সাদেক আলী : তৈরি পোশাক ও ওষুধ শিল্প কারখানায় চলা বিশৃঙ্খলার কারণে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ কথা বলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।
ড. ইউনূস বলেন, ‘তৈরি পোশাক, ওষুধ শিল্প—এসব এলাকায় শ্রমিক ভাইবোনেরা তাদের অভিযোগ জানানোর জন্য ক্রমাগতভাবে এই শিল্পের কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ রাখতে বাধ্য করছেন। এটা আমাদের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে সেটা মোটেই কাম্য নয়। এমনিতেই ছাত্র-শ্রমিক-জনতার বিপ্লবের পর যে অর্থনীতি আমরা পেয়েছি, সেটা নিয়ম-নীতিবিহীন দ্রুত ক্ষীয়মাণ একটা অর্থনীতি। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। আমরা এই অর্থনীতিতে প্রাণ সঞ্চারের চেষ্টা করছি। আমাদের উদ্যোগে সাড়াও পাচ্ছি। ঠিক এই সময়ে আমাদের শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে, অকার্যকর হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট আঘাত পড়বে। সেটা কিছুতেই কারও কাম্য হতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘শ্রমিক ভাইবোনদের অনেক দুঃখ আছে। কিন্তু সেই দুঃখ প্রকাশ করতে গিয়ে আপনাদের মূল জীবিকাই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে সেটা ঠিক হবে না। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে সেটা ঠিক হবে না। মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে এসব সমস্যার সমাধান আমরা অবশ্যই বের করব। আপনারা কারখানা খোলা রাখুন। অর্থনীতির চাকা সচল রাখুন। দেশের অর্থনীতিকে সোজা হয়ে দাঁড়াতে দিন। আমরা আপনাদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান বের করার জন্য সর্বশক্তি প্রয়োগ করব। মালিকপক্ষের কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা শ্রমিকদের সঙ্গে বোঝাপড়া করুন। কারখানা সচল রাখুন। অর্থনীতির দুর্বল স্বাস্থ্যকে সবল করে তুলুন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘ওষুধ শিল্প এবং তৈরি পোশাক শিল্প দেশের গৌরব। এর মাধ্যমে আমাদের শ্রমিক ভাইবোনেরা ও তাদের কর্মকুশলতা বিশ্বকে মুগ্ধ করেছে। এর সাফল্য এখন থমকে আছে। আমরা এই দুই শিল্পকে তাদের সম্ভাব্য শীর্ষে নিয়ে যেতে চাই। দুর্বল করার তো প্রশ্ন ওঠেই না। এই দুই শিল্পের কোথায় কোথায় বাধা আছে, সমস্যা আছে—সেগুলো চিহ্নিত করে তাকে বাধামুক্ত করতে চাই। আমরা বিদেশি ক্রেতাদের একত্রিত করে তাদের সহযোগিতা চাইব যেন, বাংলাদেশের এই শিল্প দুটি বিশ্বের অন্যান্য দেশের চাইতে বেশি আস্থাযোগ্য হয়ে গড়ে উঠতে পারে।
সব কিছুই সম্ভব যদি আমরা শ্রমিক-মালিক সম্পর্কটা একটা নির্ভরযোগ্য, আনন্দদায়ক করে গড়ে তুলতে পারি। আমাদের সরকারের প্রথম মাস কাটল। দ্বিতীয় মাস থেকে আমরা নতুন বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি হিসেবে নতুন শ্রমিক-মালিক সম্পর্কের সূচনা করতে চাই। এটা দেশের সবার কাম্য। দেশের নতুন প্রজন্ম নির্ভয়ে যেন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে, আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।’
প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতির উদ্দেশে এটি তার দ্বিতীয় ভাষণ। এর আগে গত ২৫ আগস্ট জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি।