সালেহ ইমরান: [২] পিএইচডিধারী ছাড়াও আবেদন করেছেন ৫০ হাজার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে গাড়িচালক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, ইলেকট্রিশিয়ান, অফিস সহকারি, হোটেল বয় ও ওয়েটার।
[৩.১] সরকারের চালু করা ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপে তারা এই আবেদন করেছেন। সম্প্রতি করা এসব আবেদন নিয়ে নানা মহলে সৃষ্টি হয়েছে নানা কৌতুহল। এটা কি দেশের উচ্চশিক্ষার মানের নিম্নগামিতা, নাকি দেশে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজের নিদারুণ অভাব তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
[৩.২] বিদেশে চাকরির জন্য আগ্রহী বাংলাদেশী নাগরিকদের সেবা দেয়ার জন্য সরকার চালু করেছে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপ। এই অ্যাপে বিশ্বের ১৮০টি দেশের ৫১৫ ধরনের কাজের মধ্যে পছন্দের কাজ ও গন্তব্য নির্বাচন করা যায়।
[৪] অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে কর্মসংস্থানের অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষ বিদেশে শ্রমিকের কাজে যেতে আগ্রহী হচ্ছেন। তাদের বেশিরভাই ভাবছেন, অ্যাপে নিবন্ধনের সময় কম যোগ্যতার কাজগুলো নির্বাচন করলে বিদেশে যাওয়ার পথটা সহজ হয়।
[৫] অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর বলেন, দেশে চাকরির অনিশ্চয়তা এতো বেশি যে উচ্চশিক্ষিতরা শ্রমিকের কাজে বিদেশে যেতে চাচ্ছেন। যদিও কোনো কাজই ছোট নয়, কিন্তু পিএইচডিধারীরা যদি তাদের কাজ বাদ দিয়ে ড্রাইভার ও ক্লিনারের কাজে যেতে চান তখন সেটা দুঃখজনক। এটা দেশে কর্মসংস্থানের দৈন্যদশা নির্দেশ করে।
[৬] ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দা রেজওয়ানা রশীদ বলেন, বেশিরভাগ মানুষের ধারণা; কোনো একটা কাজ নিয়ে একবার বিদেশে যেতে পারলে উন্নত জীবনের সন্ধান মিলবে। এক্ষেত্রে পেশার ধরন তাদেরকে খুব একটা ভাবাচ্ছে না। এর কারণ হলো আর্থ সামাজিক অবস্থার দৈন্য ও নিরাপত্তার অভাব। নিরাপত্তা মানে শুধু শারীরিক নিরাপত্তা নয়, কর্মসংস্থানের নিরাপত্তাও এক্ষেত্রে বড় ব্যাপার। সেই সঙ্গে আছে ভবিষ্যৎ বংশধরদের জন্য উন্নত জীবনের স্বপ্ন। দেশে চাকরির বাজার খুব খারাপ হওয়ায় উচ্চশিক্ষিত হয়েও তারা শ্রমিকের কাজে ঝুঁকছেন এটা অবশ্যই উদ্বেগজনক।
[৭] বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগের সাবেক ডিন ড. আ. ব. ম. ফারুক বলেন, যোগ্যতা অনুসারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারা রাষ্ট্রের একটা বড় ব্যার্থতা। এটা হতাশার জন্ম দেয়। মানুষ তখন বেঁচে থাকার ভিন্ন উপায় খোঁজে।
[৮] বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবে, দেশে পিএইচডিধারীর সংখ্যা ৫১ হাজার ২০৪। আর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য মতে, দেশে ২০২১ সালে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পিএইচডিধারী শিক্ষকের সংখ্যা ছিলো ৫ হাজার ৬০৬ জন। বর্তমানে দেশের সব কটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে।
[৯] তবে শুধু কর্মসংস্থানের দৈন্যদশা নয়, প্রশ্ন উঠেছে উচ্চশিক্ষার মান নিয়েও। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে অনেকের পিএইচডি অর্জন নিয়ে নানা সমালোচনাও রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা ও আমলারা যেভাবে প্রায় গবেষণা ছাড়াই পিএইচডি করছেন তাতে পিএইচডির মান নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ কেেরছন শিক্ষাবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।
[১০] শিক্ষাবিদ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. সেলিম খান বলেন, আমাদের প্রতিটা লেভেলে মানের ঘাটতি রয়েছে। পিএইচডির মতো ডিগ্রিতেও আন্তর্জাতিক মানের ক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি। আর যাদের অধীনে গবেষণা করে পিএইচডি নেয়া হয় তাদের মান নিয়েও সন্দেহ করা যেতে পারে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব
এসবি২
আপনার মতামত লিখুন :