শিরোনাম

প্রকাশিত : ০৮ জুলাই, ২০২৪, ১১:৩৮ দুপুর
আপডেট : ০৮ জুলাই, ২০২৪, ০৫:১৮ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে অগ্রাধিকারে বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে থাকলেও গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে সুরাহা হতে পারে!

ফাইল ছবি

আজাহার আলী সরকার: চারদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীনের উদ্দেশে আজ সকালে ঢাকা ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১০ দিনের ব্যবধানে দু’দফা ভারত সফরের পর সরকার প্রধানের অত্যাসন্ন চীন সফর রাজনীতি ও কূটনীতিতে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। সফরটি ‘গেম চেঞ্জার’ হবে বলে চীনের তরফে করা আগাম মন্তব্যে বাংলাদেশের কাছের এবং দূরে অন্য বন্ধু রাষ্ট্রগুলো নড়েচড়ে বসেছে। অতি উৎসাহী অনেকে এ বিষয়ে খোঁজখবর নিতে গিয়ে কোথায় গেমটি চেঞ্জ হচ্ছে ?  সে প্রশ্ন রেখেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছেও। বিষয়টি এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে, পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে পশ্চিমা এক বন্ধু রাষ্ট্রের প্রতিনিধির সম্প্রতিক আলাপে মুখ্য আলোচ্য হয়ে উঠেছিল সরকার প্রধানের চীন সফর। সেখানে এশিয়ার দুই  বড় শক্তি ভারত ও চীনের সঙ্গে বাংলাদেশ কীভাবে এত সহজে ‘ব্যালেন্স করে’ সেটাও জানতে চান ওই পশ্চিমা কূটনীতিক। জবাবে ‘কাজটি মোটেও সহজ নয়’ বলে দাবি করেন সচিব।

এখানে উল্লেখ্য যে, প্রধানমন্ত্রীর বহুল আলোচিত চীন সফরের অনেক কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। গতকাল রোববার সন্ধ্যা অবধি ঢাকাস্থ চীনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স এবং তার টিম যৌথ ঘোষণার ড্রাফ্‌ট নেগোসিয়েশনে সেগুনবাগিচাতেই ছিলেন। ওই সফরে কোনো চুক্তি এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি ঢাকা ও বেইজিং। দায়িত্বশীলরা রোববার সন্ধ্যায় এই প্রতিনিধিকে বলেন, মোট ২৪টি সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত ১৫-১৬টির খসড়ার বিষয়ে দু’পক্ষ নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। আরও ৪-৫টির বিষয়ে নেগোসিয়েশন চলমান। সবমিলে ২০-২২টি সমঝোতা সই হতে পারে। সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় যেতে পারে।

ঢাকা-বেইজিং কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হবে ২০২৫-এ। দুই দেশের সম্পর্কের সূবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই রাষ্ট্রীয় সফর  হচ্ছে। পাঁচ বছর পর বেইজিং সফরে গিয়ে দুই দেশের ‘অংশীদারত্বকে নতুন উচ্চতায়’ নিতে প্রধানমন্ত্রী চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন। এসময় রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে দুই সরকারের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে চীনের আরও বেশি যুক্ততার মতো বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পাবে।

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, এই সফরে বাংলাদেশের অগ্রাধিকার থাকবে বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে। সে ক্ষেত্রে চীনা মুদ্রায় ৫০০ কোটি ডলারের ঋণ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়ন উদ্যোগের মতো বিষয়গুলোতে চীনের অংশীদারত্ব গুরুত্ব পাবে। সূত্রমতে,দুই দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদদের আলোচনায় সফরের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু বিষয় সুরাহা হতে পারে। কারণ সফরটি পুরোপুরি দ্বিপক্ষীয় হলেও সম-সাময়িক বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ঘটনাপ্রবাহের প্রেক্ষাপটে ভূ-রাজনীতি ও ভূ-অর্থনৈতিক নানা আলোচনা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠতে পারে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সফরের নানা বিষয় নিয়ে চীনের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এসব আলোচনায় অর্থনৈতিক সহযোগিতার নানা বিষয় প্রাধান্য পাচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও  জানালেন কোনো চুক্তি নয়, চীনের সঙ্গে সই হতে পারে ২০টি সমঝোতা ।

এদিকে রোববার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান চীনের সঙ্গে কোনো চুক্তি হবে না। তবে ২০টির মতো সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি রয়েছে। মন্ত্রী জানান, আগামী বুধবার বেইজিংয়ের গ্রেট হল অব দ্য পিপলে চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক হবে। সেখানে তাদের সঙ্গে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলও থাকবে। এরপর দুই দেশের সরকারপ্রধানের উপস্থিতিতে ওই ২০ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে পারে এবং কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন ঘোষণা হবে। প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর উপলক্ষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাত, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল ইকোনমি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহায়তা, ৬ষ্ঠ ও ৯ম বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ সেতু নির্মাণ, বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য রপ্তানি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পিপল টু পিপল সংযোগ প্রভৃতি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। তিস্তা নিয়ে চীনের প্রস্তাবের বিষয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, তিস্তা বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের যৌথ নদী। তিস্তা নদীর যৌথ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে ভারত একটি প্রস্তাব দিয়েছে। তারা একটি কারিগরি দল পাঠাবে বলে আমাদের জানিয়েছে। বাংলাদেশে এসে ওই কারিগরি দল যৌথভাবে সমীক্ষা করে কী করা উচিত, সে ব্যাপারে পরামর্শ দেবে। যেহেতু তিস্তা দুই দেশের যৌথ নদী এবং যাদের সঙ্গে যৌথ নদী, তাদের প্রস্তাব আছে, সুতরাং আমাদের সেই প্রস্তাব আগে বিবেচনা করতে হবে।

চীনও এ ক্ষেত্রে একটি প্রস্তাব দিয়েছে, সেটিও ভালো। যেহেতু ভারত প্রস্তাব দিয়েছে, আমরা মনে করি সেটি ভালো দিক। তারা (চীন) যদি আলোচনায় আনে, তাহলে তো আলোচনা হবে। মন্ত্রী বলেন, চীন সফরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবে।

মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী সোমবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন। একইদিন চীনের স্থানীয় সময় বিকাল ৬টায় বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর চারদিনের এই সফরকালের কর্মসূচির তথ্য তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আগামীকাল ৯ জুলাই সকালে প্রধানমন্ত্রী এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিন লিকুনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। একইদিন প্রধানমন্ত্রী সাং-গ্রি-লা সার্কেলে ‘সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না’ শীর্ষক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।

ওইদিন দুপুরে প্রধানমন্ত্রী ১৪তম জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ওয়াং হুনিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। ওইদিন বিকালে প্রধানমন্ত্রী ঐতিহ্যবাহী তিয়েনআমেন স্কয়ারে শ্রদ্ধা জানাবেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী বেইজিং সফরের সময় বঙ্গবন্ধুর ‘আমার দেখা নয়াচীন’ চীনা ভাষায় অনূদিত বইটির মোড়ক উন্মোচন করবেন।

হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, আর্থিক সহায়তা এবং বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ চীনের সহায়তা কামনা করবে। একইসঙ্গে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চীনের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ চীনের প্রতি সমর্থন প্রদান করে যাবে। অর্থমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন। ১১ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়