সালেহ্ বিপ্লব: [২.১] কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দেশব্যাপী সৃষ্ট সহিংস পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক গত ২৩ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি লিখেন।
[২.২] চিঠিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, হতাহতের ঘটনা, নির্বিচার গ্রেপ্তার এবং নির্যাতনে গভীরভাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন উদ্বিগ্ন। ভবিষ্যতে এ ধরনের নির্যাতন রোধ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকার সমুন্নত রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ব্যবস্থার সামগ্রিক সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ। তিনি দেশব্যাপী ইন্টারনেট বন্ধ রাখারও সমালোচনা করেন চিঠিতে।
[২.৩] হাইকমিশনার আরো লিখেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্ববৃহৎ জনবল মোতায়েনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার অবিচল সমর্থক। তবে বিক্ষোভের সময় মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, নির্বিচার গ্রেপ্তার এবং নির্যাতনের খবর গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।
[৩.১] পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গত ২৯ জুলাই ভলকার টুর্ককে তার চিঠির জবাব দিয়েছেন।
[৩.২] এই ফিরতি চিঠিতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারকে বলা হয়েছে, পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়া তৃতীয় পক্ষের সন্ত্রাসী কার্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পার্থক্যের বিষয়ে পরিষ্কার হতে হবে। কোটা আন্দোলনকে ঘিরে ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনাবলীর বিচারিক ও প্রশাসনিক তদন্ত চলছে। এমন সময়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট অন্যদের বাংলাদেশ নিয়ে চূড়ান্ত মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা উচিত। তা না হলে সে মন্তব্য আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যম এবং সাধারণ মানুষের ধারণাকে অন্যদিকে প্রভাবিত করতে পারে।
[৩.৩] মাসুদ বিন মোমেন তদন্তের আগে একপক্ষীয় প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে কোনো বিবৃতি দেওয়া থেকেও বিরত থাকতে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারকে অনুরোধ করেছেন।
[৩.৪] পররাষ্ট্র সচিব আরো বলেছেন, এটি দুঃখজনক হবে যদি জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশন আন্তর্জাতিকভাবে অর্থায়নকৃতদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কালিমা লেপনের প্রচারণায় যোগ দেয়।
[৪.১] চার পৃষ্ঠার চিঠিতে বাংলাদেশে কোটা আন্দোলনের পূর্বাপর বিষয় তুলে ধরেছেন পররাষ্ট্রসচিব।
[৪.২] তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার নিয়ে তিন সপ্তাহ শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করেছে। এ সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চালানো হয়েছে। সর্বোচ্চ আদালতের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার জন্য তাদের অপেক্ষা করতে অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে আন্দোলনকারীরা যাতে নিরাপদে আন্দোলন করতে পারে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তা নিশ্চিত করেছে।
[৪.৩] সচিব লিখেছেন, পরবর্তী সময়ে এ আন্দোলনে কিছু রাজনৈতিক দল, ধর্মীয় উগ্রপন্থী ও জঙ্গিগোষ্ঠী তৃতীয় পক্ষ হিসেবে অনুপ্রবেশ করে। আর এ তৃতীয় পক্ষের নেতৃত্ব দিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট এবং তাদের ছাত্রসংগঠন। তারা ভুল তথ্য ছড়িয়ে ও উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়ে শিক্ষার্থীদের ভুল পথে পরিচালিত করে। সেই সঙ্গে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘাত ও সহিংসতার উস্কানি দেয়।
[৪.৪] চিঠিতে বলা হয়, পরিস্থিতি খারাপ দিকে গেলে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের আড়ালে চলা সহিংসতায় দুঃখজনকভাবে কিছু মানুষ প্রাণ হারায়। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এ সময়টায় তৃতীয় পক্ষ এ আন্দোলনকে নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় এবং সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের রাজত্ব কায়েম করে।
[৫] চিঠিতে মানবাধিকার রক্ষায় জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের অবদানকে সাধুবাদ জানান পররাষ্ট্র সচিব। এই সুসম্পর্ক বজায় রেখে ভবিষ্যতে একসঙ্গে কাজ করে যাওয়ারও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। একই সঙ্গে আশা প্রকাশ করা হয়, সুবিধামতো সময়ে জেনেভা বা নিউ ইয়র্কে ব্যক্তিগতভাবে হাইকমিশনারের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সাক্ষাৎ হবে।
আপনার মতামত লিখুন :