মুসবা তিন্নি: [২] ভিসা ও ছাড়পত্র পেয়েও উড়োজাহাজের টিকিটসংকটে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার স্বপ্নভঙ্গ হলো প্রায় ৩১ হাজার বাংলাদেশি কর্মীর। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলো উড়োজাহাজে আসনসংখ্যা বাড়িয়ে এবং বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। সূত্র: কালবেলা
[৩] জনশক্তি রপ্তানিকারকেরা এ জন্য দায়ী করেছেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি ও উদাসীনতাকে। তারা বলছেন, গত মার্চেই মালয়েশিয়া বিদেশি কর্মী প্রবেশের জন্য গতকাল ৩১ মে সময়সীমা বেঁধে দিলেও মন্ত্রণালয় এ নিয়ে জরুরি বিজ্ঞপ্তি দেয় ১৬ মে। ফলে শেষ মুহূর্তে উড়োজাহাজের টিকিটের তীব্র সংকট তৈরি হয়।
[৪] সময়সীমার শেষ দিনে গতকাল শুক্রবার মালয়েশিয়া যাওয়ার শেষ চেষ্টা করতে টিকিট ছাড়াই ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিড় জমান হাজারো মানুষ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যেতে না পেরে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরেও ছিল বাংলাদেশি কর্মীদের উপচে পড়া ভিড়। শেষ দিনে দেশটিতে ঢুকতে পারার আনন্দ থাকলেও ইমিগ্রেশন পার হতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
[৫] শুক্রবার বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রবেশের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি আরও আগে জানলে আগেভাগেই ব্যবস্থা নিতে পারত। বর্তমানে বিমানের হজ ফ্লাইট চলছে। তারপরও প্রবাসীদের কুয়ালালামপুর নেওয়ার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হয়েছে।
[৬] বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি কর্মী আছেন। গত বছর সেখানে গেছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন কর্মী। এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত গেছেন ৪৪ হাজার ৭২৭ জন। চার বছর পর ২০২২ সালে দেশটির শ্রমবাজার খুলেছিল। মালয়েশিয়া সরকার গত মার্চেই ঘোষণা করে, ৩১ মের (গতকাল) পর আর কোনো নতুন বিদেশি শ্রমিক দেশটিতে ঢুকতে পারবেন না। সে হিসাবে আজ থেকে আবার অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ হলো এই শ্রমবাজার।
[৭] হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ঢাকা থেকে সরাসরি কুয়ালালামপুর নিয়মিত ৯টি ফ্লাইট যায়। পাশাপাশি সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে ঢাকা-কুয়ালালামপুর পথে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ। সব ফ্লাইট মিলিয়ে গতকাল দেড় হাজার কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পেরেছেন।
[৮] গতকাল শেষ দিনে সকাল থেকে রিক্রুটিং এজেন্সির আশ্বাসে উড়োজাহাজের টিকিট ছাড়াই বিমানবন্দরে ছিলেন হাজারো মালয়েশিয়াগামী। তাদের কেউ কেউ দুই-তিন দিন ধরে বিমানবন্দরে অবস্থান করছিলেন।
[৯] বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সন্ধ্যায় বিশেষ ফ্লাইটের জন্য জনপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করে ৭৩ হাজার ৬১৬ টাকা।
[১০] ১৬ মে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বর্তমান কোটার আওতায় মালয়েশিয়ার সরকার বাংলাদেশসহ ১৪টি কর্মী প্রেরণকারী দেশ থেকে চলতি বছরের ৩১ মের মধ্যে মালয়েশিয়া প্রবেশের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে। মন্ত্রণালয়ের এ ঘোষণার পরই মূলত চাহিদা বাড়ে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটের টিকিটের। ২০ মে থেকে বিষয়টি জানাজানি হলে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার হিড়িক পড়ে। টিকিটসংকট দেখা দেয়।
[১১] ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে সরাসরি ফ্লাইট রয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনস, এয়ার এশিয়া ও বাটিক এয়ারের। এ ছাড়া সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে সিঙ্গাপুর হয়ে এবং থাই এয়ারওয়েজে ব্যাংকক হয়েও মালয়েশিয়া যান বাংলাদেশি কর্মীরা।
[১২] চাহিদা বাড়ায় গত এক মাস ধরে ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে উড়োজাহাজে আসন সক্ষমতাও বাড়িয়েছে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো। নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করেছে বিমান বাংলাদেশ ও এয়ার এশিয়া। বেসরকারি ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসও এ রুটে বড় উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসন সক্ষমতা দ্বিগুণ করেছে। টিকিটের চাহিদা বাড়ায় কম্বোডিয়ার সরকারি এয়ারলাইনস কম্বোডিয়া অ্যাংকর এয়ারকে ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ায় চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। কিন্তু এসব চেষ্টার পরও স্বপ্নপূরণ হলো না প্রায় ৩১ হাজার মানুষের।
এমটি/এনএইচ
আপনার মতামত লিখুন :