শিরোনাম
◈ তিব্বতে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ করবে চীন, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ভারত ও বাংলাদেশ ◈ সচিবালয়ে মধ্যরাতে আগুন, রাজনীতিবিদসহ নেটিজেনদের নানা প্রশ্ন, উত্তর নেই ◈ `ওবায়দুল কাদের ছবি তুলতে যে সময় লাগে তা দলে ব্যয় করলে আ.লীগের খারাপ পরিণতি হতো না' ◈ পুলিশকে মারধর করে আসামি ছিনতাই, বিএনপি নেতাসহ ৭৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা ◈ ধামরাইয়ে  বনিক সমিতির নির্বাচনে যুবদলের দুই গ্রুপে সংঘর্ষে আহত ১০ ◈ দুবাইফেরত বাংলাদেশ বিমানের উড়োজাহাজ জব্দ ◈ সচিবালয়ে আগুন: প্রাথমিক প্রতিবেদন ৩ দিনের মধ্যে দিতে নির্দেশ ◈ অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার কনস্টাসের সাহসী ব্যাটিংয়ের নেপথ্যে বাংলাদেশি তাহমিদ ইসলাম ◈ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিশেষ নির্দেশ দিল তাবলিগ জামাতের দুপক্ষকেই   ◈ অস্ট্রেলিয়ান কনস্টাসকে ধাক্কা মারার খেসারত দিলেন বিরাট কোহলি

প্রকাশিত : ০১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৬:১৯ বিকাল
আপডেট : ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

কি ঘটেছিলো ঢাকা মেডিকেলে ?  (ভিডিও)

তিনটি হামলার সুত্রপাত : 

শনিবার ৩১ আগষ্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরপর তিনটি হামলার ঘটনা ঘটেছে, ভাংচুর হয়েছে জরুরী বিভাগ, আহত হয়েছেন চিকিৎসকরা।  এরপর নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবীতে কর্মবিরতীতে গেছেন মেডিকেলের চিকিৎসকরা। 


প্রথম হামলার সুত্রপাত হয় শনিবার খিলগাঁওয়ের সিপাহীবাগ এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে। ওই ঘটনায় চাপাতির আঘাতে আহত একজনকে মূমুর্ষ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়।  এই খবর পেয়ে প্রতিপক্ষের লোকজন ঢাকা মেডিকেলের ইমার্জেন্সি কমপ্লেক্সে ঢুকেই আহত ব্যাক্তির ওপর পুনরায় হামলা চালায়। চিকিৎসকরা বাধা দিতে গেলে তাদেরও মারধর করা হয়। ভাংচুর হয় আসবাবপত্র। আহত ব্যাক্তির মৃত্যু নিশ্চিত হলে চলে যায় হামলাকারীরা। 


এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ঘুমের অষুধ খেয়ে আত্মহত্যা করতে যাওয়া এক রোগীর মৃত্যু হয়। ডাক্তাররা বলছেন, রোগীকে প্রথমে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেয়া হয়েছিলো। অবস্থা খারাপ হলে ঢামেকে আনার পর তার মৃত্যু হয়। তবে মৃত্যুর পর রোগীর স্বজনরা ডাক্তারদের ওপর হামলা ও হাসপাতাল ভাংচুর করে।

এরপর সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত  ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির (বিইউবিটি) প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আহসানুল ইসলামকে ঢাকা মেডিগেলে আনা হয়। তারও মৃত্যু হলে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে চিকিৎসকদের মারপিট করা হয়। এ সময় আহত হন নিউরো সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ইমরান, মাশরাফি ও জুবায়ের। 

কোন নিরাপত্তা ছিলো না পুলিশের : 

এসময় প্রশাসনের লোকজন সহ সকল পক্ষ একবার আলোচনায় বসলে সেখানেও শিক্ষার্থীরা হামলা চালিয়েছে বলে জানায় চিকিৎসকরা। হাসপাতালের অন্যান্য রোগীদের অভিযোগ, পুরো ঘটনাতেই পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। হাসপাতালে কোন ধরনেই নিরাপত্তাই নেই বলে অভিযোগ করেন চিকিৎসকরা। পাশপাশি  এই ঘটনায় দোষীদের সিসি টিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেন চিকিৎসকরা। অন্যথায় ২৪ ঘণ্টা পর তারা কর্মবিরতিতে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।

ডাক্তারদের কর্মবিরতীর ঘোষণা : 

ঘটনার পরদিন রোববার ১ জুলাই থেকেই কাজে যোগ দেননি ডাক্তাররা।  দুপুর পৌনে ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক গেটে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. আবদুল আহাদ পূর্ণ শাট ডাউনের ঘোষণা দেন। 

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আমাদের চিকিৎসকরা নিজের জীবন বাজি রেখে ২৪ ঘণ্টা সেবা দিয়েছেন। এমনকি নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়েছেন, খাবার দিয়েছেন। অথচ এখন নিউরোসার্জারির অপারেশন থিয়েটার থেকে রোগীর লোক এক ডাক্তারকে বের করে এনে মারধর করে। শুধু তাই নয়, মারতে মারতে ২০০/৩০০ মিটার দূরে পরিচালকের রুমে নিয়ে যায়।

ডা. আহাদ বলেন, এ বিষয় নিয়ে আমরা দফায় দফায় বৈঠক করি। বৈঠকে দুটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। একটি হলো, অভিযুক্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। দ্বিতীয়টি হলো, আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আমরা যারা জরুরি বিভাগে থাকি তাদের নিরাপত্তার জন্য আর্মি-পুলিশসহ অন্যান্য ফোর্স এখানে থাকবে। কিন্তু আমাদের প্রশাসন সেটা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত রাতে আরও দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। বাইরে এক গ্রুপ এক ব্যক্তিকে আক্রমণ করে। সেই গ্রুপ চিকিৎসা নিতে ঢাকা মেডিকেলে আসে। তখন বিপক্ষ গ্রুপ ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে এসে চিকিৎসা নিতে আসা গ্রুপকে আবার মারধর করে। তাহলে যেখানে রোগীও নিরাপদ না, সেখানে চিকিৎসকরা কেমন করে নিরাপদ থাকবেন? কিছুক্ষণ পর জরুরি বিভাগের ইমার্জেন্সি মেডিকেল সার্ভিস সেন্টারে (ওসেক) এক যুবকের মারা যাওয়াকে কেন্দ্র করে সেখানে দায়িত্বরত ডাক্তার ও নার্সদের ওপর হামলা হয়, ইমার্জেন্সিতে ভাঙচুর করে। আমরা দেখতে পাই ডাক্তার ও রোগী কেউ নিরাপদ নয়।

ডা. আহাদ বলেন, হাসপাতালের পরিচালকের অনুরোধে রাত ১১টার পরে আমরা কর্মক্ষেত্রে ফিরে যাই। রাত থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ডিউটি করি। কিন্তু কোনো সিকিউরিটি আমরা দেখতে পাইনি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে নিজের নিরাপত্তার জন্য কর্মবিরতি করছি। সারা বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতাল বন্ধ থাকবে।

তবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, ভর্তি রোগীদের চিকিৎসা চলবে, পাশাপাশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে  জরুরি বিভাগ চালু করা হবে।

চার দফা দাবি :

১. হাসপাতালের মতো জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যেসব ব্যক্তি বা কুচক্রী মহল এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের গ্রেফতার করা। দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে তাদের শাস্তির আওতায় আনা।

২. নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে অবিলম্বে দেশের সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য পুলিশের (আমর্ড ফোর্স) মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

৩. নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে হাসপাতালে রোগীর ভিজিটর (ভিজিটর কার্ডধারী) ছাড়া বহিরাগত কাউকে কোনোভাবেই ভেতরে প্রবেশ করতে না দেওয়া। বিষয়টি স্বাস্থ্য পুলিশের মাধ্যমে নিশ্চিত করা।

৪. হাসপাতালে রোগীর সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা-অসংগতি পরিলক্ষিত হলে, তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ আকারে জানানো। এভাবে শাস্তি নিশ্চিত করা যেতে পারে, কিন্তু কোনোভাবেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।


রোগীদের দুর্ভোগ : 

রবিবার সকালে চিকিৎসকরা কজে যোগ দিলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান তারা। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জরুরি বিভাগে মেডিকেল অফিসাররা তাদের কক্ষ বন্ধ করে দেন, বন্ধ করে দেওয়া হয় জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টার। এরপর থেকেই ঢাকা চরম দুর্ভোগে পরেছেন রোগীরা। জরুরী চিকিৎসা না পেয়ে অনেকেই ছুটেছেন অন্য হাসপাতালে। 

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সরকারের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ও ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এই সমস্যা সমাধের চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়