শিরোনাম
◈ কেউ যদি এক টাকার দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারেন শাস্তি মাথা পেতে নেবো: সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ◈ আমার জয় বাংলা, জয় হিন্দ বক্তব্য ম্যানিপুলেট করা হয়েছে, আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত : আদালতে মোজাম্মেল বাবু ◈ উত্তরায় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানো যুবলীগ নেতা রুবেল গ্রেপ্তার ◈ ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে শান্ত ও মুমিনুলের ব্যাটে রান দেখতে চান ◈ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিশ্লেষকদের দাবি এটাই বাংলাদেশের সেরা টেস্ট দল ◈ আশুলিয়ায় শ্রমিকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১ ◈ মণিপুরকে কেন শান্ত করতে পারছে না ভারত? ◈ ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির আটক ◈ চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় ব্যবসায়ী খুন ◈ অবৈধ অভিবাসী ধরতে অভিযানের ঘোষণা, উদ্বেগ বাংলাদেশি কমিউনিটিতে

প্রকাশিত : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০২:২৬ রাত
আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৫:০৬ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

১২ বছরে  শাজাহান খান গংরা লুটেছেন ১২ হাজার কোটি টাকা

পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রক ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। সরকারের বাসভাড়া নির্ধারণের ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব ছিল শাজাহান খান গংয়ের। উপরন্তু সরকারনির্ধারিত ভাড়া না মানলেও পরিবহন কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারত না সরকার। আবার পণ্য পরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়েও শাজাহান খানদের ইন্ধন ছিল। তাদের কথাই ছিল সড়কে আইন। গেল সরকার সড়ক আইন প্রণয়ন করলেও শাজাহান খানদের চাপে আইনের ধারা শিখিল করে। শাজাহান খানের ইশারাতেই কথায় কথায় যান চলাচল বন্ধ রেখে মানুষের ভোগান্তিকে জিম্মি করে দাবি আদায় করত পরিবহন কর্মীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে পরিবহন সেক্টরে ১২ হাজার কোটি টাকা চাঁদাবাজির নামে লুট করেছে শাজাহান খান গং। এক কথায় শাজাহান খান ছিলেন পরিবহন খাতের মাফিয়া ডন।

সরকারে থেকেও পরিবহন খাতের জন্য বিকল্প সরকারের ভূমিকায় ছিল শাজাহান খানের অনুসারীরা। পরিবহন খাতে অন্যায়ভাবে চাঁদাবাজিকে বৈধতা দিয়েছিলেন শাজাহান খান-ওসমান আলী গ্রুপ। বিরোধী দলের কর্মসূচিতে পরিবহনে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতারা পেট্রালবোমা মেরে তারাই আবার বিরোধী মতের মানুষকে আসামি করে মামলা করতেন বলে অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। সবই হয়েছে শাজাহান খানের ইশারায়।

গত ১৬ বছরে পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় শাজাহান খান ছাড়াও ছিলেন ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী। চাঁদাবাজিকে প্রাতিষ্ঠনিক রূপ দেওয়ার অভিযোগ আছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খানের বিরুদ্ধে। ওই সময় ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত ২৪৯টি শ্রমিক ইউনিয়নের মাধ্যমে চাঁদা তোলা হতো। এর একটি বড় অংশ নিয়মিত গেছে শাজাহান খানের পকেটে। ফেডারেশনের শীর্ষ নেতা হওয়ার সুবাদে পরিবহন মালিক সমিতির অপর প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে নিয়ে সড়ক থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন তিনি।

সড়ক পরিবহন আইনে রাস্তা থেকে চাঁদা তোলার কোনো বিধান নেই। এরপরও পরিবহন খাতে বেপরোয়া চাঁদাবাজির নেতৃত্বে ছিলেন শাজাহান খান। বিভিন্ন টার্মিনাল, উপজেলা পর্যায়ে চাঁদা তুলে পাঁচ ভাগের এক ভাগ বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নামে গেছে। এই ফেডারেশনের সবকিছুই চলেছে শাজাহান খানের ইশারায়।

চাঁদাবাজির বৈধতা দিতে সড়ক পরিবহন সংগঠন পরিচালনা ব্যয় বা সার্ভিস চার্জ-সংক্রান্ত নির্দেশিকা প্রণয়ন করেন শাজাহান খান। এ নির্দেশিকা প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত ছিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতি।

নির্দেশিকার ৪১টি ধারায় সড়কে চাঁদাবাজিকে দেওয়া হয় প্রাতিষ্ঠানিক রূপ। নির্দেশিকায় ঢাকা মহানগর এলাকা ও শহরতলির মধ্যে কোথায়, কোন রুটে, কে চাঁদা তুলবে, আন্তঃজেলায় চলা যানবাহনে ঢাকার কোন স্পটে কারা চাঁদা তুলবে- তা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর চাঁদা তোলার বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে নির্দেশিকায়। নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতিদিন একটি বাণিজ্যিক যানবাহন থেকে একবার ৫০ টাকা হারে চাঁদা তোলার কথা। কিন্তু বাস্তবে একদিনে ১৫ থেকে ২০ বারও চাঁদা দিতে হচ্ছে এসব যানবাহনকে। শাজাহান খানের অনুসারিদের কাছে বছরের পর বছর জিম্মি ছিলেন পরিবহন মালিকরা। শাজাহান খান ও তার সহযোগীরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরিবহনে চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছিলেন। চাঁদাবাজির আয়ে পরিবার, পরিজন, আত্মীয়স্বজনের নামে তারা বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ ও সম্পদ করেছেন। সরকারবিরোধী আন্দোলন ঠেকাতে কখনও পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই, আবার কখনও নানা অজুহাতে ধর্মঘটের ডাক দিয়ে গণপরিবহন চলাচল বন্ধের নেপথ্যে ছিলেন শাজাহান খান। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আন্দোলনে যোগ দিতে আসতে পারেননি অনেক নেতাকর্মী। এতে সাধারণ মানুষও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আহ্বায়ক সাইফুল আলম বলেন, বাস মালিকদের নানাভাবে জিম্মি করে রাখতেন শাজাহান খান। তার জন্য সড়কে চাঁদাবাজি কোনোভাবেই ঠেকানো যায়নি। কিছু অসাধু বাস মালিক নেতার সঙ্গে আঁতাত করে পরিবহন খাতকে নাজেহাল করেছেন তিনি। অনেক মালিক তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন। পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনকে তার ইচ্ছেমতো ব্যবহার করেছেন। ঢাকা-মাদারীপুর রুটের সার্বিক পরিবহন কোম্পানিতে একক আধিপত্য ছিল শাজাহান খানের।

২০১৮ সালে ঢাকায় বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনের সময় সড়ক পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান বিতর্কিত মন্তব্য করে সমালোচিত হন। শিক্ষার্থীরা রাজপথে আন্দোলনে নামে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় সড়ক দুর্ঘটনার জেরে ছাত্র-জনতার নিরাপদ সড়কের দাবিতে করা আন্দোলনেরও সমালোচনা করেছেন শাজাহান খান। ২০১১ সালের ১৮ আগস্ট নৌ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তৎকালীন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছিলেন, অশিক্ষিত চালকদেরও লাইসেন্স দেওয়া দরকার। কারণ, তারা সিগন্যাল চেনে, গরু-ছাগল চেনে, মানুষ চেনে। সুতরাং তাদের লাইসেন্স দেওয়া যায়। তার এমন বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রচার হলে সর্বমহলে তীব্র সমালোচনা হয়।

সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান বলেন, শাজাহান খান ও ওসমান আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলার টার্মিনালগুলোতে শ্রমিক স্বার্থের পরিবর্তে বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য পেশাজীবী শ্রমিক সংগঠনের পক্ষে কাজ করাতে তৎকালীন নেতারা বাধ্য করতেন। খবর: দৈনিক আমাদের সময়।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়