শিরোনাম
◈ পলাতক পুলিশ সদস্যদের বেতন বন্ধ, হচ্ছে মামলা, বেশির ভাগই ভারতে অবস্থান করছেন ◈ আওয়ামী লীগ এখনই নিষিদ্ধ নয়, তবে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে : উপদেষ্টা নাহিদ ◈ ক্ষমতার ভারসাম্য, একজন দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয় : বিএনপির সংস্কার প্রস্তাব ◈ ড. ইউনূসকে নিয়ে ১০ বছর আগে যা বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি ◈ জামায়াত কাদের সঙ্গে জোট করবে, জানালেন সেক্রেটারি গোলাম পরোয়ার ◈ ৫৩ বছর দেখেছি, আমরা আরও দু-এক বছর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে দেখতে চাই:  নুরুল হক (ভিডিও) ◈ নবীনগরে বিপনী মার্কেটে আগুন, পুড়ে ছাই ১২ দোকান ◈ ‘ওরেশনিক’ রাশিয়ার নতুন ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে যা জানা গেল ◈ ফেসবুকে দাবি ‘মুগ্ধ ও স্নিগ্ধ একই ব্যক্তি’, যা বলছে ফ্যাক্ট চেক ◈ মাগুরায় উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি গ্রেপ্তার

প্রকাশিত : ০৫ জুলাই, ২০২৪, ০৯:৫৭ রাত
আপডেট : ১৯ নভেম্বর, ২০২৪, ০৯:০০ সকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পদ্মা কাব্যের অমর কবি শেখ হাসিনা (ভিডিও)

শাহরিয়ার বিপ্লব: [২] ‘পদ্মার ঢেউ রে, মোর শূন্য হৃদয় পদ্ম নিয়ে যা যা রে, এই পদ্মে ছিলরে যার রাঙা পা, আমি হারায়েছি তারে---’ পদ্মায় হারানো কত স্বপ্নের আকুতি নিয়ে ১৯৪১ সালে শচীন দেব বর্মন দরাজ গলায় গেয়েছিলেন। যা দুই বাংলার হাহাকার করা শূন্য হদয়ের কালজয়ী গান। কিন্তু শূন্যতা আর পূরণ হয়নি। কৃষ্ণকালো বধুয়াকে পদ্মার চাঁদের আলোয় প্রেমের বাঁশি বাজিয়ে খুঁজেছিলেন নজরুল। সেই বধূয়াকে আজো খোঁজা হয়।  মানিক বন্দোপাধ্যায় 'কীর্তিনাশা' রাক্ষুসী পদ্মাকে নিয়ে দেবীগঞ্জ আমিনবাড়ির কেতুপুর গ্রামের কপিলা ও কুবের মাঝির ফ্রয়েডিয় প্রেমের ভাঙ্গাগড়ার জীবনকে রিক্ত শ্রমদাসের বাইরে কালজয়ী উপন্যাস ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেননি। ’সর্বনাশা পদ্মা নদী, তোর কাছে শুধাই-তোর কি আর কুল কিনারা নাই ’- আব্দুল আলীম ছয়জন মাঝি নিয়ে এখনো উত্তর খুঁজেন ভাটিয়ালী গানে। 

[৩] হাজার বছরের হৃদয়ভাঙা সব উপন্যাস, কবিতা ও গানে নিরুত্তর পদ্মা এবার জবাব দিয়েছে। একজনের কাছে। তিনি শেখ হাসিনা। ধমনিতে যার বিদ্রোহের বীজ, যিনি রাজনীতির অমর শিল্পী। গীতিকার। সুরকার। একজন ঔপন্যাসিক। একজন কাহিনীকার। তাঁর ঐতিহাসিক সুর, ‘তোমাদের টাকা নেবো না।’ এই বিদ্রোহী সুরেই রচিত হলো পদ্মার কালজয়ী উপন্যাস। অমর প্রেমের সুরেলা গান। জাতির পিতার কন্যা। যাকে চোখ রাঙানো যায় না। যাকে অপমান করে থামানো যায় না। যাকে ঠেকানো যায় না। যাকে দাবিয়ে রাখা যায় না। স্বপ্ন জয়ের সীমানা। পদ্মাজয়ী হাসিনা। সবাই বলে স্বপ্নের পদ্মাসেতু। নিউ লাইফলাইন অব বাংলাদেশ। 

[৪] কিন্তু স্বপ্নটা কার ছিলো ? কেইবা পূরণ করে দিলো এই স্বপ্ন? জেনে নেয়া যাক পিছনের ইতিহাস। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ইশতেহার অনুযায়ী পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০০৯ সালে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা ও ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংক থেকে অর্থ পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়। সেই বছরেই ২৮ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের সাথে ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। কথা ছিল ২০১১ সালে শুরু হয়ে ২০১৩ সালের মধ্যে সেতুর মূল কাজ শেষ হবে। সে অনুযায়ী এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাংকের সাথে ১২০ কোটি মার্কিন ডলার, ১৮মে জাইকার সাথে ৪১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ও ৬ জুন এডিবির সাথে ৬১ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ঋণচুক্তি হয়।

[৫] ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতির অভিযোগ: হঠাৎ করে বিশ্বব্যাঙ্ক ঋণের টাকা ছাড়ার আগেই দুর্নীতির অভিযোগ তোলে। ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর অর্থায়ন স্থগিত করে। ২০১২ সালের ২৯ জুন দরপত্রে অংশ নেওয়া এসএনসি-লাভালিনের সঙ্গে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ঋণচুক্তিটি সম্পূর্ণ বাতিল করে দেয়। পরে অন্য দাতা সংস্থাগুলোও তাদের প্রতিশ্রুত চুক্তি বাতিল করে। সরকারের অনুরোধে ২০ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক রাজি হলেও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থায়ন করতে অসম্মতি জানায়। 

[৬] স্বপ্নডানা ভেঙে পড়ে: পদ্মাপাড়ের স্বপ্ন আবারো হোঁচট খায়। পদ্মার জলেই ডুবে যায় লক্ষ নারী-পুরুষের বুকের ভিতরে জমানো আশা । বিরোধীদল বিএনপিসহ একটি মহল এতে উল্লাস প্রকাশ করে। যতটা না দুর্নীতির তার চেয়ে বেশি উল্লসিত হয়, সেতু হবে না এই আনন্দে। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া বলেন, এই সরকার আর কোনোদিনও পদ্মা সেতু করতে পারবে না। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোই শুধু নয়, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমও সমলোচনার ঝড় তোলে। অভিযোগ করা হয়- কানাডার এক নির্মাণ সংস্থা সরকারি উচ্চমহলে প্রচুর ঘুষ দিয়েছে। এতো বিরাট প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সরকারকে বিপাকেই পড়তে হয় সে সময়। 

[৭] বুমেরাং হয় অভিযোগ: কানাডার আদালত অভিযোগটি কাল্পনিক বলার পরই মোড় ঘুরে যায় সবকিছুর। অভিযোগের যে তীরটা ছিল সরকারের দিকে, তা পুরোপুরি উল্টো ঘুরে যায়। কানাডার আদালত রায় দেয় ‘পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়নি, অভিযোগগুলো ছিল রটনা’। খবর ছাপে টরোন্টো স্টার। মামলার বিচারক নরডেইমারের রায়ে দুর্নীতির তীরে বিদ্ধ হন নোবেল জয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস ও বিরোধী মহল। প্রমাণ আসতে শুরু করে প্রকল্প বানচাল করতে তিনিই কলকাঠি নেড়েছিলেন। পাল্টে যায় দৃশ্যপট। 

[৮] অবশেষে: আদালতে রায় হওয়ার আগেই ষড়যন্ত্র আর চক্রান্তের বিরুদ্ধে ইষ্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে বাঙ্গালীর ত্রাণকর্তা হিসাবে এগিয়ে আসেন জাতির জনকের কন্যা, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের সাহায্য নেব না। যদি বেঁচে থাকি তবে সেতু করবোই। সমালোচনাকারীরা হাসলো। উপহাস করলো বিশ্বব্যাংক। সরকারের কিছু মন্ত্রীও শঙ্কিত হলেন। আড়ালে আবডালে বলতে শোনা গিয়েছিল বিশ্বব্যাংককে চ্যালেঞ্জ করে সরকারে থাকা যাবে না। 

[৯] কিন্তু সকল ভয়কে জয় করে ২০১২ সালের ৪ জুলাই জাতীয় সংসদে শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা ঘোষণা করলেন। ৮ জুলাই সংসদে পরিকল্পনা পেশ করেন। ৯ জুলাই মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিশ্ব ব্যাংক অর্থ দিলেও  নেওয়া হবে না। ২০১৩ সালের ২৬ জুন নতুন দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০১৪ সালের ১৭ জুন চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপের সঙ্গে চুক্তি হয়।  

[১০] ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর মূল পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০২২ সালের ২৫ জুন এই সেতু উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের একটি উক্তির মধ্যেই পদ্মাসেতু কাব্যের সারমর্ম নিহিত রয়েছে। উক্তিটি ছিলো-‘এই সেতু শুধু ইট, পাথর আর কংক্রিট দিয়েই নির্মাণ হয়নি। এটি নির্মাণ করতে হয়েছে ভালোবাসা, আবেগ আর সাহস দিয়ে।’ সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়