মালয়েশিয়ায় এমআরপি পাসপোর্ট সেবা বন্ধের ঘোষণায় রেমিটেন্স শাট ডাউনের হুমকি দিয়েছে বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদ মালয়েশিয়া।
গত বুধবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় দেশটির রাজধানী কুয়ালালামপুরের বুকিত বিনতাংয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে খাদের কিনারায় নিয়ে যাচ্ছেন দেশে-বিদেশে দায়িত্বে থাকা কিছু সচিবরা। আর বেশিদিন নেই প্রবাসীরাও এই সরকারের সমালোচনা শুরু করবে। যার অন্যতম কারণ এমআরপি পাসপোর্ট বন্ধ, জোরপূর্বক ই-পাসপোর্ট গ্রহণে বাধ্যতা করা এবং কৌশলে এমআরপি পাসপোর্ট ছাপা বন্ধ রাখা। এটি হতে পারে প্রবাসীদের ক্ষেপানোর কৌশল!
তারা দীর্ঘদিন ধরে হাইকমিশনের পাসপোর্ট ও ভিসা উইংকে একটি অকার্যকর ও অপ্রয়োজনীয় উইং স্বরূপ প্রমাণ করে মিশন থেকে পাসপোর্ট ও ভিসা উইংয়ের যাবতীয় কার্যক্রম বন্ধ করে পাসপোর্ট ও ভিসা সার্ভিস ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের আউট সোর্সিং প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। সুতরাং বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় অন্যান্য দেশের সাথে মালয়েশিয়ায়ও প্রবাসীরা রেমিটেন্স শর্ট ডাউনের ঘোষণা করে বন্ধ রেখেছিল। ডিআইপির এমন হটকারী সিদ্ধান্ত বন্ধ না করলে আবারও মালয়েশিয়ায় প্রবাসীরা রেমিটেন্স শাট ডাউনের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পিছপা হবে না।
এদিকে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন এই ইস্যুতে গত ২৮ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের প্রিন্টিং-এর জন্য অপেক্ষমান মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এর পরিবর্তে ই-পাসপোর্ট প্রাপ্তি সংক্রান্ত এক জরুরী বিজ্ঞপ্তিতে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছে, মালয়েশিয়ায় বসবাসরত সম্মানিত সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট-এর বুকলেট, লেমিনেশন ফয়েল পেপার ঘাটতি ও মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট-এর প্রিন্টিং মেশিনের যান্ত্রিক ত্রুটি জনিত কারণে বাংলাদেশ হতে পাসপোর্ট প্রিন্ট হতে বিলম্ব হওয়ায় মালয়েশিয়ায় বসবাসরত এমআরপি পাসপোর্ট প্রত্যাশী বাংলাদেশীদের এমআরপি পাসপোর্ট পেতে অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব হচ্ছে। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের ২৮ অক্টোবর ২০২৪ তারিখের ৫৮.০১.০০০০.২০২.৩৫.০২০.২০/১২৩৭ নং স্মারকের মাধ্যমে জানানো যাচ্ছে যে, এমআরপি আবেদন প্রিন্টিং এ অপেক্ষমান রয়েছে এরূপ আবেদনগণকে ই-পাসপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ফি (ই-পাসপোর্ট আবেদন ফি- এমআরপি আবেদন ফি অতিরিক্ত ফি, যেমন: ভিসা ক্যাটাগরি সাধারণ শ্রমিক/ছাত্র-ছাত্রীদের ০৫ বছরের ৪৮ পাতার পাসপোর্টের আবেদনের ক্ষেত্রে রিঙ্গিত ১৯৬.০০ রিঙ্গিত ১৪৫.০০ = রিঙ্গিত ৫১.০০ অতিরিক্ত) জমা প্রদান সাপেক্ষে আবেদন করলে তাদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ই-পাসপোর্ট প্রদান করা হবে। অদ্য ২৯ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ হতে মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের রিইস্যু জন্য কোন প্রকার আবেদন পাঠানো/জমা প্রদান হতে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হলো।
অনিবার্য কারণে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বিতরণে অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্বের দরুন মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাময়িক অসুবিধার জন্য বাংলাদেশ হাইকমিশন, কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।
সঠিক সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে মালয়েশিয়ার বহু প্রবাসী অবৈধ হওয়ার পথে। যারা প্রথম ই-পাসপোর্ট বানাবে তাদের জন্য ই-পাসপোর্ট ঠিক আছে। কিন্তু প্রবাসীদের জন্য কৌশলে এমআরপি শর্টেজ দেখিয়ে ই-পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক করা প্রবাসী ও রেমিট্যান্স উভয়ের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমরা মনে করেছেন প্রবাসীরা। এছাড়া অনেক প্রবাসী বাংলাদেশী আছেন যাদের এনআইডি বা জন্মনিবন্ধনের সাথে এমআরপি পাসপোর্ট এর তথ্য মিল নেই। কারও বয়সের সাথে বা নামের সাথেসহ নানাবিধ সমস্যা আছে তাহলে তাদের কি হবে বলে প্রশ্ন রেখেছেন প্রবাসীরা?
এমন প্রশ্নের জবাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর আগারগাঁও, ঢাকার পাসপোর্ট শাখা কর্তৃক (স্মারক নং: ৫৮.০১.০০০০.২০২.৩৫.০২০.২০/১২৩৭) বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, গত ২৭ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিঃ তারিখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এমআরপি-র পরিবর্তে ই-পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়াকরণ এবং এমআরপি আবেদন বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, উপর্যুক্ত বিষয়ে মহোদয়ের সদয় অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বাংলাদেশ দূতাবাস দোহা, কাতার ও বাংলাদেশ হাইকমিশন কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়ায় যথাক্রমে ১০,০৩৪ (দশ হাজার চৌত্রিশ) টি এবং ২৪,০৮৮ (চব্বিশ হাজার আটাশি) টি এমআরপি আবেদন প্রিন্টিং এর জন্য পার্সোনালাইজেশন সেন্টারে পেন্ডিং আছে। অধিদপ্তরের নিকট এমআরপি বুকলেট ও লেমিনেশন এর মজুদ একেবারেই কম। বিশেষ করে লেমিনেশন ফয়েলের মজুদ মাত্র ১১,০০০ (এগারো হাজার) টি। পিপিআর এর আইন ও বিধিমালা অনুসরণপূর্বক ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এমআরপি বুকলেট ও লেমিনেশন ফয়েল পেতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। বুকলেট ও লেমিনেশন ফয়েল পাওয়ার পরই এমআরপি প্রিন্টিং কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় শুরু করা যাবে। উল্লেখ্য, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩খ্রিঃ হতে বাংলাদেশ দূতাবাস দোহা, কাতার ও ১৬ এপ্রিল, ২০২৪খ্রি: হতে বাংলাদেশ হাইকমিশন কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে গত ২৭/১০/২০২৪ খ্রি. তারিখে মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, সিনিয়র সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির সাথে মহাপরিচালকের অনুষ্ঠিত সভায় উল্লিখিত মিশন সমূহে ইতোমধ্যে যেসব এমআরপি আবেদন প্রিন্টিং এ অপেক্ষমান রয়েছে এরূপ আবেদনকারীগণকে ই-পাসপোর্টের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ফি (ই-পাসপোর্ট আবেদন ফি এমআরপি আবেদন ফি অতিরিক্ত ফি) জমা প্রদান সাপেক্ষে আবেদন করলে তাদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ই-পাসপোর্ট প্রদান করা হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
যেহেতু বাংলাদেশ দূতাবাস দোহা, কাতার ও বাংলাদেশ হাইকমিশন কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়ায় ই-পাসপোর্টের কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং এমআরপি বুকলেট ও লেমিনেশন এর মজুদ একেবারেই কম তাই নতুন বুকলেট এবং লেমিনেশন পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত উল্লেখিত মিশন সমূহে ইতোমধ্যে যেসব এমআরপি আবেদন প্রিন্টিং এ অপেক্ষমান রয়েছে এরূপ আবেদনকারীগণের ক্ষেত্রে নতুন করে অতিরিক্ত ফি গ্রহণ করে ই-পাসপোর্টের আবেদন জমা গ্রহণের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য অনুরোধও করেছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। সূত্র : মানবজমিন
আপনার মতামত লিখুন :