কল্যান বড়ুয়া, বাঁশখালী(চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সাগর উপকুল গন্ডামারায় অবস্থিত ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা । দেশের আলোচিত শিল্প এস আলম ও চীনের সেফকো থ্রী এর যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি শুরু থেকে নানা ঘটনার জন্মদিলেও এ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রীডে বিদ্যুৎ সরবরাহ হওয়ার পর জনগন আশার আলো দেখে ।
বাঁশখালী ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ট্যান ঝেলিং সাংবাদিকদের বলেন, ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৮টি এলসি খোলা হলে তার মধ্যে ৫টি এলসির কয়লা খালাস করা হয় । এসব এলসির মধ্যে ৩টির অর্থছাড় করার নির্ধারিত সময় ছিল যথাক্রমে গত আগস্ট মাসের ৬, ১১ ও ২২ তারিখ। সেই অর্থও ছাড় করা হয়নি। আগের কয়লার বিল না পাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে আসা ৩টি জাহাজ ( ১ লাখ ৬৮ হাজার টন) থেকে কয়লা খালাস বন্ধ রেখেছে রফতানিকারকরা। তারা আগের বিল নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কয়লা ছাড় করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সুত্র মতে,১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোমাত্রার উৎপাদন করলে দৈনিক ১২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন হয়। কিন্ত বর্তমানে কয়লার মজুদ রয়েছে মাত্র ৬০ হাজার মেট্রিক টন। সে হিসেবে মাত্র ৫ দিনের কয়লা মজুদ রয়েছে। বর্হিনোঙরে থাকা জাহাজ থেকে কয়লা খালাস করতে না পারলে আগামী সপ্তাহেই বন্ধ হয়ে যাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। বাঁশখালীর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে জ্বালানি খরচ হয় প্রায় ৭.৫৬ টাকার মতো।
একই পরিমাণ বিদ্যুৎ ফার্নেস অয়েল দিয়ে সরবরাহ দিতে গেলে পড়বে প্রায় ১৮ টাকার মতো। ১৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোমাত্রায় উৎপাদনে করলে মাসে প্রায় ৯৫ কোটি বিদ্যুৎ ইউনিট বিদ্যুৎ দিতে পারে। একই পরিমাণ বিদ্যুৎ কয়লার পরিবর্তে ফার্নেস অয়েল থেকে পেতে হলে সরকারকে বাড়তি ৯৫০ কোটি টাকা গুণতে হবে।
ইন্দোনেশিয়ার সাপ্লায়ার বেনিফিসিয়ারি ব্যাংকের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকে বারবার তাগাদা দিচ্ছে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোন রকম সাড়া না পেয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য ২০২৩ সালের ১৪ জানুয়ারি বাঁশখালীর ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টটি জাতীয় গ্রিডের ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে যুক্ত হয়। এরপর গত ২৪ মে থেকে জাতীয় গ্রিড়ে বিদ্যুৎ সরবারাহ শুরু করে । দেশের শিল্প প্রতিষ্টান এস আলম গ্রুপ ও চীনের সেপকো থ্রির মালিকাধীন ২০১৬ সালে বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও এসএস পাওয়ারের মধ্যে চুক্তি সই হয়। চুক্তিতে বলা হয়,২৫ বছর ধরে পিডিবি এই কেন্দ্রে উৎপাদিত সব বিদ্যুৎ কিনবে। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২.৫০৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার, ঋণের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ১.৭৮২ বিলিয়ন ইউএস ডলার, ইকুইটির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৭২৪.৬৭৮ মিলিয়ন ইউএস ডলার, এস আলম গ্রুপের (৭০%) এবং চীনের সেপকো থ্রি (৩০%) এর একটি যৌথ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যে প্রকল্প থেকে বর্তমানে জাতীয় গ্রীড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে । কয়লা সংকট এবং ব্যাংকের অর্থ ছাড় না হলে অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে দেশের আলোচিত ১৩২০মেগাওয়ার্ট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এসএস পাওয়ার প্ল্যান্টটি ।
আপনার মতামত লিখুন :