সালেহ্ বিপ্লব: [২] চীনে তিনদিনের সরকারি সফর সম্পর্কে জানাতে রোববার বিকেলে গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতেই তিনি লিখিত বক্তব্যে এই সফরে তার কর্মসূচি এবং অর্জনগুলো তুলে ধরেন। লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে তিনি প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেবেন।
[৩] প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের আমন্ত্রণে গত ৮ জুলাই চীনে সরকারি সফরে বেইজিং যান। ১১ জুলাই তিনি দেশে ফিরেন।
[৪] ৮ থেকে ১০ জুলাই বেইজিংয়ে অবস্থানকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। তিনি গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
[৫] প্রতিনিধি পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পর বাংলাদেশ ও চীন ২১টি সহযোগিতার নথিতে সই এবং নবায়ন করেছে। এসবের বেশিরভাগই সমঝোতা স্মারক। বৈঠকে এশিয়ার এই দুই দেশের মধ্যে শক্তিশালী উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
[৬] বাংলাদেশ ও চীন উভয়েই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) বিষয়ে যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সমাপ্তিসহ সাতটি ঘোষণা পত্র সই করেছে।
[৭] প্রধানমন্ত্রীর সফর শেষে দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, এক চীন নীতির প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ এলডিসি উত্তরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঢাকাকে সহযোগিতার আশ^াস দিয়েছে বেইজিং।
[৮] ২৭ দফা সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের মধ্যদিয়ে দু’দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতা পেয়েছে। এই সম্পর্ক আরো জোরদার করার মাধ্যমে দুই দেশই পরস্পরের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে যৌথ বিবৃতিতে।
[৯] বিবৃতিতে বলা হয়, একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে, উভয় পক্ষ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক স্বার্থে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে গভীরভাবে মতবিনিময় করেছেন এবং ব্যাপক ঐক্যমতে পৌঁছেছেন।
[১০] সর্বক্ষেত্রে নিজেকে একটি মহান আধুনিক সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলা এবং চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণকে সর্বক্ষেত্রে আধুনিকীকরণের পথে অগ্রসর করার জন্য বাংলাদেশ চীনের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে। চীনের জাতীয় পুনরুজ্জীবনের চীনা স্বপ্নকে যথাসময়ে বাস্তবায়নের প্রতি আন্তরিক সমর্থন প্রকাশ করেছে।
[১১] চীন অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অর্জনকে সাধুবাদ জানায় এবং নির্ধারিত সময়সীমা অনুযায়ী ২০২৬ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশের রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের দিকে বাংলাদেশের অবিচল অগ্রগতি’ অব্যাহত রাখতে সমর্থন প্রকাশ করেছে।
[১২] দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে যে, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক একটি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দুই দেশের নেতৃবৃন্দ শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে সম্মত হয়েছে। দুই দেশ দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বকে এগিয়ে নিয়ে যেতে, দুই দেশের উন্নয়ন কৌশলগুলোর মধ্যে বৃহত্তর সমন্বয় গড়ে তুলতে, বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতাকে এগিয়ে নিতে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি ব্যাপক কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারিত্বে উন্নীত করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
[১৩] চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ককে অন্য নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০২৫ সালে চীন-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ তম বার্ষিকী উদযাপনের সুযোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
[১৪] দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে যে, চীন ও বাংলাদেশ প্রাচীনকাল থেকেই সুপ্রতিবেশী ও ভাল বন্ধু। দেশ দুটি এই বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদানের সহস্রাব্দ পুরনো ইতিহাস ভাগাভাগি করছে।
[১৫] কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ৪৯ বছরে, উভয় দেশের নেতাদের প্রজন্মের দ্বারা তৈরি ঐতিহ্যবাহী চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব শক্তিশালী থেকে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। দুই দেশ সব সময় একে অপরকে সম্মান করেছে, একে অপরের সাথে একই রকম আচরণ করেছে এবং পরস্পরের সুবিধার প্রতি লক্ষ্য রেখেছে।
[১৬] পারস্পরিক বিশ্বাসকে গভীরতর করার সাথে সাথে, দুই দেশ তাদের বাস্তব সহযোগিতায় ফলপ্রসূ ফলাফল অর্জন করেছে এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা বজায় রেখেছে, এইভাবে দেশদুটির মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব ও পারস্পরিকভাবে উপকারী সহযোগিতার একটি চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছে।
[১৭] চীনা পক্ষ দৃঢ়ভাবে বাংলাদেশকে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে, ভিশন ২০৪১-এর অধীনে পরিকল্পিত উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, এর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ও স্বাধীনভাবে তার জাতীয় অবস্থার সাথে উপযোগী একটি উন্নয়ন পথ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে পরস্পরকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। উভয় পক্ষ এ ব্যাপারে জোর দেয় যে- জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের রেজ্যুলিউশন ২৭৫৮ এর কর্তৃত্ব প্রশ্নাতীত।
[১৮] বাংলাদেশ এক-চীন নীতি ও তার অবস্থানের প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেছে, গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সরকার সমগ্র চীনের প্রতিনিধিত্ব করে এবং তাইওয়ান চীনের অংশ। বাংলাদেশ চীনের মূল স্বার্থ ও জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে দেশটির প্রচেষ্টা সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে চীনকে সমর্থন করে।
[১৯] উভয় পক্ষই পারস্পরিক স্বার্থের ইস্যুতে মতামত বিনিময়ের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে শাসক দলগুলোর মধ্যে মিথস্ক্রিয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
[২০] চীনের পক্ষ থেকে বিআরআই-তে যোগদান ও অংশ নেওয়ার জন্য দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়েছে। উভয় পক্ষ একসঙ্গে পরিকল্পনা, একসঙ্গে নির্মাণ ও একসঙ্গে লাভবান হওয়ার নীতির অধীনে উচ্চ-মানের বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে সম্মত হয়েছে।
[২১] চীনা পক্ষ এই অঞ্চলের সুষম ও টেকসই উন্নয়ন অর্জনে সহায়তা করার জন্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের কাঠামোর অধীনে বাংলাদেশের সাউদার্ন ইন্টিগরেটেড ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছে।
[২২] চীনা পক্ষ “চায়না এইড”এর কাঠামোর অধীনে বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির জন্য সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে।
[২৩] বাংলাদেশের টাটকা আম রপ্তানির জন্য চীন সেদেশে এই পণ্যটির প্রবেশ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে এবং চীনে পাট, চামড়া, জলজ পণ্য এবং অন্যান্য উচ্চমানের বিশেষ পণ্য রপ্তানি সম্প্রসারণে বাংলাদেশকে স্বাগত জানিয়েছে। চীনে উচ্চমানের বাংলাদেশি কৃষিপণ্য রপ্তানির বিষয়ে যোগাযোগ আরও জোরদার করতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
[২৪] ২০২৬ সালের পরে বাংলাদেশ এলডিসি মর্যাদা থেকে উত্তরণ লাভ করবে। চীনা পক্ষ একটি ক্রান্তিকালীন সময়ের জন্য বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ করযোগ্য আইটেমের উপর শূন্য-শুল্ক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে তার সমর্থন প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ পক্ষ ১ সেপ্টেম্বর ২০২২ থেকে কার্যকর ৯৮ শতাংশ করযোগ্য আইটেমের উপর শূন্য-শুল্ক ব্যবস্থা প্রদানের জন্য চীনের প্রতি সাধুবাদ জানিয়েছে।
[২৫] বাংলাদেশে চীনা প্রকল্প ও কর্মীসহ সকল বিদেশী বিনিয়োগের নিরাপত্তা ও বৈধ অধিকার রক্ষা ও আগ্রহের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বাংলাদেশ পক্ষ অর্থনৈতিক ও শিল্প পার্ক, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান, নতুন জ্বালানি, পানি সম্পদ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, গার্মেন্টস এবং অন্যান্য উৎপাদন খাতের মতো ক্ষেত্রে বাংলাদেশে চীনা উদ্যোগের আরও বিনিয়োগকে স্বাগত জানায়।
[২৬] উভয় পক্ষ পিপিপি মডেল মাধ্যমসহ অবকাঠামো ও নির্মাণ প্রকল্পে সহযোগিতা আরও গভীর করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ পক্ষ চীনা ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশে শাখা স্থাপনে স্বাগত জানায় এবং এর বিপরীতে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোকেও অনুরূপ সুযোগ প্রদানের কথা জানায়। [২৭] চীনা পক্ষ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে সমর্থন ও অংশগ্রহণের জন্য দুই দেশের মধ্যে ডিজিটাল ও আইসিটি থিঙ্ক ট্যাঙ্কের সহযোগিতা উন্নয়ন এবং ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একটি ডিজিটাল উদ্ভাবন ল্যাব স্থাপনের যৌথ প্রতিষ্ঠায় আগ্রহ প্রকাশ করে।
[২৮] উভয় পক্ষ ডিজিটাল অর্থনীতির ক্ষেত্রে বিনিয়োগ সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। চীনা পক্ষ ডিজিটাল অর্থনীতি শিল্পে দ্বিপাক্ষিক বিনিময়ে বাংলাদেশের ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নয়নকে জোরদার করার জন্য চীনা সফ্টওয়্যার কোম্পানিগুলিকে উৎসাহিত করবে এবং বাংলাদেশের ডিজিটাল ও আইসিটি শিল্পের উন্নয়নে ক্লাউড কম্পিউটিং-এ চীন-বাংলাদেশ উদ্ভাবনী সহযোগিতা প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে।
[২৯] উভয় পক্ষই হাইব্রিড ধান ও গম প্রজনন, রোপণ কৌশল ও কৃষি যন্ত্রপাতি সরঞ্জামগুলিতে সহযোগিতা আরও বাড়াতে চীন-বাংলাদেশ যৌথ কৃষি কমিটিকে কাজে লাগাতে সম্মত হয়েছে, যাতে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় দুই দেশের অভিন্ন উন্নয়নকে উন্নীত করা যায়।
[৩০] উভয় পক্ষই হাইড্রোলজিক্যাল পূর্বাভাস, নদী খনন, পানি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা ও খরা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরও জোরদার করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
[৩১] জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা করে চীনা পক্ষ বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।
[৩২] উভয় পক্ষই জাতিসংঘের ‘সবার জন্য প্রারম্ভিক সতর্কবাণী’ উদ্যোগটি যৌথ বাস্তবায়নের জন্য আবহাওয়া সংক্রান্ত দুর্যোগ প্রতিরোধ ও হ্রাসে সহযোগিতা বাড়াতে সম্মত হয়েছে।
[৩৩] উভয় পক্ষই গবেষণা, যৌথ প্রশিক্ষণ এবং উচ্চতর, বৃত্তিমূলক ও ডিজিটাল শিক্ষা এবং বাংলা ও চীনা ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহারিক সহযোগিতাকে উৎসাহিত করবে।
[৩৪] দুই পক্ষই কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের সহ-নির্মাণে চীন ও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়কে সহায়তা করবে, দুই দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে চীনা ও বাংলা ভাষায় মেজর এবং কোর্স স্থাপনে উৎসাহিত করবে এবং উচ্চ-স্তরের ভাষা প্রতিভা গড়ে তুলতে একে অপরকে সহায়তা করবে। উভয় পক্ষ বাংলাদেশে একটি লুবান ওয়ার্কশপ স্থাপনে সম্মত হয়েছে।
[৩৫] উভয় পক্ষ দু’দেশের সংস্কৃতি, পর্যটন, মিডিয়া, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, ক্রীড়া, যুবক, মহিলা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে পারস্পরিক যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য ২০২৫ সালকে ‘চীন-বাংলাদেশ জনগণের বিনিময় বর্ষ’ হিসেবে মনোনীত করতে সম্মত হয়েছে।
[৩৬] উভয় পক্ষ দুই দেশের নারী সমাজের মধ্যে যোগাযোগ ও মতামত বিনিময়কে এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং নারীর ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক অংশীদারিত্বের বিষয়ে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করবে।
[৩৭] উভয় পক্ষ সাবন্যাশনাল পর্যায়ে সহযোগিতা গভীর করতে এবং সিস্টার সিটি তৈরিতে উৎসাহিত করতে সম্মত হয়েছে।
[৩৮] সামুদ্রিক বিষয়ে আরও মেধা বিকাশে বাংলাদেশকে সহায়তা করবে চীন। উভয় পক্ষ দ্রুততম সময়ে দ্বিতীয় দফার সামুদ্রিক সহযোগিতা সংলাপ আয়োজনে সম্মত হয়েছে।
[৩৯] চীনা পক্ষ পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে এশিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জোটে যোগদানের জন্য বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেছে এবং বাংলাদেশকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সদস্য দেশ হিসেবে দেখার জন্য উন্মুখ, যাতে দুই পক্ষই এশিয়ান ইনিশিয়েটিভ কাঠামোর অধীনে কাজ করতে পারে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ, প্রাচীন সভ্যতা গবেষণা, যৌথ প্রত্নতাত্ত্বিক অন্বেষণ, ঐতিহাসিক স্থানগুলোর মেরামত এবং জাদুঘরের মধ্যে বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করা।
[৪০] সকলের জন্য শান্তি, উন্নয়ন এবং ভাগাভাগি সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চীনা পক্ষ বাংলাদেশের পক্ষে গে¬াবাল সিকিউরিটি ইনিশিয়েটিভ (জিএসআই) এবং গে¬াবাল সিভিলাইজেশন ইনিশিয়েটিভ (জিসিআই) উপস্থাপন করেছে।
[৪১] প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে, উভয় পক্ষ সর্বস্তরে এবং বিভিন্ন সশস্ত্র বাহিনী ও বিভাগের মধ্যে আরও বিনিময় জোরদার করতে এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বাস্তব সহযোগিতাকে আরও গভীর করতে সম্মত হয়েছে।
[৪২] উভয় পক্ষ সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখন্ডতার প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পারস্পরিক অনাগ্রাসন, পারস্পরিক অখন্ডতার প্রতি পারস্পরিক সম্মানের পঞ্চনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সম্মত হয়েছে। উভয়পক্ষ একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা এবং পারস্পরিক সুবিধা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মাধ্যমে এশিয়া এবং মানবজাতির জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য যৌথভাবে একটি সম্প্রদায় গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করবে।
[৪৩] জাতিসংঘকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা সুরক্ষায় আন্তর্জাতিক আইনের ভিত্তিতে শৃঙ্খলা এবং জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য ও নীতির ভিত্তিতে বৈশ্বিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণকারী মৌলিক নিয়মগুলি রক্ষা করতে, সত্যিকারের বহুপাক্ষিকতাকে একত্রে সমর্থন করতে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বৃহত্তর গণতন্ত্রকে উন্নীত করতে এবং একটি সমতা ও সুশৃঙ্খলভিত্তিক বহুমাত্রিকতাবাদ এবং সর্বজনীনভাবে উপকারী এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক বিশ্বায়নকে উৎসাহিত করতে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।
[৪৪] চীনা পক্ষ ব্রিকস সদস্যপদ লাভের জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টা ও এসসিও-র সাথে যুক্ত হওয়ার আগ্রহকে স্বাগত জানায়।
[৪৫] বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ‘সভ্যতার মধ্যে আন্তর্জাতিক সংলাপ দিবস’ সফলভাবে প্রতিষ্ঠা করা এবং সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ধর্মের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সম্মান বৃদ্ধিতে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে।
[৪৬] ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রথম প্রস্তাবিত ‘কালচার অব পিস’ ফ্ল্যাগশিপ রেজোলিউশনের ২৫তম বার্ষিকীতে চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান হয়।
[৪৭] উভয় পক্ষ ফিলিস্তিন প্রশ্নটি অধিকতর গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে এবং শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু ও স্থায়ী শান্তি অর্জনের জন্য ধাপে ধাপে প্রচেষ্টা চালানোর জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
[৪৮] উভয় পক্ষ মানবাধিকারের রাজনীতিকরণের বিরোধিতা করে এবং যৌথভাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সমস্ত দিকগুলোর সুষ্ঠু অগ্রগতির প্রচারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
[৪৯] বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত জনগণের দ্রুত প্রত্যাবাসনই তাদের সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত জনগণের সমস্যাটির শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির জন্য আলোচনার সুবিধার্থে গঠনমূলক ভূমিকা চালিয়ে যেতে চীনের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে চীনের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করা হয়েছে।
[৫০] এই বাস্তুচ্যুত মানুষদের দ্রুত প্রত্যাবাসন অর্জনে সহায়তা করতে সংলাপের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরীসহ চীন তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
[৫১] জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ- এ ব্যাপারে উভয় পক্ষ একমত। জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন এবং এর প্যারিস চুক্তির পূর্ণ ও কার্যকর বাস্তবায়নকে এগিয়ে নিতে বহুপাক্ষিকতার কাঠামোর মধ্যে ও সমতার নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণভাবে অভিন্ন, কিন্তু ভিন্নতাপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে নিজ নিজ স্বক্ষমতা অনুসারে একসঙ্গে কাজ করা সকল রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য।
আপনার মতামত লিখুন :