আনিস তপন: [২] মিথ্যাচার ও অপপ্রচারকারীদের বিপক্ষে চলচ্চিত্রের শিল্পী,পরিচালক, প্রযোজকসহ সংশ্লিষ্টদের শক্ত অবস্থান নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
[৩] শনিবার রাজধানীর সার্কিট হাউজ রোডের তথ্য ভবন মিলনায়তনে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তিনি।
[৪.১] প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিল্পী সমাজ, নাগরিক সমাজ এবং ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির সবাই অসত্যগুলোর প্রতিবাদ করুন। সরকার কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিলে, সরকারের কোন ব্যর্থতা-বিচ্যুতি থাকলে অবশ্যই তুলে ধরবেন, সমালোচনা করবেন, বিরোধিতা করবেন।
[৪.২] কিন্তু যারা মিথ্যা কথা বলে, অর্ধসত্য বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করবে, দেশকে আত্মঘাতী একটা অবস্থায় নিয়ে যাবে তাদের মুখোশ উন্মোচন করুন, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করুন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে সব বিষয়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের সঠিক তথ্য দেওয়া হবে।
[৫.১] দেশের চলচ্চিত্র ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের উদ্দেশে এ সময় প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, এ দেশে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কিছু কিছু গোষ্ঠী আছে যারা অপতথ্য ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধিতা থাকতে পারে, ভিন্ন মত থাকতে পারে।
[৫.২] কিন্তু অসত্য কথা বলে, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করলে সেখানে শিল্পী সমাজ এবং ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির যারা আছেন তাদেরও কিছু দায়িত্ব পালন করতে হবে।
[৬.১] সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সমঝোতা স্মারকের বিষয়গুলো নিয়ে যেভাবে মিথ্যাচার হয়েছে এবং যেভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে, এসব জায়গাতে শিল্পী সমাজ এবং ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে সম্পৃক্তদের দেশের এবং মানুষের স্বার্থে সত্যের পক্ষে অবদান রাখতে হবে।
[৬.২] একটা সমাজে যদি সত্য হারিয়ে যায়, মিথ্যা যদি সামনে চলে আসে তাহলে সেটা কারো জন্যই মঙ্গল নিয়ে আসবেনা। অপপ্রচারকারীরা বলে দিচ্ছে বাংলাদেশের বুক চিরে ভারতে ট্রেন চলে যাবে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে এবং এখান দিয়ে অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে চলে যাবে, বাংলাদেশকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে, যেটি একটি ডাহা মিথ্যা কথা। এটিকে প্রতিরোধ করতে হবে।
[৭] সমঝোতা স্মারকে পরিষ্কারভাবে বলা আছে একটা রিজিওনাল কানেক্টিভিটি দুই দেশ করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে নেপাল ও ভুটানের ৫০ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা আছে। বাংলাদেশের পণ্য ভারতের মধ্য দিয়ে নেপাল-ভুটানে প্রবেশ করে। এখন যদি সরাসরি ট্রেন লাইন করা যায়, তাহলে বাংলাদেশের ব্যবসা ও রপ্তানি প্রসার ঘটবে। সমঝোতা স্মারকে বলা আছে, নেপাল ও ভুটানে ভারতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য যাবে।
[৮] ভারতের গ্রিড লাইন ব্যবহার করে এখানে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে আসছি। এই মুহূর্তে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির সমঝোতা হলেও নেপালে ৭২ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা আছে, যেটা এখন তাদের চাহিদা নেই বলে উৎপাদন করে না। কিন্তু আমাদের চাহিদা আছে। আমরা যদি নেপাল থেকে ক্লিন এনার্জি আমদানি করতে পারি, তাহলে আমরা জীবাশ্ম জালানির ব্যবহার কমিয়ে ক্লিন এনার্জি আনতে পারবো। যেটা বাংলাদেশ, ভারত, নেপালপসহ গোটা পৃথিবীর জন্য ভালো, সেটা কিভাবে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে হয়?
[৯.১] চলচ্চিত্র নির্মাণে অনুদান প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে অবদান রাখতে চান, প্রণোদনা দিতে চান। আমরা চাই প্রণোদনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ভালো চলচ্চিত্র যাতে নির্মাণ হয়। এ লক্ষ্য অর্জনে আমাদের যা কিছু করতে হয় তা আমরা করবো।
[৯.২] অনুদানের চলচ্চিত্র বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আমরা আরো স্বচ্ছতা ও বস্তুনিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে চাই। এক্ষেত্রে সংখ্যার চেয়ে গুণগতমানের দিকে আমরা মনোযোগ দিতে চাই। এ জন্য বাছাই প্রক্রিয়া আরো উন্নত করা হবে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করা হবে। শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠিতদের প্রণোদনা দেওয়া হবে সেটি নয়, নতুনদের কাছে আমরা পৌঁছাতে চাই, তারা যাতে সুযোগ পেয়ে নিজেদের দাঁড় করাতে পারে।
[১০.১] প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে বিশ্বে প্রতিনিধিত্ব করা, তুলে ধরা এবং ব্র্যান্ডিং করার জন্য চলচ্চিত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য চলচ্চিত্রকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে আরো মনোযোগ দেয়ার জন্য আলাদা বিভাগ বা কাউন্সিল করার বিষয়টি সরকার ভেবে দেখবে।
[১০.২] দেশের চলচ্চিত্রের যে সম্ভাবনা আছে, সেটা কাজে লাগানোর জন্য বঙ্গবন্ধু ফিল্ম সিটি, এফডিসি এবং যে জায়গাগুলো আছে, সেখানে আমাদের যা বিনিয়োগ করতে হয়, যা তৈরি করতে হয়, সেটা সরকার করবে। একইসঙ্গে নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, পশ্চিমবঙ্গ এমনকি পাকিস্তানের চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট বাজার ধরতে চাই। সম্পাদনা: কামরুজ্জামান
এসবি২
আপনার মতামত লিখুন :