সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো আটজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫ জন ঢাকার এবং ৩ জন খুলনা বিভাগের। এ নিয়ে এ বছর ডেঙ্গুতে মোট প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৪ জনে। একই সময়ে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ১৭ জন।
বুধবার (২ অক্টোবর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, এক দিনে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ১৭ জন নতুন রোগী। এর মধ্যে রাজধানীর হাসপাতালে ৩৯১ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬২৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছে।
অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে করে দেখা গেছে, প্রথম ৯ মাসে মৃত্যু হয় ১৭৪ জনের।
এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরে মারা গেছে ৯১ জন। আগের আট মাসে মৃত্যু হয় ৮৩ জনের। এই সময়ে আক্রান্তের হারও বেড়েছে উল্লেখ্যযোগ্য হারে। এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৩ হাজার ৯৯ জন।
এর মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে ২২ হাজার ২৫৮ জন।
গত এক মাসে ডেঙ্গুর এমন ঊর্ধ্বগতির কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা দুটি কারণ বলছেন। এক. আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে অতিবৃষ্টি কারণে রোগটি বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। দুই. ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থার অভাব। স্থানীয় সরকারের অব্যবস্থাপনা, স্থানীয় সরকারের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বয়ের অভাব বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এর আগে গত এক দশকে (২০১৪-২০২৩) সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর পিক সিজন হয় পাঁচবার। অক্টোবরে তিনবার, নভেম্বরে ও আগস্টে একবার করে পিক সিজন হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার কালের কণ্ঠকে বলেন, অক্টোবর ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো নাজুক হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ অতিবৃষ্টির কারণে অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় এডিস মশার ঘনত্ব বেড়েছে।
তিনি বলেন, কোনো এলাকায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে গেলে জরুরি ভিত্তিতে হটস্টট ম্যানেজমেন্ট করতে হয়। এর জন্য জরিপ ও রোগী সঠিক তথ্য গুরুত্বপূর্ণ। দুটির একটিও করা হয়নি। এখন জনসাধারণকেও সরাসরি সম্পৃক্ত হতে হবে। মশার প্রজনন স্থল ধবংস কার্যক্রম চালাতে হবে।
এর আগে জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ১ হাজার ৫৫ জন, যাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয় ৩৩৯ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। মার্চ মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩১১ জন; যাদের মধ্যে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এপ্রিল মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫০৪ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। মে মাসে ৬৪৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের। জুন মাসে ৭৯৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। জুলাই মাসে ২ হাজার ৬৬৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়, তাদের মধ্যে ১২ জনের মৃত্যু হয়। আগস্টে ৬ হাজার ৫২১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল, যাদের মধ্যে ২৭ জনের মৃত্যু হয়।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ও জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতার কারণে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা প্রজননের উপযোগী পরিবেশ পেয়েছে। এর সঙ্গে গত দুই মাস সিটি করপোরেশনের মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর না থাকায় মশক নিধন কর্মসূচি একরকম বন্ধ ছিল। এখনো অনেক জায়গায় বন্ধ রয়েছে। এ কারণে সামনের দিনগুলোতে ডেঙ্গুর প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
তিনি বলেন, সিটি করপোরেশনের এখন এডিস মশা নিধনে সক্রিয় হওয়া জরুরি। এর সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও ভাবতে হবে। হাসপাতালকেন্দ্রিক চিন্তা না করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে, রোগীর সংখ্যা সাত হাজার ৪৮৮ জন ও মৃত্যু ৯৩ জনের। এর পরই আছে চট্টগ্রাম বিভাগ, রোগী সাড়ে ছয় হাজার ৯১২, মৃত্যু ২১ জনের। ঢাকার উত্তরে সংক্রমণ ৬ হাজার ৫৫১ জন ও মৃত্যু ২৫ জনের।
দেশে প্রথম ২০০০ সালে ডেঙ্গুর বড় ধরনের প্রকোপ দেখা দেয়। এর পর থেকে এ পর্যন্ত সবোর্চ্চ আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে গত বছর। সে বছর আক্রান্ত হয় ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ও মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। এর আগে ২০১৯ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রথমবার এক লাখ ছাড়াই, সে বছর ভর্তি হয়েছিল ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। উৎস: কালের কণ্ঠ।
আপনার মতামত লিখুন :