শিরোনাম
◈ ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, ছাত্রলীগ নেতাসহ আটক ৩ ◈ শেখ হাসিনার ভারতে থাকা নিয়ে ফার্স্টপোস্টকে দেওয়া সাক্ষাতকারে যা বললেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট ◈ শ্রীলঙ্কা নারী দলের বিরুদ্ধে ৪-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ ◈ যে কারণে কোটি কোটি জিমেইল বন্ধ হচ্ছে ২০ সেপ্টেম্বর ! ◈ কুমিল্লা নার্সিং ও মিডওয়াইফারী কলেজ শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র, আহত ৭ ◈ সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার মানে অন্যরা কাজ করছে না: মির্জা ফখরুল ◈ ঢাবিতে তোফাজ্জলকে নির্যাতন করে হত্যা নিয়ে যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ◈ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া সৌদি স্বীকৃতি দেবে নাইসরাইলকে ◈ জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট সূচকে বাংলাদেশ এবার ১১ ধাপ এগিয়ে ◈ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ গ্রেপ্তার

প্রকাশিত : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০২:৪৮ দুপুর
আপডেট : ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৬:০৯ বিকাল

প্রতিবেদক : মাসুদ আলম

সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতার সুফল ভোগ করবে জনগণ : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মাসুদ আলম : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের ক্ষমতা দেওয়ার সুফল বাংলার জনগন ভোগ করবে। সেনাবাহিনী অনেক দিন ধরে মাঠ থেকে জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছে। জনসেবা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থেই তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। 

বুধবার গাজীপুর আনসার ও ভিডিপি একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪০তম বিসিএস (আনসার) ক্যাডার কর্মকর্তা ও ২৫তম ব্যাচ (পুরুষ) রিক্রুট সিপাহিদের প্রশক্ষিণ সমাপনী কুচকাওয়াজ  শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি আরপ বলেন,  সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছে। তাই তাদের একটা ক্ষমতার ভেতর কাজ করতে হবে। আমাদের অন্যান্য বাহিনীর কিছু স্বল্পতা রয়েছে। একটা পূরণ করার জন্যই সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দরকার। তিনি বলেন, যেসব পুলিশ সদস্য এখনো কাজে যোগদান করেনননি।  তাদের আর যোগদান করতে দেওয়া হবে না।  তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  এর আগে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে সালাম গ্রহণ করেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের  স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। 

বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মোট ৬ (ছয়) জন বিসিএস কর্মকর্তা ও ৯০৮ জন রিক্রুট সিপাহি সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের জন্য নির্ধারিত মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করলেন। বিসিএস কর্মকর্তারা দীর্ঘ ১২ (বার) মাস মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং একই সাথে মাস্টার্স অব হিউম্যান সিকিউরিটি (এমএইচএস) কোর্স সম্পন্ন করেছেন। অপরদিকে রিক্রুট সিপাহিরা ৬ (ছয়) মাস মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।

সকাল ৯ টায় বিএইচএম এর মাঠে প্রবেশের মধ্য দিয়ে কুচকাওয়াজ শুরু হয়। পরে একে একে মাঠে প্রবেশ করে প্যারেড কন্টিনজেন্ট, প্যারেড অ্যাডজুটেন্ট, কোম্পানি কমান্ডার, প্যারেড কমান্ডার, ব্যাটালিয়ন কমান্ডার ও পতাকাবাহী কন্টিনজেন্ট। অশ্বারোহী দলের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে প্রধান অতিথি অন্তবর্তীকালীন সরকারের  স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী  (অব.) প্যারেড মাঠে আগমন করেন। এ সময় বাহিনীর  মহাপরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত কমান্ড্যান্ট তাকে স্বাগত জানান। পরে লাল গালিচায় মোড়ানো সুসজ্জিত খোলা সবুজ জিপে একাডেমির কমান্ড্যান্ট ও মহাপরিচালক  প্রধান অতিথিকে নিয়ে তিনি প্রতিটি কন্টিনজেন্ট পরিদর্শন করেন। মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্নকারী প্রশিক্ষণার্থীরা ৬ (ছয়) সারিতে মার্চ পাস্ট করে প্রধান অতিথিকে অভিবাদন জানায়। এরপর তিনি প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তা ও রিক্রুট সিপাহিদের উদ্দেশ্যে দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করেন।

বক্তব্যের শুরুতেই প্রধান অতিথি ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে আনসার বাহিনীর গৌরবদীপ্ত ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন এবং একই সাথে তিনি জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকার পতনে শহীদ সকল ছাত্র-জনতাকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, “স্বৈরাচার সরকার পতনের পর বাংলাদেশ আজ নবজাগরণে উজ্জীবিত। বিগত সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের হতে পারেনি বলেই ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচার সরকার দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। এই গণঅভ্যুত্থানে আত্মাহুতি দিয়েছে আবু সাঈদ, মীর মুগ্ধ, ইয়ামিন ও ফাইয়াজদের মতো হাজারো ছাত্র-জনতা। আপনাদের নিকট আমার চাওয়া, দেশ ও জনগণের কল্যাণে আপনারা নিজেদের সপে দিয়ে সততা, নিষ্ঠা ও ন্যায্যতার মাপকাঠিতে কাজ করবেন। আপনাদের সকলের সহযোগিতায় বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ।” 

বিসিএস আনসার কর্মকর্তা ও রিক্রুট সিপাহিরা সফলতার সাথে মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার জন্য প্রধান অতিথি সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। বিসিএস কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আপনারা দীর্ঘ ১২ মাস মেয়াদী ২০তম মৌলিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ১০ম মাস্টার্স অব হিউম্যান সিকিউরিটি (এমএইচএস) কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এই সুদীর্ঘ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত পেশাগত জ্ঞান, অধীনস্তদের প্রতি সহমর্মিতা ও দক্ষতার সুষ্ঠু প্রয়োগ এবং নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীকে একটি মর্যাদাপূর্ণ ও সুদৃঢ় অবস্থানে দাঁড় করাতে আপনারা অনুকরণীয় ভূমিকা রাখবেন-এটা আমার বিশ্বাস।

নবীন সিপাহিদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, নবীন সিপাহিদেরকে আমি বলবো, তোমরা এ বাহিনীর দর্পণস্বরূপ। তোমরা যদি দায়িত্বের প্রতি সৎ, সাহসী ও নিষ্ঠাবান থাকো, আচার-আচরণে সহনশীল ও বিনয়ী হও, মানবিক হও, তাহলেই বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশ ও জনগণের বাহিনী হয়ে উঠতে পারবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমাদের সকলের বেতন-ভাতা থেকে শুরু করে সকল সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তি হয় কৃষক, শ্রমিক, মজুর থেকে শুরু করে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের কষ্টার্জিত টাকায়। সুতরাং দেশ ও জনগণের প্রতি সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, ভালোবাসা  ও দেশপ্রেম নিয়ে অন্যদের প্রতি অনুগত থেকে দায়িত্বপালন করা আমাদের সকলের পবিত্র দায়িত্ব।

জুলাই বিপ্লবের পর দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির সময় বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী জনজীবনে স্বস্তি ফেরাতে যে সাহসী ভূমিকা রেখেছে, সেজন্য বাহিনীর সকলের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মহোদয়। তিনি বলেন, “স্বৈরাচার সরকার পতনের পর যখন ট্রাফিক, বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শূন্য হয়ে গিয়েছিলো, তখন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধানে এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ডিএমপির থানাগুলোর অভ্যন্তরীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এবং হযরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লুট হওয়া অস্ত্রসমূহ উদ্ধারে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যগণ ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। জাতির জরুরী সময়ে এই বাহিনীর সাহসী অবদানের জন্য সকল পর্যায়ের সদস্যদের আমি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।” সামাজিক  নিরাপত্তা সংকটের সময়ে ভিডিপি সদস্যরা গ্রামে গ্রামে মন্দির, গির্জা পাহারা দিয়ে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। 

সুন্দর প্রশক্ষিণ সমাপনী কুচাকওয়াজ উপহার প্রদান করার জন্য প্রধান অতিথি সকল প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তা, প্রশিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কর্মচারীদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানান। এ প্রশিক্ষণ সমাপনীতে কৃতিত্ব অর্জনকারী প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তাদের মাঝে ও রিক্রুট সিপাহিদের মাঝে পুরস্কার প্রদান করেন। পরে সংঘবদ্ধ মার্চ পাস্ট এর মাধ্যমে সমাপনী কুচকাওয়াজের সমাপ্তি ঘটে।  অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ প্রমুখ।
 
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশের সর্ববৃহৎ, সুশৃঙ্খল ও জনসম্পৃক্ত বাহিনী। ১৯৪৮ সালে আনসার বাহিনী প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে। বাংলাদেশ সৃষ্টির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট থেকে শুরু করে স্বাধীনতার পরবর্তীতে দেশের প্রতিটি জরুরী মুহুর্তে এ বাহিনীর সদস্যগণ গভীর দেশপ্রেম নিয়ে এগিয়ে এসেছে এবং দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ সামগ্রিক উন্নয়নে সবসময়ই কর্মদক্ষতা এবং সফলতার পরিচয় দিয়েছে। এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৬টি ব্যাটালিয়নের ৬ হাজার ২৪৪ জন সদস্য দুর্গম এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ‘অপারেশন উত্তরণ’ এ কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া ৬০০ জন হিল আনসার ও ৭ হাজার ৮৮৭ জন হিল ভিডিপি সদস্য পার্বত্য এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে অবদান রাখছেন। সেখানে দায়িত্ব পালনকালে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত এ বাহিনীর ১৯ জন সদস্য শহীদ হয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়