‘শেখ হাসিনা কোথায় আছেন, এটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার মাথাব্যথা বিচারকার্য করা।
উনি কোথায় আছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে। যদি বিচারের কোনো পর্যায়ে গিয়ে ওনার বা অন্য কারোর প্রত্যর্পণ প্রয়োজন হয় তখন আমি খোঁজখবর নেব। ’
বুধবার (৯ অক্টোবর) সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তার আগে তিনি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সাক্ষাৎ শেষে সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবনের ফটকে অধ্যাপক আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
এ সময় শেখ হাসিনা কোথায় আছেন, কোনো তথ্য আছে কিনা - প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ নজরুল বলেন, উনি (শেখ হাসিনা) কোথায় আছেন, এটা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। আমার মাথাব্যথা বিচারকার্য নিয়ে। আমার কাজ হচ্ছে বিচারটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শুরু করা। এটাকে ক্রেডিবল এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বিচার প্রক্রিয়া হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি বলেন, আপিল বিভাগের অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে এর আগে আমার ফরমাল কোনো সাক্ষাৎ হয়নি, সেজন্যই আসা। বিচার বিভাগের যেসব সমস্যা হচ্ছে, আইন মন্ত্রণালয় এবং সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে যেসমস্ত ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতার প্রয়োজন সেসব বিষয়ে কথা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, কিছু কিছু বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, সে বিষয়ে অবগত করার জন্য বলা হয়েছে। আমরা বলেছি, আমরাও অবগত আছি। ওনারাও (বিচারপতি) অবগত রয়েছেন।
বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে ড. আসিফ বলেন, এটা আমাদের সিদ্ধান্ত বা আমাদের দাবি না। যারা আন্দোলন করেছিলেন, জুলাই গণবিপ্লব করেছিলেন, তারা মনে করেছেন কোনো কোনো বিচারপতি গণ-আন্দোলনের প্রতিপক্ষ ছিলেন, ফ্যাসিস্ট শক্তি ছিলেন, তাদের হয়ে দিনের পর দিন কাজ করেছে এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছে। এর আগেও সড়ক আন্দোলন হয়েছিল। এ সমস্ত ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা ছিল ফ্যাসিস্ট শক্তির পক্ষে। দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের বিপক্ষে। তারা (ছাত্র-জনতা) পদক্ষেপ নিতে বলছে। আমরা ছাত্র-জনতার ইচ্ছার ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চিন্তাই করি না। যাদের (বিচারপতি) বিষয়ে বলা হচ্ছে এখন তারা ভাববে, তারা কি করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয় থেকে সম্পূর্ণ একটা পৃথক প্রশাসন। সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এখানে যারা অভিভাবক আছের ওনারা যথেষ্ট জ্ঞানী। যথেষ্ট পরিণত। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওনারা কি ব্যবস্থা নেবেন সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে অনেক ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ আছে , সেটা ওনারা বিবেচনা করবেন। আমরা বলে দিতে পারি না।
হাইকোর্টে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরুর বিষয়ে বড় অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা যখন ট্রাইব্যুনালে বিচারক চাইতাম তখন সুপ্রিম কোর্ট থেকে আমাদের বলা হতো বিচারক সংকট রয়েছে। এখন আশা করি এই সংকটটা অনেকটা নিরসন হয়েছে।
তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ হয়ে গেলে আমাদের কাজের একটা ধাপ শুরু হবে। কিন্তু ট্রাইব্যুনালের কাজে ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। আমাদের প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমি যতটুকু জানি তারা বিশ্বাসযোগ্য মামলার উত্থাপনের বেশ কিছু আলমত, তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিচার করব, এখানে কে উপস্থিত কে অনুপস্থিত এটা আমাদের দেখার বিষয় না। কারণ, আমাদের আইনের মধ্যে অনুপস্থিত ব্যক্তির বিচার করার বিধান রয়েছে। আইনে অনুপস্থিত ব্যক্তিরা যেসব দেশে গেছেন তাদের সাথে আমাদের যদি প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকে তাহলে তাকে আমরা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যও আমরা লিখতে পারি। আমাদের সব অপশন খোলা আছে। বিচার করার লক্ষ্যে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আশা করি ফুল স্কেলে বিচার মাস খানেকের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে।
কবে নাগাদ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্ভবত এক সপ্তাহের মধ্যে। নির্দিষ্ট করতে পারছি না। সামনে কয়েকদিন বন্ধ আছে। বন্ধ না থাকলে বলতাম তিন চার দিনের মধ্যে। খোলার পরে তিন চার দিনের মধ্যে হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
আইন না করে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, আইন করে দেশে নির্বাচন কমিশনও গঠন হয়েছিল। সে নির্বাচন কমিশন কি দেশে ভালো নির্বাচন দিয়েছিল? আইনের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে উদ্দেশ্য কি? আমি আপনাদের চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি নতুন যারা বিচারপতি নিয়োগ হয়েছেন আর গত ১৫ বছরে যারা বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছেন আপনারা সুনাম ও মেরিটের তুলনা করে দেখবেন।
তিনি বলেন, অবশ্যই আমরা আইন করব। আইন করার জন্য কমিশন করা হয়েছে। কমিশনের রিপোর্ট আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিচারক সংকট আছে।
এই নিয়োগ জরুরি বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে জানান আইন উপদেষ্টা। উৎস: বাংলানিউজ২৪ ও চ্যানেল২৪
আপনার মতামত লিখুন :