রাশিদ রিয়াজঃ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে বলছি, আপনি দেশে ফিরে আসেন। আপনার নাগরিকত্ব তো চলে যায়নি।’আওয়ামী লীগ দেশের অন্যতম একটি বড় দল। এ দলে অনেক ভালো মানুষ আছে, তাদের অনেককে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। অথচ তারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আপনারা দল গোছান, আপনারা তো নিষিদ্ধ না।আজ সোমবার (১২ আগস্ট) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
এম সাখাওয়াত হোসেন রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে বলেন, ‘দয়া করে আপনারা দেশকে অরাজকতার মধ্যে ঠেলবেন না, ইনক্লুডিং সদ্য বিদায় হওয়া পার্টি (আওয়ামী লীগ)। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আপনাদের সাহায্য করব। আপনারা পার্টি গোছান উইথ নিউ ফেইস (নতুন মুখ নিয়ে), উইথ নিউ অঙ্গীকার।’শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে তিনি আরো বলেন, ‘গণ্ডগোল পাকায়েন না। এসব করে কোনো লাভ হবে না।
এরশাদ জেলে গিয়েছিলেন, তবে তার দল তো এখনো টিকে আছে।’ দেশকে অরাজকতার দিকে না ঠেলে দিতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি। বলেন, ‘লোক জড়ো করুক, আর যা–ই করুক, আমি আপনাদের একটা অনুরোধ করি, এমন কিছু করবেন না যে আপনাদের (আওয়ামী লীগ) জীবন বিপন্ন হয়। এ দেশের পাবলিক এখনো আপনাদের গ্রহণ করতে আসেনি। আমি বরং মনে করি, আপনারা আপনাদের পার্টি রি–অর্গানাইজ (পুনর্গঠন) করুন।’
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আহত আনসার সদস্যদের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) দেখতে গিয়ে আজ সোমবার সকালে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের অনেক অবদান আছে উল্লেখ করে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এটা আমরা অস্বীকার করতে পারি না। দলকে পুনর্গঠন করুন, রাজনৈতিক দলের মতো যেভাবে থাকে, নির্বাচন এলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, জনগণ ভোট দিলে ভোটে যাবেন।’
এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আপনারা (আওয়ামী লীগ) এই দেশকে আরেকজনের হাতে তুলে দেবেন? তাহলে আমরা যে মুক্তিযুদ্ধ করলাম, ৩০ লাখ লোক মারা গেল, সেই ৩০ লাখ লোকের ওপর দাঁড়িয়ে দেশটা আপনি আরেকজনের হাতে তুলে দেবেন? এ দেশের লোক এত তাড়াতাড়ি ভোলেনি। কারণ, যাঁকে ধরছিলেন নেতা, সেই নেতারা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যাঁকে ধরছে, সেই নেতাকে আমরা বাঁচাতে পারছি না। অনেক নেতাকে অনেকে বাঁচিয়েছেন, আমরা জানি না এ কথা।’
মারামারি করে কোনো লাভ নেই উল্লেখ করে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এখানে আরও কিছু লোকের মৃত্যু আমরা চাই না। ইতিমধ্যে ৫০০, হয়তো আরও বেশি মারা গেছেন উভয় পক্ষের। পুলিশের এই অবস্থা হয়েছে। আনসারের এই অবস্থা হয়েছে। আমরা যদি উসকানি দিতাম, আপনারা টিকতে পারতেন না। আমরা আর্মিকে মানা করেছি। কারণ, কাকে মারবেন আপনি? পুলিশকে দিয়ে কাকে মারিয়েছেন? পুলিশকে দিয়ে মারিয়েছেন আপনার সন্তানকে। একজন পুলিশের সদস্য কী বললেন যে, স্যার, কয়টা গুলি লাগে, তাঁর ছেলে লাশ। এটা করবেন না। অনুরোধ করছি, প্ররোচনায় আসবেন না। ব্যক্তিগত স্বার্থে আপনারা এত বড় একটা দলকে নষ্ট করবেন না। এটা (আওয়ামী লীগ) আমাদের গর্ব। এটা নষ্ট করার কোনো অধিকার নেই।’
প্রতিবিপ্লবের জন্য হাজার হাজার মানুষের রক্তের প্রয়োজন উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আর কেউ যদি মনে করেন যে আবার একটা কাউন্টার রেভল্যুশন (প্রতিবিপ্লব) করে আসবেন, কাউন্টার রেভল্যুশন করতে হলে হাজার হাজার লোকের রক্তের প্রয়োজন। যদি আপনারা সেই দায়িত্ব নিতে চান, তাহলে আমার কিছু করার নেই।’
কোনো রাজনৈতিক দল নয়, দেশের তরুণ প্রজন্ম এবার বিপ্লব করেছে উল্লেখ করে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘দে হ্যাভ গিভেন দেয়ার লাইভস (তাঁরা তাঁদের জীবন দিয়েছেন), যেটা আপনারা কোনো দিন দিতে পারতেন না। পুলিশের গুলি খাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁদের কোনো দুঃখ নেই। তাঁরা (তরুণ) আপনাদের (প্রতিবিপ্লবকারীদের) মোকাবিলা করবেন। অনুরোধ করছি, দয়া করে দেশকে স্বাধীন রাখেন।’
কোনো গণমাধ্যম বন্ধ করার পক্ষে নন বলেও উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘আমি গতকাল একটা কথা বলেছি। সে জন্য দুঃখিত। রাগের মাথায় বলেছি যে আবার চাটুকারিতা করলে বন্ধ করে দেব। এটা আমার কাজ নয়।’ সব পুলিশ সদস্য খারাপ নন বলেও উল্লেখ করেন এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, তাঁদের উপলব্ধি হয়েছে। তাঁরা নিজেরাই এখন আগের পোশাক পরে আসতে চান না। অপরাধগুলো তাঁঁরা করেননি, তাঁদের দিয়ে করানো হয়েছে।
আজ সোমবার সচিবালয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন দাবি নিয়ে দেখা করে। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে সরকার থেকে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ নিয়ে বিভিন্ন কথা বলেন এম সাখাওয়াত হোসেন । তিনি এ সময় নতুন মুখ ও নতুন অঙ্গীকার নিয়ে দল গোছাতে আওয়ামী লীগকে পরামর্শ দেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় রাজনৈতিক দল। এখানে ভালো ভালো নেতা আছেন। এই দল একসময় মধ্যবিত্তের সেক্যুলার দল ছিল। মুসলিম লীগ ছিল উচ্চবিত্তের। মধ্যবিত্তের দল ছিল আওয়ামী লীগ। এত বড় মানুষের দলের নেতা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) এ দেশ স্বাধীন করেছেন। এতে কোনো সন্দেহ নেই। কারও সন্দেহ থাকার কথা নয়। তাঁর নামে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, স্বাধীনতা হয়েছে। সেই দল এভাবে ভেঙে পড়ে যাবে যে নেতা–কর্মীদের লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়াতে হচ্ছে!
নতুন নেতৃত্বে দল গোছানোর পরামর্শ দিয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আপনারা দল গুছিয়ে নিন, আপনাদের দলকে তো কেউ নিষিদ্ধ করেনি। যেকোনো দল নিষিদ্ধ করা বাজে সংস্কৃতি।’
আপনার মতামত লিখুন :