ্টা

মনিরুল ইসলাম : অন্তবর্তীকালীন  প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বিপ্লবের ফসল আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার। বিপ্লবের মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষক সমাজ তাদের চিন্তার স্বাধীনতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে আবার ফিরে পেয়েছেন।

তিনি বলেন,  প্রয়োজনীয় সব সংস্কার করতে, এর উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টির সব প্রয়াস নিতে প্রস্তুত আছে। এই কাজে নিবেদিত সবার কাছ থেকে চাহিদা ও পরামর্শ চাই।

বৃহস্পতিবার  সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বোস-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য’ শীর্ষক শতবর্ষ উদযাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগ এবং বোস সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি অ্যান্ড রিসার্চ ইন ন্যাচারাল সায়েন্সেস যৌথভাবে দুই দিনব্যাপী আয়োজন করেছে।

সংস্কারের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আস্থা থাকলে এটি আমরা পারবো, কেন পারবো না? যেমন-সত্যেন্দ্রনাথ বসুর আস্থা ছিল বলেই তিনি সম্পূর্ণ অপরিচিত হয়েও আইনস্টাইনকে চিঠি লিখতে পেরেছিলেন। সব সময় আমাদের যেন বিশ্বের কাছে যেতে না হয়, বিশ্ব যেন আমাদের কাছে আসে। আমাদের তরুণদের মনে বিশ্বাস সৃষ্টি করতে হবে যে তারাই বিশ্ব। আজ আমরা সেই আকাঙ্ক্ষারই শতবার্ষিকী পালন করছি।

 মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সেই শান্ত শহরকে, সেই সবুজ রমনাকে আর ফেরত আনা যাবে না। কিন্তু আজকের নতুন বাংলাদেশে সেই গৌরবের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা অবশ্যই ফেরত আনতে পারি। বোস-আইনস্টাইন তত্ত্বের শতবার্ষিকীতে এ কথা আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই।’

তিনি বলেন, বিপ্লবের মাধ্যমে ছাত্র-শিক্ষক সমাজ তাদের চিন্তার স্বাধীনতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চাকে আবার ফিরে পেয়েছেন। এর সঙ্গে এখন বিশ্ব-বিজ্ঞানে অবদান রাখার সক্ষমতাকেও যোগ করতে হবে। আকাঙ্ক্ষাকে উচ্চে রেখে দৈনন্দিন পঠন-পাঠন গবেষণার মাধ্যমেই সেটি অর্জিত হয়। ১৯২৪ সালে বসুর আবিষ্কারের পরিবেশ সেভাবে গড়ে উঠেছিল, আজও সেভাবেই গড়ে উঠবে, এর কোনও বিকল্প নেই।

বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১৯২৪ সালের বোস-আইনস্টাইন কোয়ান্টাম স্ট্যাটিসটিক্সের আবিষ্কারের জন্য বিজ্ঞান ইতিহাসের অংশ হয়ে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তিনি এটি করেছিলেন, আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নবীন অধ্যাপক হিসেবে কার্জন হলের একটি কামরায় বসে। আজও যেটি পদার্থবিদ্যার ছাত্র-শিক্ষকদের প্রাণচাঞ্চল্যে মুখরিত। আবিষ্কারের গুরুত্বের কারণে পৃথিবীর নানা দেশের পদার্থবিদরা এই শতবার্ষিকী উদযাপন করছেন। কিন্তু আমাদের জন্য এই আবিষ্কারের মর্মটাই আলাদা। পদার্থবিদরা বলেন, বিংশ শতাব্দীর ওই পর্যায়ে পদার্থবিদ্যায় যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছিল কোয়ান্টাম থিওরির মাধ্যমে, এটি ছিল তার মধ্যে একটি বড় সংযোজন। এর মাধ্যমে বসু বিশ্ববিজ্ঞানের মানচিত্রে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, আমাদের ঢাকা নগরীকে উজ্জ্বলভাবে চিহ্নিত করে দিয়েছিলেন।

ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দেশকে নতুনভাবে গড়ার প্রয়াসের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়কে তার যথাযথ চর্চার জায়গায় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছি। তখন পরিবর্তনের নির্দেশিকা হিসেবে উদযাপনের জন্য বসুর আবিষ্কারের এই শতবার্ষিকীর থেকে যথাযথ বিষয় আর কী হতে পারে? আমাদের বিপ্লবের নায়ক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রেরণা হিসেবেও বা এর থেকে বড় গৌরবের স্মরণও আর কী হতে পারে?’

অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যেসব খ্যাতনামা বিজ্ঞানী বোস-আইনস্টাইন তত্ত্বের অগ্রগতির ওপর বিশ্বময় কাজ করছেন, তাদের কয়েকজন আমাদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এবং সত্যেন্দ্র নাথ বসুর আবিষ্কার-স্থানটির প্রতি তাদের আগ্রহের পরিচয় দিয়ে এই সম্মেলনে শরিক হয়েছেন। তাদের ধন্যবাদ জানাই। মনে রাখতে হবে, এ সময় এই আবিষ্কারের উদযাপন দুনিয়ার অন্যত্রও ঘটছে, তারা আমাদের সম্মেলনে এসেছেন। বসুর কীর্তির ঢাকা শহরে, বিপ্লবের পুনর্জাগরণের ঢাকা শহরে, তাদের স্বাগতম।’

বোস-আইনস্টাইন কোয়ান্টাম স্ট্যাটিসটিক্স থিউরি শনাক্তের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বিশ্ববিজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত বসু কিন্তু ঢাকা থেকে হারিয়ে যাননি। বাকি সময় এখানে কাটালেন গবেষণায় ও নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা বিভাগের কাণ্ডারি হিসেবে বিভাগের উন্নয়নে। আনলেন বহু সুযোগ্য সহকর্মী, তাত্ত্বিক মানুষ হয়েও নিজের হাতে ল্যাবোরেটরি গড়ার কাজে মন দিলেন। অনেক যন্ত্র নিজেই তৈরি করেছেন।’

বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু সর্বস্তরসহ উচ্চতর বিজ্ঞান শিক্ষায় বাংলা ভাষা প্রচলনের জন্য তর্ক-বিতর্ক করছেন উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলায় বই লিখছেন, পত্রিকা বের করছেন, নিজের পাঠদানে বাংলা ব্যবহার করছেন। শহরের সাহিত্যানুরাগী সংস্কৃতিসেবীদের কয়েকজনকে নিয়ে নিয়মিত বৈঠকি আড্ডা গড়ে তুলেছেন।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন– শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, বোস ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেস (এসএনবিএনসিবিএস) কলকাতার সাবেক অধ্যাপক পার্থ ঘোষ প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়