সুজন কৈরী: [২] হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গত ২৮ জুন সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মাহাবুব পাঠান দীর্ঘদিন ধরে স্বপরিবারে লিবিয়ায় অবস্থান করে লিবিয়ার বেনগাজীর বাংলাদেশী কমিউনিটিকে নেতৃত্ব দেওয়ার আড়ালে মানব পাচার চক্র পরিচালনা করছিলেন বলে জানিয়েছে সিআইডি।
[৩] গ্রেপ্তার মোহাম্মদ মাহবুব পাঠান ইতোমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
[৪] সোমবার সিআইডি জানিয়েছে, গ্রেপ্তার মাহাবুব পাঠানের চক্রটি বাংলাদেশিদের উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়া নিয়ে গিয়ে আটকে রাখতো। এরপর তাদের শারিরীক নির্যাতন করে নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ আদায় করতো।
[৫] মুক্তিপণ আদায়ের পর বিপদজনকভাবে নৌযাত্রার মাধ্যমে ইউরোপে পাঠানোর চেষ্টা করতো। ২০২১ সালের ১৭ মে ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়া উপকূলে মাহাবুব পাঠানের চক্রের শিকার ৬৪ বাংলাদেশিসহ সর্বমোট ১০৪ জন অভিবাসী ভাসতে থাকা অবস্থায় উদ্ধার হন। পরে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তায় তিউনিসিয়ায় থাকা এসব বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়।
[৬] তাদের মধ্যে একজন ভুক্তভোগী মিলন বেপারী মানবপাচারকারী চক্রটির বিরুদ্ধে নড়িয়া থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেছেন। পরে মামলাটি তদন্ত করে সিআইডির মানবপাচার মনিটরিং সেল।
[৭] সিআইডির তদন্তে জানা যায়, চক্রটি মিলন বেপারী ও অন্যান্য ভিকটিমদের এমিরেটস বিমানে করে প্রথমে দুবাই নিয়ে যায়। এরপর সেখান থেকে বিমানে মিশর হয়ে লিবিয়ার বেনগাজী নিয়ে যায়। লিবিয়ার বেনগাজীতে মূলহোতা মাহাবুব পাঠান ও তার সহযোগিরা তাদের আটক রেখে শারিরীক নির্যাতন করে।
[৮] নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমদের পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ২০২১ সালের ২ মে বাদীর মা বিউটি আক্তার ও চাচী মনি বেগম আসামিদের দেওয়া ব্যাংক একাউন্টে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮২০টাকা পাঠান। সেইসাথে বাংলাদেশে অবস্থান রত চক্রের সদস্য হেনা বেগমকে নগদ ৪ লাখ টাকা দেন।
[৯] এরপর মাহাবুব পাঠান ও তার সহযোগিরা কৌশলে বাদীসহ অন্যান্য ভিকটিমদের ইতালীতে পাঠানোর কথা বলে দ্বিতীয় পর্যায়ে লিবিয়ার ত্রিপলীতে এই চক্রের সক্রিয় সদস্য মনিরেন ক্যাম্পে পাঠায়। সেখানে বাদী ও ভিকটিমদের নিয়ে আটক করে দ্বিতীয় দফায় শারীরিক নির্যাতন করে টাকা দাবি করে। এরপর ২০২১ সালের ১২ মে বাদীর মা বিউটি আক্তার ও চাচী মনি আবারও হেনা বেগমের কাছে নগদ ৪ লাখ টাকা দেন।
[১০] এভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে মিলন বেপারীর পরিবার মোট ১০ লাখ টাকা দেয়। ১৫ দিন সেখানে আটকে নির্যাতন করে টাকা আদায়ের পর ইতালির উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসাগরে হাওয়ায় (বাতাসে) ভাসা একটি প্লাস্টিক নৌকায় আরো কয়েকজনের সঙ্গে মিলনকে তুলে দেয়া হয়।
[১১] সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া মানব পাচারকারীদের দমন ও ভিকটিমদের রক্ষায় সিআইডির অভিযান অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া সাধারণ মানুষকে এই ধরনের চক্র সম্পর্কে সচেতন থাকতে এবং কোনও সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে সিআইডিকে জানাতে অনুরোধ করেছেন। সম্পাদনা: কামরুজ্জামান
এসবি২
আপনার মতামত লিখুন :