শিমুল চৌধুরী ধ্রুব: [৩] বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হয়েছে। এটি সর্বোচ্চ ক্যাটাগরি-১ শক্তিমাত্রার ঝড় হিসেবে রোববার মধ্যরাত থেকে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ উপকূলের সমুদ্র তীরবর্তী এবং আশপাশের অঞ্চলে আঘাত হানতে শুরু করতে পারে। এরপর শক্তি সঞ্চয় করে পশ্চিমবঙ্গের দীঘার সাগর দ্বীপ থেকে বাংলাদেশের পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার মধ্যে আছড়ে পড়বে। এ সময় উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩৫ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে ঝড়। চলতি প্রাক-বর্ষা মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে এটিই প্রথম ঘূর্ণিঝড় হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আজ ১০ নাম্বার মহাবিপদ সংকেত জারি করতে হতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
[৩] আজ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে সরাসরি আঘাত করতে পারে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। একই সঙ্গে এই ঝড়ের প্রভাবে খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম বিভাগে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি)।
[৪] শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিডব্লিউওটি’র প্রধান আবহাওয়া গবেষক খালিদ হোসেনের সই করা এক বার্তায় বলা হয়েছে, তিন জেলা সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকলেও আশা করা যায় ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগ পাবে না রেমাল। তবে আশঙ্কার ব্যাপার হচ্ছে এটি তার পূর্ণ শক্তিতে উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এতে হতে পারে সাত থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস।
[৫] শনিবার দুপুরে সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান বলেছেন, এই ঘূর্ণিঝড়ে সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকা কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ঝড়ের সঙ্গে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, ফলে পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচুর ভূমিধস হতে পারে। সব কিছু মাথায় রেখে সার্বিক প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি। এই দুর্যোগ মোকাবেলায় ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে।
[৬] দেশের ছয় জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতি দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
[৭ ] আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, শনিবার সন্ধ্যা থেকেই সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব সমুদ্র তীরবর্তী এবং আশপাশের অঞ্চলে পড়তে শুরু করেছে।
[৮] আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, রোববার সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম শুরু করতে পারে। রোববার দুপুর থেকেই ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রভাগ উপকূল স্পর্শ করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টি মূলত ভারতের সাগর আইল্যান্ড এবং বাংলাদেশের পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে স্থলভাগ অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির ৩০ শতাংশ ভারত এবং ৭০ শতাংশ বাংলাদেশের স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে।
[৯] এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তাল রয়েছে বঙ্গোপসাগর। এর প্রভাবে শনিবার দুপুর দেড়টা থেকে চট্টগ্রামে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :