সৌদি আরবের পর মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার হিসেবে পরিচিত সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশি কর্মী পাঠানো সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকভাবে কমে গেছে। কয়েক মাস ধরে আমিরাতে বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় সব ধরনের ভিসা বন্ধ থাকার ফলে শ্রমবাজারটি অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ কারণে একদিকে যেমন ভ্রমণের জন্য আগ্রহী ব্যক্তিরা হতাশ, তেমনি কর্মসংস্থান প্রত্যাশী বাংলাদেশিরাও চাকরি পাওয়ার সুযোগ হারাচ্ছেন।
জানা গেছে, ভিসা বন্ধের কারণে গত বছর থেকে চলতি বছর পর্যন্ত দেশটিতে কর্মী পাঠানোর সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। ২০২৩ সালে পূর্বের তুলনায় কর্মী পাঠানো কমেছে, যা শ্রমবাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। এর পাশাপাশি, দেশটিতে প্রতিষ্ঠানের নিয়োগদাতা পরিবর্তনের সুযোগও বন্ধ রয়েছে, ফলে অনেক প্রবাসী বিপাকে পড়েছেন। তবে, আমিরাত সরকারের ঘোষণা করা চলমান সাধারণ ক্ষমার আওতায় কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন দুবাইতে শিক্ষাগত সনদধারী চাকরিপ্রত্যাশীদের জন্য ভিসা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
আমিরাতে কর্মী পাঠানোর বিষয়টি একাধিকবার ভিসা বন্ধের কারণে অনিয়মিত হয়ে পড়ে। ২০১২ সালে বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থান ভিসা প্রদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়, ফলে প্রতি বছর কর্মী পাঠানোর সংখ্যা ৩০ হাজারের নিচে নেমে যায়। এই পরিস্থিতি প্রায় ৯ বছর স্থায়ী ছিল। এরপর ২০২২ ও ২০২৩ সালে, বিশেষ শর্তের মাধ্যমে ভিজিট ভিসা ও শিক্ষাগত সনদ প্রদান শর্তে আমিরাতে কর্মী পাঠানো পুনরায় শুরু হয়। এর ফলে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি কর্মী আমিরাতে প্রবেশ করেন। কিন্তু ২০২৪ সালে আবারও ভিসা বন্ধ করা হলে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে কর্মী পাঠানো আরও কমে গেছে।
বিএমইটির (জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ৯৮ হাজার ৬১৪ জন কর্মী আমিরাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ওই সংখ্যা মাত্র ৪৭ হাজার ১৬৫ জনে দাঁড়িয়েছে।
প্রবাসীরা বারবার বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ করেছেন, বিশেষ করে ভিজিট ভিসায় গিয়ে দেশে না ফেরা, শিক্ষাগত সনদ জালিয়াতি ও আমিরাতের আইন ভঙ্গের মতো বিষয়গুলোতে। এসব কারণে, কর্মী পাঠানোর আগে সঠিক প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিচ্ছেন তারা।
বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের সহসভাপতি তরিকুল ইসলাম শামীম বলেন, “অনেক কর্মী বিদেশে যাওয়ার আগে ওই দেশের আইন-কানুন সম্পর্কে অবগত হন না, যার কারণে তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়। এজন্য সরকারের উচিত কর্মীদের বিদেশে পাঠানোর আগে আইনি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।”
এছাড়া, ভিসা সংকটের পাশাপাশি, দীর্ঘদিন আমিরাতে অবস্থান করা প্রবাসীরা নিয়োগদাতা পরিবর্তনেও জটিলতার মুখে পড়েছেন। কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মী পরিবর্তন করতে পারছেন না, যা সাধারণ শ্রমিকদের মতো বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানের জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া না হলে, বাংলাদেশি শ্রমবাজারে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে, এবং প্রবাসীরা আরও বড় সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। সূত্র : এখনটিভি, জনকন্ঠ
আপনার মতামত লিখুন :