মনজুর এ আজিজ: [২] ঋণ আদায় না করে ঋণের সুদকে আয় দেখিয়ে মুনাফা দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো। সেই মুনাফা থেকে লভ্যাংশ দিচ্ছে। এমনকি সরকারকে ট্যাক্সও দিচ্ছে। আসলে কোনও আয়ই হয়নি, কার্যত ব্যাংকগুলো আমানতের অর্থ লুটে খাচ্ছে বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।
[৩] তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো ঘরের থালাবাটি বেচে কোরমা-পোলাও খাচ্ছে, এভাবে আর কতদিন চলতে পারবে? আমানত শেষে গ্রাহকের অর্থ ফেরত দিতে পারবে না। শনিবার পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) ‘বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতে দুরবস্থার কারণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
[৪] ড. মনসুর বলেন, ব্যাংক খাতের সমস্যাগুলো সমাধান না করে জিইয়ে রাখা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ঘরের দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা ঝাড়ু দিয়ে কার্পেটের নিচে রেখে দিচ্ছে। ইআরএফ সম্পাদক আবুল কাশেমের পরিচালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। অনুষ্ঠানে ব্যাংকিং খাতের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দৈনিক সমকালের বিশেষ প্রতিবেদক ওবায়দুল্লাহ রনি এবং প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সানাউল্লাহ সাকিব।
[৫] আহসান এইচ মনসুর বলেন, শুধু রপ্তানির তথ্য লুকোনো হয় কি? সবচেয়ে বেশি তথ্য লুকোনো হচ্ছে আর্থিক খাতে। অথচ আর্থিক খাতেই সঠিক তথ্য সবচেয়ে বেশি জরুরি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে খেলাপি ঋণ দেখানো হচ্ছে এখন ১১ শতাংশ। বাস্তবে খেলাপি ২৫ শতাংশ। এভাবে আর্থিক খাত বেশি দিন চলতে পারে না। তদারকির অভাবে আমাদের মুদ্রাবাজার হাতছাড়া হয়েছে, মূল্যস্ফীতিও আমাদের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
[৬] তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম বেড়েছে এবং আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। এখন ব্যাংক নিজেই নিজেকে রক্ষা করতে পারছে না। তাহলে আমানতকারীদের আমানতের সুরক্ষা দেবে কীভাবে? এটা খুবই হতাশাজনক।
[৭] ব্যাংক খাত নিয়ে প্রবন্ধে বলা হয়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, খেলাপি ঋণ ও আর্থিক কেলেঙ্কারির কারণে সরকারের প্রশংসা ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা হিসেবে এ দায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর বর্তায়। দেশে আার্থিক দুরবস্থার কারণে ঋণনির্ভর হয়ে পড়ছে বাংলাদেশ। তাছাড়া বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজানীয় টাকাও নেই, ডলারও নেই। পর্যাপ্ত ডলার না থাকার কারণে জ্বালানি খাতসহ বিভিন্ন খাতের বিল পরিশোধ করতে পারছে না সরকার।
[৮] বর্তমানে ব্যাংক আমানতের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৮ থেকে ৯ শতাংশ। এ বছর যদি বাড়ে, তাহলে সেটা সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ হতে পারে। সে হিসাবে এ বছর আমানত আসবে এক লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো। নতুন অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক থেকে ঋণের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা কীভাবে দেবে ব্যাংক? সরকার এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলে ব্যক্তি খাত টাকা কোথায় পাবে? সম্পাদনা: সমর চক্রবর্তী
এসবি২
আপনার মতামত লিখুন :