শিরোনাম

প্রকাশিত : ২৬ অক্টোবর, ২০২৪, ১২:৩২ দুপুর
আপডেট : ২৬ অক্টোবর, ২০২৪, ০৭:০০ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অবৈধভাবে ভারতে পাড়ি দেয়ার হটস্পট’ ঝিনাইদহের ১০ কিলোমিটার সীমান্ত

ডেস্ক রিপোর্ট : ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তের ওপারে ভারতের নদীয়া জেলার হাসখালী ও উত্তর চব্বিশ পরগনার বাগদা থানা। ৭৮ কিলোমিটার সীমান্তের ৬৮ কিলোমিটারে রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। বাকি ১০ কিলোমিটারে কেবল ছোট ছোট সীমানা পিলার। অরক্ষিত এ অংশ দিয়েই প্রতিবেশী দেশটিতে চলে অনুপ্রবেশ। টাকার বিনিময়ে এ কাজে সহযোগিতা করতে রয়েছে স্থানীয় কয়েকটি চক্র। সীমান্ত পার হওয়ার সময় অনেকে ধরাও পড়েন। গত দুই মাসে আটক হয়েছেন ৩৫০ জন। তাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলও রয়েছেন।


ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর থেকেই আত্মগোপনে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও এমপিরা। সুযোগ বুঝে কেউ কেউ সীমান্ত পার হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশে নিজেদের ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। পরে সীমিত পরিসরে কার্যক্রম শুরু হলেও চিকিৎসা এবং যাদের জরুরি প্রয়োজন, তাদের বাইরে ভিসা মিলছে না। তাও আবার এসব ভিসা নিতে হচ্ছে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশন থেকে।

ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলোও বলছে, বাংলাদেশীদের জন্য এখনই পর্যটন ভিসা চালু করছে না ভারত। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাও বিষয়টি এক রকম খোলাসা করেছেন। পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সঙ্গে গত রোববার বৈঠক শেষে তিনি বলেন, ‘এখন যাদের জরুরি প্রয়োজন, তাদের ভিসা দেয়া হচ্ছে। কারণ আমাদের লোকবল কম। তবে এখন যাদের জরুরি, তাদের মেডিকেল ভিসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ভারতে গিয়ে তৃতীয় কোনো দেশের ভিসার আবেদন যারা করছেন, তাদের আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। লোকবল কম থাকায় বাংলাদেশীদের জন্য ভারতীয় পর্যটন ভিসা দেয়ার কার্যক্রম এখনই স্বাভাবিক হচ্ছে না।’

ভিসা না পেয়ে অনেকেই বেছে নিচ্ছেন অবৈধ পথ। দ্বারস্থ হচ্ছেন অরক্ষিত সীমান্ত ঘিরে সক্রিয় থাকা চক্রের। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, দুই মাসে ঝিনাইদহের মহেশপুর সীমান্তে তিন শতাধিক বাংলাদেশীকে আটক করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর মধ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও খুলনা-৫ আসনের সাবেক সংসদ নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ৬ অক্টোবর আটক হন। ভারতে আশ্রয় নেয়ার উদ্দেশে তিনি মহেশপুর সীমান্তে অবস্থান করছিলেন। এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মেহেদী হাসান চৌধুরীসহ পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। ঝিনাইদহ শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় একটি প্রাইভেট কার থেকে তাদের আটক করা হয়। তাদের মধ্যে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও গাজীপুর মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক রিয়াজ মাহমুদ, তার আত্মীয় সানোয়ার হোসেন ও মানিকগঞ্জ জেলা যুবলীগের সদস্য সৌমিত্র সরকারও ছিলেন। মহেশপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালানোর উদ্দেশে তারা ভাড়া করা প্রাইভেটকারে ঢাকা থেকে রওনা হয়েছিলেন। সীমান্তে থাকা চক্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেই তারা এসেছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। মহেশপুরের যাদবপুর, মাটিলা, সামন্তা, পলিয়ানপুর, বাঘাডাঙ্গা, খোশালপুর, শ্যামকুড়, শ্রীনাথপুর, কুসুমপুর ও লড়াইঘাট সীমান্ত এলাকায় বিজিবির ১২টি ক্যাম্প রয়েছে। গত আড়াই মাসে এসব সীমান্ত থেকে আটক করা হয়েছে ২০ পাচারকারীসহ ৩৫০ জনকে। সীমান্তরক্ষী বাহিনীটির দাবি, অবৈধ প্রবেশ রোধে সীমান্তে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি। কোনো অপরাধী যেন ভারতে পাড়ি দিতে না পারে সেজন্য টহলও জোরদার করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকার সড়কগুলোয় প্রতিনিয়তই করা হচ্ছে তল্লাশি। সেই সঙ্গে স্থানীয়দেরও সচেতন করছেন বিজিবি সদস্যরা।

মহেশপুরের খালিশপুর বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, লে. কর্নেল শাহ মো. আজিজুস শহীদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘এ অঞ্চলের ৭৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকার ৬৮ কিলোমিটারে কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। ১০ কিলোমিটার সীমান্ত অনেকটা উন্মুক্ত। মাঠ-ঘাট, নদী-নালা রয়েছে বাংলাদেশের এ অংশে। অনুপ্রবেশ শতভাগ বন্ধ করতে না পারলেও তা প্রায় কাছাকাছি। বিজিবির নজরদারি পদ্ধতির বদল করা হয়েছে, যার সফলতাও এরই মধ্যে আসতে শুরু করেছে।’

স্থানীয়রা বলছেন, মহেশপুর সীমান্তে বিজিবির হাতে আটক হওয়ার কয়েক গুণ বেশি মানুষ প্রতিনিয়ত ভারতে যাচ্ছে। দালাল চক্রের মাধ্যমে রাতের আঁধারে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হটস্পট হিসেবে পরিচিত সীমান্তে আসছে। লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে চলে যাচ্ছে ভারতে।

১৯৭৩ সালের বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধ্যাদেশ আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশীরা পাসপোর্ট ছাড়া সীমান্ত অতিক্রম করার সময় আটক হলে মামলা করে থানায় দেয়া হয়। এ আইনে তিন মাস সাজা অথবা ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। ভারতীয় বা অন্য দেশের নাগরিক সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে এসে আটক হলে দ্য কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্ট-১৯৫২ আইনে মামলা হয়। এ আইনে এক বছরের কারাদণ্ডের বিধান থাকলেও জরিমানার পরিমাণ উল্লেখ নেই। দুটি মামলাই জামিনযোগ্য। আইনজীবীরা বলছেন, লঘু দণ্ডের কারণে আসামিরা সহজেই ছাড়া পেয়ে যায়।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা আইনজীবী পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুল্লাহ মিন্টু  বলেন, ‘দুটি আইনেই অপরাধীর সাজা ও জরিমানা কম এবং জামিনযোগ্য। এ কারণে আসামি ধরা পড়লেও জামিনে বেরিয়ে আসে। অনেক ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের ধরতে নিরুৎসাহিত হয়। তাই আইন সংশোধন করে জরিমানা ও সাজার মেয়াদ বাড়ানো জরুরি। সংশোধন করে সীমান্তসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। আইনের মাধ্যমে মানুষকে সাজা দেয়ার মানে হলো নজির স্থাপন বা ভীতি সঞ্চার করা, যাতে অপরাধীরা ভয় পায় এবং অপরাধমূলক কাজ থেকে বেরিয়ে আসে।

সুত্র : বনিক বার্তা

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়