সালেহ্ বিপ্লব: [২] পাক বাহিনীর বর্বর আক্রমণের মুখে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন রওশন আরা। ঢাকা ওমেনস কলেজের প্রথম বর্ষের এই ছাত্রী ২৬ মার্চ বুকে মাইন বেঁধে ঢাকার রাস্তায় ট্যাংকের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। উড়ে যায় পাক বাহিনীর সেই প্যাটন ট্যাংক। এই হলো মূল কাহিনী।
[৩] ১ এপ্রিল কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা এ খবরটি প্রকাশ করে। সঙ্গে সঙ্গে স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে যায় বীরকন্যা রওশন আরার নাম।
[৪] ভারতের পত্রিকায় বিস্তর লেখালেখি হয়। রাজপথে নামেন দেশটির নারী নেত্রীরা। তারা কলকাতার পাকিস্তান হাইকমিশনারের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন।
[৫] ৫ এপ্রিল গোটা পশ্চিমবঙ্গে পালন করা হয় রওশন আরা দিবস।
[৬] এভাবেই ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিলেন একাত্তরের বীরযোদ্ধা।
[৭] মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বাড়াতে রওশন আরার বীরত্বগাঁথা অসামান্য ভূমিকা রেখেছে।
[৮] কিন্তু রওশন আরা নামে কেউ ছিলেন না। তাহলে আনন্দবাজার পত্রিকা যার কথা বলেছিলো, তিনি কে?
[৯] স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র খ্যাত বেলাল মোহাম্মদ ওই কল্পকাহিনী এম আর আখতার মুকুলের সৃষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন। আবার আরেক দল বলেছেন, এটি আকাশ বাণীর দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি। তবে আহমদ ছফা রওশন আরার স্রষ্টা হিসেবে আগরতলার সাংবাদিক বিকচকান্তি চৌধুরীকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
[১০] কিন্তু এই কল্পকাহিনী রটানোর প্রয়োজন পড়লো?
[১১] মেজর মামুন মাহমুদ ফিরোজের লেখা স্বাধীনতাযুদ্ধে বাংলাদেশ গোলন্দাজ বাহিনী বইতে আছে, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে মুক্তিবাহিনীর মনোবল বাড়ানোর জন্য খবরটি প্রচার করেছিলো।
[১২] অস্তিত্বহীন মানুষের বীরত্বগাঁথা প্রচার যুদ্ধের একটা কৌশল, যাকে বলা হয়, প্রোপাগান্ডা ওয়ারফেয়ার। এই মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের উদ্দেশ্য হচ্ছে. নিজেদের পক্ষে জনসমর্থন বাড়ানো, নিজস্ব বাহিনী ও জনগণের মনোবল চাঙা রাখা এবং শত্রুর মনোবল দুর্বল করা।
[১৩] রওশন আরার প্রোপাগান্ডাটি সম্পর্কে কিছু নেতিবাচক মন্তব্যও লক্ষ্য করা যায়। কর্নেল মাহমুদুর রহমান চৌধুরীর মতে, রওশন আরার কল্পকাহিনী বা মিথ সৃষ্টির ফলে অনেক সত্যকার এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার বীরত্ব ঢাকা পড়ে গেছে।
প্রথম আলোর ঈদ উল ফিতর সংখ্যায় প্রকাশিত মুহাম্মদ লুৎফুল হকের ‘মুক্তিযুদ্ধের এক রহস্যময় নারীর খোঁজে’ শীর্ষক লেখা অবলম্বনে
আপনার মতামত লিখুন :