মোস্তাফিজ, ঢামেক প্রতিনিধি : বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্নিতি, অবহেলা, দূর্ভোগ, পরিবেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, অরাজকতা সহ হাসপাতালে বহিরাগতদের আনাগোনা দুর করতে একশো দিনের কর্মসুচী হাতে নিয়ে কাজ করছেন। জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো: আসাদুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার (২৯,আগষ্ট) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় কথা।
পরিচালক বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যারা আহত নিহত হয়ে এসেছিলেন। তাদের কে কিভাবে দিনে রাতে সকলের সমন্নয়ে মেনেজ করতে পেরেছেন, কতোটুকু পারেননি সেই দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমাদের ২৬ শ বেডের হাসপাতালে রোগী থাকে তিন থেকে চার হাজার। এর মধ্যে এতো রোগী আসায় তাদের চিকিৎসা দিতে হিমসিম খেতে হয়েছে। আমরা সে সময়ে সকল কর্মচারী কর্মকর্তা নার্স সকলের ছুটি বাতিল করে দিয়ে তাদের সেবায় নিয়োজিত করা হয়েছিল। দিনে রাতে সার্বক্ষনিক রোগীদের সেবায় কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে মোট রোগী এসেছিল ২৬১৩ জন রোগী। তার মধ্যে ১৬৯৬ জন কে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ভর্তি ছিল ৮২৯ জন। এর মধ্যে ৮৮ জন চিকিৎসাধীন থেকে মারা গেছেন। ৮৪ জন কে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়। সব মিলেই আমাদের রেজিস্ট্রার মোতাবেক মৃত্যুর সংখ্যা ১৭২ জন। বর্তমানে ভর্তি আছেন ৮৮ জন।
কি ধরনের ইন্জুরী রোগী পেয়েছেন?জবাবে পরিচালক বলেন, অধিকাংশ রোগীই ছিল গুলি বিদ্ধ। প্রথম দিকে ছড়া গুলি রোগী ছিল, পরে বুলেট ইনজুরি, কিছু ছিল মারধর সহ বিভিন্ন ধরনের আঘাত।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, নিহতের সঠিক পরিসংখ্যান বলা মুসকিল। কারন অনেকেই জরুরী বিভাগে নিয়ে আসলে মৃত ঘোষণার তার মরদেহ তাদের স্বজনরা জোর করে লাশ নিয়ে গেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে পরিচালক বলেন, আমরা বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভদের হাসপাতালে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
হাসপাতালে চত্তরে এলোমেলো ভাবে বেসরকারি শতাধীক এ্যাম্বলেন্স রেখে একটি বেহাল অবস্থা করে রাখা হতো। যার ফলে হাসপাতালের স্টাফ ও চিকিৎসকদের গাড়ি রাখা যেতো না।
তিনি বলেন, আমরা এ্যাম্বোলেন্স মালিক সমিতির লোকজনের সাথে বসে সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন থেকে হাসপাতাল চত্তরে ৫/৬ টি এ্যাম্বোলেন্স থাকবে বাকি সব বাহিরে রাখতে হবে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে বর্তমানে পরিবেশ অনেকটা অরাজকতা কমে আসছে।
হাসপাতালে যে সব পরিক্ষা নিরিক্ষা হয়ে থাকে, তা বাধ্যতামুলক হাসপাতালে করতে হবে। চিকিৎসকদের কে জানিয়েছেন দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসকরা বেশির ভাগ পরিক্ষা নিরিক্ষা বাহিরে করতে দিতেন।
হাসপাতালে বহিরাগতদের (স্পেশাল) দ্বারা ডিউটি করানো হতো। তারা বিনা পয়সা কাজ করতো। যার ফলে, তারা রোগী বা রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে উৎকোচ নিয়ে থাকে। তাই আমরা বর্তমানে ঐসব স্পেশাল লোকজনদের কে বের করে দিয়েছি।
ঢাকা মেডিকেলের ১০০ দিনের কর্মসূচিতে ১৫টি ‘করণীয়’ হাতে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে , বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড স্থাপন ও বিনামূল্যে বিশেষায়িত চিকিৎসা নিশ্চিত করা।
অভ্যর্থনা বা তথ্যকেন্দ্র স্থাপন ও স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম জোরদার করা।
কেবিন সংস্কার করা।
আইসিইউর সংখ্যা বাড়ানো।
হাসপাতালের কর্মীদের উপস্থিতির হার বাড়ানো ও যথাসময়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করা।
হাসপাতাল চত্বরে জরুরী বিভাগে সামনে রোগী ও রোগীর সঙ্গে আসা লোকজনের বিশ্রামের বা বসার ব্যবস্থা করা।
হাসপাতালের আশপাশের অবৈধ দোকানপাট অপসারণ করা।
টিকিটিং ব্যবস্থায় ডিজিটাল কার্যক্রম জোরদার করা।
দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যক্রম জোরদার করা।
রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সম্পর্ক উন্নয়নে আচরণগত পরিবর্তন নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ নেওয়া।
স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম জোরদারের উদ্যোগ নেওয়া।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ আশরাফুল আলম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারির প্রধান অধ্যাপক ডাঃশফিকুল ইসলাম, নাক, কান ও গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ নুরুল ফাত্তাহ রুমী, সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ ইমতিয়াজ ফারুক, হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডাঃনুরুল ইসলাম প্রমুখ। উক্ত অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা স্ব স্ব ওর্য়াডের রোগীদের অবস্থা সম্পর্কে কথা বলেন।
হাসপাতাল পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আসাদুজ্জামান বলেন, বর্তমানে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যারা আহত হয়ে ভর্তি রয়েছেন, তাদের চিকিৎসার সকল খরচ সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে।