কাকন রেজা: দৈনিক সমকালের শিরোনাম, ‘নির্বাহী বিভাগের কাছে সিদ্ধান্ত চান কোটা আন্দোলনকারীরা’। প্রশ্ন করতে শিখুন, নির্বাহী বিভাগের প্রধান যখন বলছেন আইনের কথা, তখন কেন আন্দোলনকারীরা সিদ্ধান্ত চাইছে নির্বাহী বিভাগের কাছেই। প্রশ্ন করতে শিখুন, যদি দেশের রাজনৈতিক সংঘাতের প্রধান বিষয় ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ বিচার বিভাগের রায়ে বাতিল হতে পারে, তবে কেন আন্দোলনকারীরা কোটা বিষয়ে আদালতের উপর নির্ভর করতে চাইছে না। প্রশ্ন করতে শিখুন, আদালত স্থিতাবস্থা দেবার পরও কেন আস্থা পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা।
প্রশ্ন করতে শিখুন, পিএসসির প্রশ্নপত্রের ফাঁসের দায় কার কার নিতে হবে। শুধুমাত্র গাড়িচালকে ট্রল করেই কি সব সমস্যার সমাধান সম্ভব? প্রশ্ন করতে শিখুন, কারা কারা প্রশ্নফাঁসে নিয়োগ পেয়েছে। তাদের চাকরি জীবনের দেয়া সিদ্ধান্ত, বেতন ও অন্যান্য সুবিধার নামে তাদের পকেটে ঢোকা সরকারি টাকা এসবের কী হবে? প্রশ্ন করতে শিখুন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে চাকরি নিশ্চিত করার প্রচেষ্টাই কি ছাত্র সমাজের একমাত্র লক্ষ্য? প্রশ্ন করতে শিখুন, ৫২ ও ৬৯ এর আন্দোলনের ছাত্রসমাজের ভূমিকা কী ছিলো? স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা কাদের ছিলো, ছাত্র সমাজের নয় কি?
বলি, প্রশ্ন করতে শিখুন। প্রশ্ন করার লাভ দ্বিমুখী। নিজে শেখা যায়, অপরকেও মনে করিয়ে দেয়া যায়, তাদের কর্তব্য ও অবস্থান। এই যে ধরুণ চীন সফরে বিতর্কিত টেক জায়ান্ট হুয়াওয়ের সাথে চুক্তির কথা। পশ্চিমা বিশ্ব, যারা আমাদের উৎপাদিত পণ্যের ক্রেতা। যেখানে আমাদের বাজার, সেখান থেকে আমাদের আয় হয়। সেই বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে যে প্রতিষ্ঠানের উপর তার সাথে চুক্তিতে আমাদের লাভ-লোকসান কতটা, এসব নিয়েও প্রশ্ন করতে শিখুন। প্রশ্ন করতে শিখুন, বাংলাদেশের উপর ভারতের রেল চলাচলের টার্মটি কী, এটা কী করিডোর নাকি ট্রানজিট। করিডোর আর ট্রানজিটের পার্থক্যটা প্রশ্ন করে জেনে নিন।
প্রশ্ন করুন, এক্ষেত্রে আমাদের লাভ-লোকসান নিয়ে। প্রশ্ন করুন, এখন পর্যন্ত আমরা ভারতকে যা দিয়েছি, তার বিপরীতে আমাদের প্রাপ্তি কী? প্রশ্ন করুন, ভারত নির্বাচনে সহায়তা করেছে, তার লাভ উঠেছে শাসকদলের ঘরে, বিপরীতে আমজনতার ঘরে কী উঠলো? ইসলামের ঈমানের সবচেয়ে দুর্বল অংশ হলো মনে মনে প্রতিবাদ করা। যদি দুর্বল হন প্রশ্নটা অন্তত নিজেকেই মনে মনে করুন। তবুও তো নিজের মনকে বোঝাতে পারবেন কিংবা বুঝতে পারবেন আপনার অবস্থানটাকে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলাম লেখক
আপনার মতামত লিখুন :