শিরোনাম

প্রকাশিত : ১০ জুলাই, ২০২২, ০৬:৩০ বিকাল
আপডেট : ১১ জুলাই, ২০২২, ০১:০৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

ঈদেও যারা অফিস করেন

সাংবাদিক

স্পেশাল ডেস্ক: সরকারি বেসরকারি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে, যাদের বছরের প্রতিটি দিন অফিস খোলা রাখতে হয়। কাজ করতে হয়। সাধারণত দুই ঈদে দুই ভাগে ছুটি পান এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। কিন্তু বিভাগীয় প্রধানদের কোনো ছুটি নেই, নিতে চাইলে নেওয়া যায়, কিন্তু দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে এই কর্মকর্তারা ছুটি নেন না।

ঈদের দিনে যারা অফিস করছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন আমাদের রিপোর্টার শাহীন খন্দকার, জেরিন আহমেদ, সুজন কৈরী ও সুমাইয়া মিতু। 

সংবাদকর্মী: গ্লোবাল টেলিভিশনের সিইও এবং এডিটর ইন চিফ সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা। ঈদের দিনে কাজ করার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জন্য এটা তো নতুন নয়। সেই ১৯৯৯ সাল থেকে প্রতি ঈদেই কাজ করি। ভালো লাগে সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হয়। সবাই সাজগোজ করে আসে। সবাই উৎফুল্ল থাকে, আনন্দের মধ্যে থাকে। আর তাছাড়া বাসায়ও যারা থাকে তাদের জন্যে যে অনুষ্ঠান উপহার দিতে পারি, তারা আনন্দ পায়, এটাও ভালো লাগে।

সাংবাদিক

সাংবাদিকদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। এটি একাগ্রতার সঙ্গে করতে হবে। লেখা ও বলার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। মানুষের পারসপেক্টিভ চিন্তা করে সাংবাদিকতা করতে হবে।

এটিএন নিউজের বার্তাপ্রধান মুন্নি সাহা। তিনি বললেন, ঈদের দিনতো আর কাজ করা নিষেধ না। সবাই ঈদে আনন্দ করে, আমিও আমার কাজের মাধ্যমে আনন্দ করছি।

‘আমাদের নতুন সময়’-এর সখিনা খালা এবার ঈদে বাড়ি না গিয়ে অফিসে ডিউটি করছেন। ঈদে বাড়ি না যাওয়া প্রসঙ্গে তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে ঈদ করতে ভালোই লাগছে, তবে বাড়ি ও পরিবারের কথা খুব মনে পড়ছে। কয়েকদিন পর বাড়ি গিয়ে সবার সাথে দেখা করে আসব।

চিকিৎসক

চিকিৎসক : রাজধানীর শ্যামলী ২৫০ শয্যার টিবি ও অ্যাজমা হাসপাতালের ডা. প্রবীর কুমার সরকার বলেন, ঈদেও কিন্তু অসংখ্য মানুষ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আসেন। সেক্ষেত্রে আমরা যারা ডিউটিতে থাকি, আমাদেরকেই রাতদিন এক করে কাজ করতে হয়।

যদিও আমাদের উপর চাপটা বেশি যায়, তারপরও মুসলিম সহকর্মীদের ঈদ উদযাপনের সুযোগ করে দিতে পেরে নিজেদের মধ্যে আলাদা একটা প্রশান্তি কাজ করে।

তিনি বলেন, আমরা বিষয়টিকে খুবই স্বাভাবিকভাবে নেই। কারণ আমাদের যখন উৎসব থাকে, তখন তারাও আমাদেরকে সাপোর্ট দেয়।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স

ফায়ার সার্ভিস : ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান শিকদার ঈদের দিন সকালে নামাজ আদায়ের পর গ্রামের বাড়ি গেছেন মাকে দেখতে। সেখানে কিছুক্ষণ থেকে আবারো ফিরেন ঢাকায় কর্মস্থলে। 

তিনি বলেন, কোনো ঈদে ছুটি পাই, কোনো ঈদে পাই না। এবারও পাইনি। আমার মা’র শারীরিক অবস্থা ভাল থাকেনা। ঈদের দিন ইচ্ছে হলো মা’র সঙ্গে দেখা করার। তখন আমার সিনিয়র কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে একজন সহকর্মীকে আমার স্থানে রেখে কিছু সময়ের জন্য মায়ের কাছে এসেছি। 

শাহজাহান বলেন, আমাদের দায়িত্বটাই চ্যালেঞ্জিং। এটা মেনে নিয়েই এই অধিদপ্তরের যোগদান করেছি। আর এখনতো অভ্যস্ত হয়ে গেছি। মানুষের সেবার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখার বিষয়টিও আনন্দের। 

পুলিশ

পুলিশ : ডিএমপি’র অতিরিক্ত উপ কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর আলম এবার ঈদে ছুটি পাননি জানিয়ে বলেন, বাড়ি যাওয়ার খুব ইচ্ছে থাকলেও ছুটি না পাওয়ায় যাওয়া হলোনা। আসলে পুলিশের চাকরিটাই চ্যালেঞ্জিং। বাড়ি যেতে না পারলেও জনসেবায় কাজ করতে পেরে খুব ভাল লাগছে। 

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে দায়িত্বরত পল্টন থানার এএসআই মোহাম্মদ জলিলুর রহমান জানান, তার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় ছুটি পাননি তিনি। 

তিনি বলেন, এটা আমাদের দায়িত্ব, তারপরও একটু কষ্ট তো থাকেই। আমার সামনে দিয়ে দেখা যায় একজন তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে নামাজে এসেছেন। আর আমার বাচ্চাটা বাসায়, তখন খারাপ লাগে। তবুও দেশের স্বার্থে, জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা দায়িত্ব পালন করি। ঈদে তো সবাইকে ছুটি দেওয়া সম্ভব হয় না। আমি দুই ঈদেই ছুটি পাইনি। যখন মানুষ আমাদের এ সেক্রিফাইসকে মূল্যায়ন করে তখন অনেক ভালো লাগে। মানুষের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিই।

পল্টন মডেল থানার এসআই আসাদুজ্জামান মাসুম বলেন, মানুষের নিরাপত্তা দেওয়া আমার দায়িত্ব, এটা তো করতেই হবে। পরিবার ছাড়া ঈদ পালনতো কখনই সুখকর নয়। কিন্তু পেশাগত কারণে দায়িত্ব পালন করতেই হয়। ঈদে তো সবাই ছুটি পাবো না। ঈদুল ফিতরেও আমি ছুটি পাইনি। সব পরিবারই তো চায় তার সন্তানের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে। কিন্তু যেহেতু এখন এ পেশায় আছি, তাই তারাও অভ্যস্ত হয়ে গেছেন।

তিনি আরো বলেন, ঈদের নামাজ আমরা ধাপে ধাপে আদায় করি। মূলত প্রথম জামাতেই মানুষ বেশি নামাজ পড়েন। আর কোরবানির ঈদে মানুষ প্রথম জামাতে নামাজ পড়ার চেষ্টা করেন, নামাজ শেষে তারা পশু কোরবানি করেন। যেহেতু বায়তুল মোকাররমে পাঁচটি জামাত হয়, তাই আমরা ধাপে ধাপে নামাজ আদায় করি।

নিরাপত্তা কর্মী

নিরাপত্তা কর্মী : অন্যান্য দিনের মতো ঈদের দিনও দায়িত্ব পালন করছেন নিরাপত্তা কর্মীরা। ঈদ বলে বাড়তি কোনো আগ্রহ বা উচ্ছ্বাস নেই তাদের। কর্মস্থলে কেউ কেউ একা অথবা কয়েকজন মিলে গল্প করে ঈদের দিন পার করছেন। লোক কম থাকায় কারো কারো ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দনিয়া উপশাখায় দায়িত্ব পালন করা সিকিউরিটি গার্ড এতোয়া বলেন, তিন শিফটে কাজ করতে হয় তাদের। সনাতন ধর্মাবলম্বী এতোয়া ছাড়াও সকালের শিফটে আছেন আরো দুইজন। ঘুম পাওয়ায় কলাপসিবল গেটে তালা দিয়ে কফি কিনতে বের হয়েছিলেন। ঈদের দিন হওয়ায় হাতেগোনা দু-একটা ছাড়া প্রায় সব দোকান বন্ধ। একটা দোকানে মিনিপ্যাক কফি ঝুলছিল। সেটাই কিনলেন। 

নওগাঁর বাসিন্দা এতোয়া বলেন, ঈদ মানে তো ছুটি, পরিবারের সঙ্গে আনন্দ করা। কিন্তু আমাদের ছুটি নাই। ঈদে বাড়ি যেতে পারলে ভালো লাগত। মন খারাপ হলেও লাভ নাই। চাকরি করি, দায়িত্ব পালন তো করতেই হবে। মুসলিম সহকর্মী কয়েকজন ঈদে বাড়ি গেছেন, কয়েকজন আমার সঙ্গে ডিউটি করছেন বলেন এতোয়া। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়