গত দুই দিনে দেশের ৫৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই তালিকায় নাম না থাকায় দিনভর সচিবালয়ে হট্টগোল করেছেন আগের সরকারের আমলে ‘বঞ্চিত’ বেশ কয়েকজন বিক্ষুব্ধ উপসচিব, তবে শেষ পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের আশ্বাসে তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কার্যালয় ত্যাগ করেছেন।
মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব কে এম আলী আযমের কক্ষে গিয়ে হট্টগোল শুরু করেন। কয়েক ঘণ্টা ধরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দেন দরবারের পর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের কক্ষে প্রবেশ করেন। সেখানেও প্রায় আধা ঘণ্টা হট্টগোল চলে। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে ডিসি হিসেবে পদায়নের আশ্বাস পেয়ে তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কক্ষ ত্যাগ করেন।
বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের দাবি, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগে সরকারের আমলে তারা পদোন্নতিবঞ্চিত ছিলেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্প্রতি তাদের উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি দিয়েছে। তাদের আশা ছিল, ডিসি হিসেবে তাদের জেলা প্রশাসনে দায়িত্ব দেয়া হবে। সেজন্য সোমবার ও মঙ্গলবারের প্রজ্ঞাপন বাতিল করে বৈষম্যের শিকারদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন এই কর্মকর্তারা।
আন্দোলনে অংশ নেয়া একজন উপসচিব বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফলে আমাদের কর্মকর্তাদের মধ্যেও ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে, সেই হিসেবে আমরা যারা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হয়েছি, তারা উপসচিব হয়েছি এর সুফল আমরা পেয়েছি। ডিসি পদায়নের শুরু থেকে বলা হয়েছিল যে ২৪ ব্যাচের কাউকে পদায়ন দেবে না, কারণ ২৪ ব্যাচ যুগ্ম সচিবের জন্য যোগ্য হয়ে গেছে, ২৫ আর ২৮ ব্যাচ থেকে দেবে। পরে আমাদের ব্যাচের নেতা নূরজাহানের নেতৃত্বে আমরা সবাই জনপ্রশাসন সচিব এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্যারের কাছে গিয়ে বলেছি যে, আমরা এখন সব থেকে সিনিয়র। আমাদের অন্তত ছয় মাসের জন্য হলেও ডিসি হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যারা বিভিন্ন সময় বৈষম্যের শিকার হয়েছি, আমাদের পদোন্নতি আটকে রাখা হয়েছে, বর্তমানে যে রেজিম হয়েছে, এখানে বঞ্চিতরাই সব থেকে গ্রহণযোগ্য হবে, কারণ, জেলা পর্যায়ে তারাও নানা বৈষম্যের শিকার। আমাদের মত আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বারা জনগণও অত্যাচারিত, সুতরাং আমরাই এখানে বেশি গ্রহণযোগ্য হব। এখানে ২৪ ব্যাচের তারাই কাজ করতে পারবে ভালো চালাতে পারবে। এটা আমরা বলে এসেছি।
ওই উপসচিব আরও বলেন, এই বঞ্চিতদের সবাইকে বাদ দিয়ে আগে যারা কেবিনেটে ছিল, জনপ্রশাসনে ছিল, ভালো ভালো পদায়নে ছিল, রাজউকে ছিল, সিটি করপোরেশনে ছিল, বিদেশে পদায়নে ছিল এমন দেখে দেখে ৫৯ জনের মধ্যে ৫৬ জনকে পদায়ন করা হল। আর যারা গত সরকারের সময় বঞ্চিত হয়েছে, এদের মধ্যে থেকে কাউকে দেয়া হয়নি। এটা নিয়ে সবাই ক্ষুব্ধ হয়েছে, যে আগেও যারা সুবিধাভোগী এখনও তারা সুবিধাভোগী থাকবে- এটা তো হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, জনপ্রশাসনের কয়েকজন অফিসার যারা এই অর্ডারগুলো করে, তাদের নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্যারের কাছে গেছি। বিস্তারিত তুলে ধরেছি, ৬ টার দিকে বের হয়েছি। আমরা উনাকে বলেছি, আমাদের আগের সরকারও অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করেছে, এবারও আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। এই ডিসি বদলির প্রজ্ঞাপন বাতিল করে বঞ্চিতদের সম্পৃক্ত করে নতুন প্রজ্ঞাপন দিতে হবে। তিনি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। তাছাড়া ইতোমধ্যে কয়েকজনের প্রজ্ঞাপন বাতিলও হয়েছে। উৎস: বাংলাদেশ জার্নাল
আপনার মতামত লিখুন :