শিরোনাম
◈ মানুষের সংস্কার না হলে, সংবিধান কেন, কোনো সংস্কারেরই সুফল হবে না : প্রাথমিক ও গণশিক্ষা  উপদেষ্টা ◈ তুমি মালিঙ্গা হয়ে গেলে নাকি, সাকিবকে বললেন বিরাট কোহলি ◈ অমিত শাহ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উল্টো করে ঝুলিয়ে শায়েস্তা করার হুমকি দিলেন ◈ বিয়ের দাবিতে প্রেমিকার অনশন, প্রেমিক পালালেন দেশ ছেড়ে  ◈ দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্যে এলেন ঢাবি শিবির সভাপতি ◈ চট্টগ্রামে দখল নিয়ে যুবদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ:  বিলুপ্ত মহানগর যুবদলের কমিটি, বহিষ্কার ২ ◈ বিদেশি ষড়যন্ত্র রয়েছে পাহাড়ে শান্তি বিনষ্টে: পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা ◈ সহিংসতায় উত্তাল পাহাড়, অশান্তির নেপথ্যে কী ◈ রাজধানীতে পর্বতারোহী শায়লা বিথীর ওপর হামলা ◈ বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে সোনার দাম, ইতিহাসে প্রথমবার ২৬০০ ডলার ছাড়ালো সোনার আউন্স

প্রকাশিত : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৫:৫৬ বিকাল
আপডেট : ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৬:৩২ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সহিংসতায় উত্তাল পাহাড়, অশান্তির নেপথ্যে কী

এম এইচ বাচ্চু : পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের জেরে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) ৪ জন নিহত হয়। এ নিহতের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবিতে শুক্রবারই ‘বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র–জনতার’ ব্যানারে ৭২ ঘণ্টার এই অবরোধের ডাক দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।  শহরে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। 

খাগড়াছড়িতে নিহতরা হলেন, রুবেল ত্রিপুরা (২৫), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও জুনান চাকমা (২০)।  রাঙামাটিতে অনিক কুমার চাকমা নিহত হন। 

৭২ ঘণ্টার এই অবরোধে সমর্থন দিয়েছে সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন নামের সংগঠন। এ ছাড়া পার্বত্য এলাকার আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টও (ইউপিডিএফ) অবরোধে সমর্থন জানায়।

এদিকে রাঙামাটিতে আজ সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে মালিক সমিতি। গতকাল  রাঙামাটিতে বাস, ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা পুড়িয়ে দেওয়ার প্রতিবাদে এই ধর্মঘট ডেকেছেন তাঁরা। গতকাল রাতে এক জরুরি সভায় তাঁরা এ ঘোষণা দেন।

জানা গেছে, বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ি সদরে মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্রে করে গণপিটুনিতে মো. মামুন (৩০) নামের এক বাঙালি যুবককে হত্যা করার জেরে সংঘর্ষ শুরু হয়। ওই দিন সেখানকার পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে হত্যার প্রতিবাদে দীঘিনালায় বাঙালিরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বাঙালিদের অভিযোগ, মিছিলটি বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় পাহাড়িরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সংঘর্ষের একপর্যায়ে দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে বিভিন্ন দোকান ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়।

এইচ এম ইউছুফ আলী নামের পানছড়ি এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, মামুনকে পিটিয়ে হত্যা করা হলো খাগড়াছড়িতে। এর জেরে সংঘর্ষ হলো ২৬ থেকে ২৭ কিলোমিটার দুরের দিঘীনালায়। আর আমাদের দোকান পোড়ানো হলো ঘটনাস্থল ২৫ কিলোমিটার দূরের পানছড়িতে। এর আগে পাহাড়ি যুবকরা পানছড়ি ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ে হামলা চালায় ও ভাঙচুর করে। সেনাবাহিনীর টহল টিমকে আটকে রাখে। গুজব পোস্টের কারণে রাতে আর ঘুমাতে পারলো না পুরো জেলাবাসী।

দুই পক্ষের হামলা ও অগ্নিসংযোগ। প্রকৃত ঘটনার পেছনে কারা? তারা কী করতে চাচ্ছে? এসব প্রশ্নের সমাধান করার জন্য তিনি সরকার ও প্রশাসনের নিকট দাবি জানান।

খাগড়াছড়ি সদরের বাসিন্দা রোমেল চাকমা জানান, আতঙ্কে সারা রাত ঘুমাতে পারেননি তারা। গুজব ও ফেসবুকের পোস্ট দেখে সবাই আতংকিত ছিলেন। বাড়িতে থাকা ভাড়াটিয়া পর্যন্ত বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে কারা ফায়দা লুটতে চায়, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

রহিম হৃদয় নামে খাগড়াছড়ি সদরের আরেক বাসিন্দা জানান, দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে পাহাড় নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি এই ফাঁদে পা না দিতে সকলকে অনুরোধ জানান।

দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, আগুনে দীঘিনালা বাসস্টেশন ও লারমা স্কয়ার এলাকায় ১০২টি দোকান আগুনে পুড়ে গেছে। এর মধ্যে পাহাড়িদের ৭৮টি ও বাঙালির সম্প্রদায়ের ২৪টি দোকান রয়েছে।

শুক্রবার দুপুরে রাঙামাটিতে জারি করা ১৪৪ ধারা এখনো বলবৎ রয়েছে। তবে খাগড়াছড়ি জেলা সদরে গতকাল রাত ৯টার পর ১৪৪ ধারা জারির মেয়াদ আর বাড়ানো হয়নি।

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলার উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন। শনিবার বিকেলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি ইন্টারনেট বন্ধ থাকার বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বিটিআরসি।

এতে উল্লেখ করা হয়, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে বিটিআরসি থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। উদ্ভূত সাময়িক অসুবিধার জন্য বিটিআরসি গ্রাহকদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছে।

খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালায় ১৯ সেপ্টেম্বর দিনভর সংঘর্ষ ঘটে। এর জেরে বিকেল ৪টায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এনটিটিএন অপারেটর সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনেকশনস কোম্পানি লিমিটেডের অপটিক্যাল ফাইবার কাটা পড়ে। এতে মোবাইল অপারেটর রবির ১৬টি টাওয়ার নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা। শনিবার দুপুর ১২টার পর রাঙামাটি জেলার সেনানিবাসের প্রান্তিক হলে এ বৈঠকে বসেন তারা। এতে উপস্থিত আছেন বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠী ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও বৈঠকে রয়েছেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও স্থানীয় নেতারা।

মতবিনিময় সভায় উপস্থিত তিন উপদেষ্টা হলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.), পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত (অব.) সুপ্রদীপ চাকমা, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ।

মতবিনিময় সভা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, যারা আইনশৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করবে তাদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাঙামাটিতে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

পার্বত্য চট্টগ্রামে চলমান উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে তারা যদি আবার আইনশৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করে, তাহলে তাদের যে হাত সেটা ভেঙে দেয়া হবে। আমি আপনাদের কাছে বারবার অনুরোধ করবো। আইনশৃঙ্খলা যাতে উন্নতি হয়, সেজন্য আপনারা আমাদের সহযোগিতা করবেন।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সদস্য রয়েছে তাদের সহযোগিতা  করবেন। প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন। জনগণকে বোঝাবেন যাতে আইনশৃঙ্খলা অটুট থাকে।’

সম্প্রীতি নষ্ট করতে দেশের বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন (এলজিআরডি) ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ। শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) রাঙ্গামাটি সেনানিবাসে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও জাতিগোষ্ঠীর নেতা এবং নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জাবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। 

এ এফ হাসান আরিফ বলেন, ‘সবাই সম্প্রীতি চায়। কিন্তু এই সম্প্রীতিতে কোথায় যেনো একটা ছন্দপতন হচ্ছে। সম্প্রীতি নষ্ট করতে দেশের বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘আলোচনায় একটি বিষয় এসেছে তা হচ্ছে- পার্বত্য চট্টগ্রামের ঘটে যাওয়া ঘটনার জন্য একটি কমিশন গঠন করে তদন্ত কমিটি করা যেনো প্রকৃত দোষীদের বিচারের আওতায় আনা যায়। ’

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে কোনো ভেদাভেদ দেখা যায়নি। প্রত্যেকের কণ্ঠে একটি কথা ছিল যে তারা সবাই সম্প্রীতি চায়। ফলে আশা করি রাঙ্গামাটি সুন্দর ও সম্প্রীতির শহর হিসেবে বাংলাদেশ ও বিশ্বে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে।’

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়