শিরোনাম
◈ কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে জাতীয় গ্রিডের টাওয়ার নদীতে বিলীন ◈ ভারতে থাকার মেয়াদ শেষ হচ্ছে, কোন আইনের বলে ভারতে থাকবেন শেখ হাসিনা? ◈ (২০ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশি টাকায় আজকের মুদ্রা বিনিময় হার ◈ স্থিতিশীল ডলারের দর, ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও ◈ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘গ্যারান্টিতে’ নগদ টাকার সংকট কাটছে যে ৫ ব্যাংকের ◈ হত্যাকাণ্ড নিয়ে অপপ্রচার চলছে, জাবিতে কোন কমিটিই নেই : ছাত্রদল ◈ গণপিটুনিতে মৃত্যু: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দুঃখপ্রকাশ, বৈষম্যবিরোধীদের নিন্দা, ফেসবুকে নানা সমালোচনা ◈ ভারতের গোলা যাচ্ছে ইউক্রেনে, ক্ষুব্ধ রাশিয়া ◈ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সুনামগঞ্জে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার গ্রেফতার ◈ মব জাস্টিস শুধু সহিংসতা ও অন্যায় সৃষ্টি করে: সমন্বয়ক হাসনাত

প্রকাশিত : ০২ মে, ২০২২, ১২:১৫ দুপুর
আপডেট : ০২ মে, ২০২২, ১২:১৫ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

খোকা বাড়ি আসবি কবে!

ওমর ফারুক শিপন, ফেসবুক থেকে, দেখতে দেখতে কেটে গেলো ১০টি বছর ১৪৪ মাস,জীবনের অর্ধেকটা সময় কাটিয়ে দিলাম প্রবাসে।

প্রথম যখন বিদেশ আসার নাম নেই, কত হিসাব কশেছি,হাতের আঙ্গুল দিয়ে,আর বলতাম মা তোমাদের সকল কষ্ট আমি দূর করে দিবো!

বিমানের ছোট্ট জানালা দিয়ে মা কে আরেকবার দেখার চেষ্টা করতাম,আরেকটু উপরে উঠলে নিজেদের বাড়িটা ও খুঁজার চেষ্টা করতাম।

প্রথম যখন বিমানবন্দরে এসে নামি, কাউকেই চিনি না ভাষা বুঝি না, অপেক্ষায় ছিলাম ৬ ঘন্টা যে ছেলেটা বাড়িতে থাকতে সময়ের কাজ সময়ে করতো, সে দীর্ঘ ১৪ ঘন্টা না খেয়ে অপেক্ষা করছে তার কোম্পানি থেকে থেকে এসে থাকে নিয়ে যাবে বলে!

সেদিন আমাকে বুঝিয়ে ছিলো ক্ষুধার কষ্টটা কি,একটা সময় কেঁদেই দিয়েছিলাম ক্ষুধার জ্বালায়।পরে একজন ভাই তার ব্যাগ থেকে কয়েক পিস বিস্কেট দেয় তা খেয়ে কিছুটা ক্ষুধা নিভানোর চেষ্টা করলাম।

অবশেষে কোম্পানি থেকে লোক আসলো এসে একে একে সবার নাম ডাকলো,আমার নাম ও আসলো সবার শেষে।একটা ছোট্ট গাড়িতে ১৫ জন লোক বসলাম। 

যেখানে বসার আসন ছিলো ৮ জনের,একজন আরেক জনের উপর নিচ হয়ে বসলাম।
ভাবলাম বিদেশে মানুষ মনে হয় এভাবেই বসে।

রাত তখন ১১.৩০ আমাদের কে একটা বাড়ি সামনে নামানো হয়,বলে সিঁড়ি বেয়ে ৭ তালায় উঠতে হবে,দুই  হাতে লাগেজ, শরীর ক্লান্ত তবুও মনের জোরে উঠলাম। ভাবলাম বিদেশে মানুষ মনে হয় এভাবেই উপরে উঠে আমাদের ১৫ জনকে একই রুমে রাখা হলো,যেখানে হয়তো কষ্ট করে হলেও ৭/৮ জন ঘুমানো যেত সেখানে ১৫ জন।

তারপর ভাবলাম বিদেশে মানুষ মনে হয় এভাবেই ঘুমায়।

অবশেষো কোম্পানি আমাদের জন্য রাতে কিন্তু খাবার কিনলো, কিন্তু আমরা কেউ সেই খাবার খেতে পারিনি,উল্টো পেটে যা ও ছিলো তা ও বেরিয়ে এসেছে বুমি করে!

ক্ষুধার জ্বালা নিয়ে জালানা দিয়ে আকাশের দিকে  তাকিয়ে দুচোখ দিয়ে অঝরে কাঁদতে লাগলাম। আর বললাম মাগো তোমার দোয়ায় ভালো আছি মা।

এদিকে পরিবার আমার একটা ফোনের অপেক্ষায় ঘুমাতে পারে নি সারারাত, এদিকে তাদের কিভাবে বুঝাবো কান্নায় আমাকে ঘুমাতে দেয়নি সারা রাত।

পরের দিন মেডিকেল করতে নিয়ে গেলো সবাইকে, সকালে ২ পিস শক্ত পরটা দেওয়া হলো সাথে মিস্টি বাজি।তা পেয়েও মনে হলো আকাশের চাঁদ পেয়েছি সবাই।মেডিকেল করার সময় একজন দেশি ভাইকে দেখতে পেলাম, তিনি ফোনে কথা বলছিলেন, আমি তার পাশে বসে রইলাম।তার ফোন শেষ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন কিছু বলবেন? 

আমি চাতক পাখির মত অশ্রুশিক্ত চোখে তাকে বলি ভাই আজ ২ দিন হলো মার লগে কথা বলি না,১ মিনি কথা বলতে দিবেন,তিনি ফোনটা বাড়িয়ে দিলেন আর বললেন কথা বলেন, আমি মাকে ফোন দেই।

মা'র ফোনে ১টা রিং বাজার সাথে সাথে রিসিভ করে বললো খোকা তুই কেমন আসিস,খেয়েছিস আমি বললাম তুৃমি কেমন করে বুঝলা আমি কল করেছি,হ্যা খেয়েছি পেট ভরে আমি ভালো আছি,এখানে আমার কোন অসুবিধা হয়না।

তোমরা ভালো থেকো বাবার দিকে খেয়াল রেখেো আমি নতুন সিম নিয়ে তোমাদের কল করব।৩৯সেকেন্ডের এটাই ছিলো আমার প্রথম কথা।

ধীরে ধীরে শুরু হলো জীবন যুদ্ধ সকালে আলো উঠার আগে বাহির হতাম,আর আর ফিরতাম শহর যখন ঘুমিয়ে যেত।এভাবে কেটে গেলো ৫ বছর।কিছুটা ঋণ মুক্ত হলাম ভাবলাম এবার দেশে গিয়ে ঈদ করবো, পরে দেখলাম নিজের কাছে তেমন কিছুই নেই যে দেশে গিয়ে কয়েকমাস চলতে পারবো।

ভাবলাম সমনের বছর যাবো, বছর এসেও দেখি কিছুই নেই!এদিকে মা প্রতিদিন বলে খোকা বাড়ি আসবি কবে রে।মাকে তার উওর দিতে কতবার যে কেঁদেছি তা শুধু আমি জানি।আমাদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা অনেক স্বার্থপর হয়।অনেক গুছিয়ে মিথ্যা হাসি দিতে পারে।।

ভালো থাকুক প্রবাসে থাকা এমন হাজারো রেমিট্যান্স ফাইটার ভাইয়েরা।

মাসুম হাসান জুয়েল 

সিঙ্গাপুর প্রবাসী

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়